গাজায় সংঘর্ষ, নিহত ১৬ ফিলিস্তিনি

গাজায় সংঘর্ষ, নিহত ১৬ ফিলিস্তিনি

ঢাকা, ৩১ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : গাজা উপত্যকার সীমান্ত বরাবর ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো গুলিতে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত ও ৪০০ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ কর্মসূচির শুরুর দিন শুক্রবার এ সংঘর্ষ হয়। সীমান্ত বেষ্টনী বরাবর ৫ টি জায়গায় সমবেত হয়ে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমিতে ফেরার আকুতি জানায়, ১৯৪৮ সালে যা ইসরায়েলের দখলে চলে গিয়েছিল।

ছয় সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে তারা সেখানে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়েছেন বলে স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।

প্রথম দিনের বিক্ষোভে অন্তত ১৭ হাজার ফিলিস্তিনি অংশ নিয়েছে বলে ধারণা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর। তারা বলছে, দাঙ্গা শুরু হওয়ার পরই গুলি ছোড়া হয়েছে।

নিউ ইয়র্কে তাৎক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো গাজা সীমান্তে সংঘর্ষের ঘটনা তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।

১৯৪৮ সালে শরণার্থী হওয়া লাখ লাখ মানুষকে ইসরায়েলের দখলে থাকা এলাকায় ফিরতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে সীমান্ত বরাবর এ বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে। শুরুর দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ৩০ মার্চকে; ১৯৭৬ সালের এই দিনে ভূমি দখলের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ছয় বিক্ষোভকারী নিহত হন। কর্মসূচি শেষ হওয়ার নির্ধারিত তারিখ ১৫ মে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘যুদ্ধে জড়ানোর উস্কানি দিতেই’ এ বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে কোনো সহিংসতার জন্য হামাস এবং বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলোই দায়ী হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেল আবিব।

দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঠেকাতে সেনারা কেবল সীমান্ত বেষ্টনী ভাঙার চেষ্টাকারীদের লক্ষ্য করেই গুলি ছুড়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

ফিলিস্তিনিদেরকে সীমান্ত থেকে দূরে সরিয়ে দিতে ইসরায়েল টিয়ার গ্যাস ব্যবহারের পাশাপাশি ট্যাংক এবং স্নাইপারও মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। প্রত্যক্ষদর্শীরা অন্তত একটি স্থানে কাঁদানে গ্যাস ফেলতে ইসরায়েলি বাহিনী ড্রোন ব্যবহার করেছে বলেও জানিয়েছে।

সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে ১৬ বছরের এক বালক আছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তারা জানান, শুক্রবার বিক্ষোভ শুরুর আগেই খান ইউনিস শহরের কাছে ২৭ বছর বয়সের এক কৃষকও ইসরায়েলি ট্যাংকের গোলায় নিহত হন।

হতাহতের ঘটনার জন্য শনিবার জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। হতাহতের ঘটনায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে দায় দিয়ে ‘ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে’ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

নিহতদের শেষকৃত্যর পর শনিবার ফের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে; এদিন ইসরায়েলি সেনাদের দিকে বিক্ষোভকারীদের পাথর ছুড়ে মারার পরিকল্পনা আছে বলে আয়োজকদের বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদক জানিয়েছেন।

২০০৭ সাল থেকে গাজা নিয়ন্ত্রণে রাখা হামাস ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। শুক্রবারের বিক্ষোভেও দলটির নেতা ইসমাইল হানিয়া একই কথা বলেন।

“আমরা ফিলিস্তিনি ভূমির এক কণাও ছাড়ব না; ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কোনো বিকল্প নেই এবং প্রত্যাবর্তন ছাড়া কোনো সমাধানও নেই,” বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন তিনি।

জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক উপপ্রধান পরিচালক তায়ে-ব্রুক জেরিহুন নিরাপত্তা পরিষদে ‘আসছে দিনগুলোতে গাজা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বেসামরিক নাগরিক বিশেষ করে শিশুদের লক্ষ্যবস্তু না বানাতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

(জাস্ট নিউজ/জেআর/১২০০ঘ.)