মিয়ানমারকে ছাড়াই শুরু আসিয়ানের সম্মেলন

মিয়ানমারকে ছাড়াই শুরু আসিয়ানের সম্মেলন

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান ন্যাশনসের (আসিয়ান) বার্ষিক সম্মেলন শুরু হয়েছে সংস্থাটির অন্যতম সদস্য মিয়ানমারের উপস্থিতি ছাড়াই। মঙ্গলবার সংস্থাটির ভার্চুয়ালি এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এর আগে গত ১৫ অক্টোবর আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোর সম্মিলিত সম্মতিতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং লাইংকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে মিয়ানমারে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট সমাধানের মীমাংসায় জেনারেল লাইংয়ের আসিয়ানের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি পালনের ব্যর্থতায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সদস্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা সংস্থাটির এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিরল এক উদাহরণ সৃষ্টি করলো।

দুই কূটনীতিকের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) খবর জানায়, বর্তমান সভাপতি দেশ ব্রুনাই সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য মিয়ানমারের সাবেক উচ্চপদস্থ কূটনীতিক চ্যান আইকে 'অরাজনৈতিক' প্রতিনিধি হিসেবে আমন্ত্রণ জানালেও তিনি অংশ নেননি।

এদিকে মিয়ানমারের সামরিক সরকার সোমবার রাতে আসিয়ানের তিনদিনের এই সম্মেলনে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে সংস্থাটির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার অঙ্গীকার করেছে।

সামরিক সরকার জানায়, সম্মেলনে ব্রুনাই শুধু জেনারেল লাইং বা মন্ত্রী পর্যায়ের কোনো প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে।

১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাতমাদাও দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। পরে ১ আগস্ট জরুরি অবস্থার মেয়াদ ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেন জান্তা প্রধান জেনারেল মিন অং লাইং।

গত বছরের নভেম্বরে দেশটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে এই অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী।

সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন। শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া অহিংস বিক্ষোভকে সামরিক উপায়ে জান্তা সরকার দমন করতে গেলে বিক্ষোভকারীরাও বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র হাতে নেয়।

গত ৭ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট দেশের সাধারণ মানুষকে সামরিক জান্তার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা দেয়।

১ ফেব্রুয়ারি থেকে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ ও সশস্ত্র তৎপরতায় সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে মিয়ানমারে এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী ও বিদ্রোহী নিহত হয়েছে বলে দেশটিতে মানবাধিকার নজরদারি করা সংস্থাগুলো জানায়।

অপরদিকে সামরিক বাহিনী নিহতের এই সংখ্যা অস্বীকার করে আসছে এবং সংঘর্ষে বিপুল সৈন্য নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। সূত্র : আলজাজিরা

এমজে/