খোলা আকাশের নিচে লাখো আফগান

খোলা আকাশের নিচে লাখো আফগান

আফগানিস্তানে তালেবানের অভিযানের মুখে প্রাণে বাঁচতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে হাজারো মানুষ। কেউ কেউ রাজধানী কাবুলে আশ্রয় নিচ্ছে।

আবার কেউ সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তান-তাজিকিস্তানে যাচ্ছে। গত কয়েক দিনে কাবুলের উপকণ্ঠে এসে পৌঁছেছে কয়েখ লাখ মানুষ। কিন্তু বেশির ভাগের জন্যই জুটছে না নিরাপদ আবাস।

বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচেই থাকতে হচ্ছে। ঘুমাতে হচ্ছে রাস্তার ওপরেই। তার ওপর খাবার ও পানির অভাবে যোগ হয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ।

এদিকে আফগানিস্তানে মোট ৩৪টি প্রদেশের ১৫টিরই দখল নিয়েছে তালেবান। এখন ক্রমেই কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে যোদ্ধারা।

এমন পরিস্থিতিতে নিজ দেশের নাগরিকদের আফগানিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। শুধু তাই নয়, কূটনীতিক ও দূতাবাস কর্মীদের ফিরিয়ে নিতে কাবুল বিমানবন্দরে সেনা পাঠাচ্ছে দেশ দুটি।

প্রায় তিন হাজার সেনা পাঠাচ্ছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। ব্রিটিশ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে প্রায় ৬০০ সেনা পাঠাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার। খবর আলজাজিরা ও এএফপি।

বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে তালেবান। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা দখল করছে এর যোদ্ধারা। দেশের পুরো উত্তরাঞ্চলসহ এখন পর্যন্ত ১৫টি প্রাদেশিক শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি। সর্বশেষ এক দিনে (শুক্রবার) তিন প্রাদেশিক রাজধানী তাদের দখলে গেছে। এএফপির খবরে বলা হয়েছে, প্রথমে দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লস্করগাহ ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার দখল নেয় তালেবান।

এরপর রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে লোগার প্রদেশের রাজধানী লোগারে প্রবেশ করে। কান্দাহার এক সময় তালেবানের শক্ত ঘাঁটি ছিল।

কৌশলগতভাবে শহরটির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। তাই শহরটির দখল তালেবানের জন্য একটা বড় জয় হিসাবে দেখা হচ্ছে। লস্করগাহও গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসাবে বিবেচিত।

এর আগে বৃহস্পতিবার এক দিনেই গজনি, হেরাত ও কালা-ই-নাউ শহরের দখল নেয় তালেবান। তার আগে ফাইজাবাদ, ফারাহ, পুল-ই-খুমরি, জারাঞ্জ, কুন্দুজ, তাকহার, সার-ই-পল, তালুকান ও শেবারঘান শহর তালেবানের দখলে যায়। মার্কিন গোয়েন্দাদের মতে, তালেবান ৩০ দিনের মধ্যে কাবুলকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে।

আর ৯০ দিনের মধ্যে তালেবানের হাতে কাবুলের পতন ঘটতে পারে। তালেবানের অগ্রযাত্রা ও সহিংসতার মুখে হাজারো মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে। তারা রাজধানী কাবুলের দিকে যাচ্ছে।

তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিবিসি জানিয়েছে, কাবুলের উপকণ্ঠে এখন হাজার হাজার মানুষ অস্থায়ী ক্যাম্পে জড়ো হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, তালেবানের সাথে আফগান সেনাদের চলমান যুদ্ধে চলতি বছরের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত হয়েছে চার লাখের বেশি সাধারণ মানুষ।

এর মধ্যে ৭৪ হাজারই শিশু। আশ্রয় শিবিরে জায়গা না পেয়ে খোলা আকাশের নিচেই বাস করতে হচ্ছে আফগানিস্তানের অনেক নাগরিককে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবানের হামলার শিকার এসব মানুষের এখনই নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা গেলে মানবিক সংকটে পড়বে আরও লাখ লাখ মানুষ।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট সেথ জোনস বলেন, তালেবানের ক্ষমতা দখলই আফগানিস্তানের জন্য মূল সংকট নয়।

এই মুহূর্তে দেশটির জন্য সবচেয়ে বড় সংকট হতে চলেছে গৃহহীন মানুষদের চাপ। আগে থেকেই লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন পাকিস্তান, তুরস্ক আর ইরান শিবিরগুলোতে। ফলে এই দেশগুলো নতুন করে কোনো শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে না। তাই নিজ দেশেই পরবাসী হয়ে এসব অসহায় মানুষকে জীবন কাটাতে হবে।

প্রয়োজনের তুলনায় এক ভাগও মিলছে না খাদ্য বা ওষুধের জোগান। ইউনিসেফ বলছে, জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন দেশটির সংঘাতময় এলাকার এক কোটি ৮০ লাখ বাসিন্দার।

এমজে/