করোনায় এ বছর সোয়া ৫ কোটি চাকরির সমান কর্মঘণ্টা কমবে: আইএলও

করোনায় এ বছর সোয়া ৫ কোটি চাকরির সমান কর্মঘণ্টা কমবে: আইএলও

করোনার অব্যাহত দাপটে চলতি বছর বিশ্বব্যাপী কাজের সুযোগ আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। সংস্থাটির মতে, নতুন বছর যে পরিমাণ কর্মঘণ্টা কমবে তা অন্তত ৫ কোটি ২০ লাখ পূর্ণকালিন চাকরির সমান।

সোমবার আইএলওর এক প্রতিবেদনে এই শঙ্কার কথা জানানো হয়। বিশ্বব্যাপী কাজের সুযোগ হ্রাস পাওয়া সংক্রান্ত আইএলও'র নতুন এই শঙ্কা সংস্থার আগের অনুমানের ঠিক দ্বিগুণ। ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬০ লাখ চাকরির সমপরিমান কর্মঘণ্টা কম হতে পারে বলে গত মে মাসে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল আইএলওর পক্ষ থেকে। আগামী বছরও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি করোনাপূর্বকালের পর্যায়ে ফিরতে পারবে না বলে অনুমান করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

'বৈশ্বিক কর্মসংস্থান এবং সামাজিক রুপরেখা: প্রবণতা ২০২২' শিরোনামের নতুন প্রতিবেদনটি আইএলও'র সদরদপ্তর জেনেভা থেকে প্রকাশ করা হয়। এতে করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া করোনার আগে এবং পরে কর্মসংস্থানের গুণগত মানের পরিবর্তন এবং অপ্রাতিষ্ঠানিকখাতে কর্মসংস্থানে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটছে তা তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের পোশাকখাতে মধ্যম পর্যায়ের দক্ষ শ্রমিকদের স্বল্পমেয়াদে কাজে নেওয়া হয়েছে। সপ্তাহে নির্ধারিত কর্মঘণ্টায় কাজ করেছে এসব শ্রমিক। মজুরি নির্ধারণ করা হয় স্থায়ী শ্রমিকদের বেতনের আনুপাতিক হারে। তবে স্থায়ী শ্রমিকেরা অন্যান্য যেসব সুবিধা পেয়ে থাকে- এসব শ্রমিকের ক্ষেত্রে সেসব সুবিধা ছিল না। করোনা পরিস্থিতির কারণে কারখানা কর্তৃপক্ষও অস্থায়ীভিত্তিক শ্রমিকদের ওপরই বেশি ভরসা করেছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে রপ্তানি আদেশ পাওয়া সাপেক্ষে এসব শ্রমিকদের কাজে ডাকা হতো। অর্থনৈতিক সংকটের পর ২০১০ সালেও একইভাবে বাংলাদেশে অস্থায়ীভিত্তিক শ্রম নিয়োজনে এ প্রবণতা দেখা গেছে। সাধারণত, অর্থনৈতিক সংকটে এ ধরনের পদক্ষেপের নজির আছে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও। প্রতিবেদনে কানাডা, জার্মানি ও সুদানের উদাহরণ টানা হয়।

তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি তুলানামূলক ভালো। আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় সাময়িক এবং অস্থায়ীভিত্তিক কাজ তৈরিপোশাক, বস্ত্র ও পাদুকা শিল্পেই বেশি দেখা গেছে। ভারত এবং পাকিস্তানের এ ধরনের শ্রম পরিস্থিতির ৯০ শতাংশই ঘটে উল্লেখিত ওই তিন শিল্পখাতে। বাংলাদেশে এ হার ৫০ শতাংশ। যদিও বস্ত্র ও পোশাকখাতই কর্মসংস্থানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় খাত।

করোনার অব্যাহত দাপট সম্পর্কে আইএলও'র প্রতিবেদনে বলা হয়, এ কারণে বেকারত্বের হার করোনাপূর্বকালের চেয়ে বেশি থাকবে অন্তত ২০২৩ সাল পর্যন্ত। চলতি ২০২২ সালে সারাবিশ্বে বেকার থাকবে ২০ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। করোনাপূর্ব ২০১৯ সালে বিশ্বে বেকার ছিল ১৮ কোটি ৬০ লাখ। আর শতাংশিয় পয়েন্টের হিসাবে ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছরও শ্রমশক্তি ১ দশমিক ২ শতাংশের নীচে থাকবে। কারণ, অনেকেই পরিস্থিতির কারণে শ্রমবাজার ছেড়ে যাচ্ছে।