আফগানিস্তানে আজ নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা

আফগানিস্তানে আজ নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা

আফগানিস্তানে সরকার গঠনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে তালেবান। আজ জুমার নামাজের পর নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করা হবে বলে তালেবানের জ্যেষ্ঠ নেতা শের মুহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই জানিয়েছেন। আর কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরের উপপ্রধান শের আব্বাস জানিয়েছেন, নতুন সরকারের নিম্ন পর্যায়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা কাজ করতে পারবেন। তবে মন্ত্রিসভা বা শীর্ষস্থানীয় পদে নারীরা নাও থাকতে পারেন। রাজধানী কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্যালেসে একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মন্ত্রিসভা ঘোষণা করা হবে।

মন্ত্রিসভা ঘোষনাকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার হেরাতে বিক্ষোভ করেছেন নারীরা। এ সময় তারা সরকারে নারী প্রতিনিধি নিশ্চিত, নারীর শিক্ষা-কাজের অধিকার ও নিরাপত্তার দাবিতে স্লোগান দেন। তারা বলেন, ‘নারীদের বাইরে রেখে কোনো সরকারই টিকবে না।’

এদিকে আফগানিস্তানে গত কয়েকদিনে খাদ্যপণ্যের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। খবর ইন্ডিয়া টুডে, বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স ও টোলো নিউজের।

তালেবান সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে আফগানিস্তানে ‘ইরান মডেলে’ সরকার গঠন হতে যাচ্ছে। ইরানের আয়াতুল্লা খামেনির মতো আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ নেতা হবেন হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা।

তিনি এ সশস্ত্র সংগঠনটির আমির বা প্রধান। তার অধীনে একজন প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী দেশ পরিচালনা করবেন। তালেবানের কালচারাল কমিশনের সদস্য আনামুল্লাহ সামানগানি বলেছেন, ইসলামি মডেলের যে সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, তা হবে মানুষের জন্য আদর্শ। সরকারে আমিরুল মুমেনিন আখুনজাদার উপস্থিতির বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তিনিই হবেন সর্বোচ্চ নেতা এবং এ বিষয়ে কোথাও থেকে কোনো প্রশ্ন প্রত্যাশিত নয়।

জানা যায়, ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা খামেনি দেশের সর্বোচ্চ প্রধান ব্যক্তি। তার কাজ আইন প্রণয়ন ও বাতিল করা। সব বিষয়ে তাকে প্রধান কর্তা মানা হয়। রাষ্ট্রীয় যে কোনো বিষয়ে তার মতামতই চূড়ান্ত। আখুনজাদা আফগানিস্তানে সেই ভূমিকাই পালন করবেন। আখুনজাদার তিনজন ডেপুটি আছেন। তাদের একজন মোল্লা ইয়াকুব। তিনি তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে। মোল্লা ইয়াকুব বর্তমানে তালেবানের সামরিক শাখার দায়িত্বে আছেন। আফগান সরকারে তার বড় ভূমিকা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারেন আরেক ডেপুটি সিরাজুদ্দিন হাক্কানি। হাক্কানি

নেটওয়ার্কের নেতৃত্বে আছেন তিনি। এছাড়া তালেবানের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারও সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন। প্রধান বিচারপতি হতে পারেন আবদুল হাকিম। কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরের উপপ্রধান শের আব্বাস বলেছেন, সরকারের নিু পর্যায়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা কাজ করতে পারবেন। তবে মন্ত্রিসভা বা শীর্ষস্থানীয় পদে নারীরা নাও থাকতে পারেন। পাশাপাশি গত দুই দশকে যারা সরকারে ছিলেন, তাদের এ সরকারে নেওয়া হবে না।

এদিকে গত কয়েকদিনে দেশটিতে খাদ্যের দাম অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের আশঙ্কা দেশটিতে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। দেশটিতে আন্তর্জাতিক সহায়তাও বন্ধ রয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীরা বেতন পাননি। এমন এক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে নতুন সরকারের দেশ পরিচালনা বেশ কঠিন হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

সন্ত্রাস দমনে সেই তালেবানের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র : সন্ত্রাসের মদদ দেওয়ায় ২০০১ সালে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০ বছর পর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনারা ফিরে গেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, জঙ্গি দমনে তারা তালেবানের সঙ্গে কাজ করবে। মার্কিন সেনাদের সর্বোচ্চ পদধারী জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান মার্ক মিলি বুধবার বলেন, আইএসের শাখা ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রভিন্সের (আইএসকে) জঙ্গি দমনে ভবিষ্যতে তালেবানের সঙ্গে কাজ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের শেষ দিনগুলোয় সবচেয়ে বড় হামলাটি এই আইএসকে চালিয়েছিল। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল বিমানবন্দর এলাকায় এই হামলায় ১৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। কাবুল বিমানবন্দর চালুতে কাজ করছে কাতার : দ্রুত কাবুল বিমানবন্দর চালু করতে তালেবানের সঙ্গে কাজ করছে কাতার। বুধবার দেশটির একটি বিশেষজ্ঞ দল কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরে আসে।

বৃহস্পতিবার দোহায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাবের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রাহমান আল থানি বলেন, খুব কঠোর পরিশ্রম করছি। যত দ্রুত সম্ভব বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের উপপ্রধান শের আব্বাস বলেন, আগামী দুদিনের মধ্যে বিমানবন্দর পুনরায় কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রস্তুত হবে। আফগান শরণার্থী নিতে নারাজ দক্ষিণ আফ্রিকা : আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের জায়গা দেওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটি জানায়, এরই মধ্যে তাদের দেশে অন্যান্য দেশ থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শরণার্থী রয়েছে। এ কারণে পাকিস্তান সরকারের পাঠানো অনুরোধ তারা রাখতে পারছে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেছে।

বুধবার পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ অনুরোধ রাখতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে দেশটি। এছাড়া তাজিকিস্তান সরকার সতর্ক করে দিয়েছে, তারা খুব বেশি আফগান শরণার্থীকে জায়গা দিতে পারবে না। অনেক শরণার্থী রাখার মতো পরিকাঠামো তাদের নেই। এই অপারগতা প্রকাশের পাশাপাশি আফগান শরণার্থীদের সাহায্য করতে ব্যর্থ হওয়ায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমালোচনা করেছে তারা।

এমজে/