দুই কোরিয়ার ঐতিহাসিক বৈঠক: কৃতিত্ব কি ট্রাম্পের?

দুই কোরিয়ার ঐতিহাসিক বৈঠক: কৃতিত্ব কি ট্রাম্পের?

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : উত্তর আর দক্ষিণ কোরিয়ার দুই নেতার মধ্যে যখন ঐতিহাসিক বৈঠক হচ্ছে - তখন একটা প্রশ্ন অনেকেই তুলেছেন - এটা যে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হলো - তার কৃতিত্ব আসলে কার?

কেউ কেউ দাবি করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং দক্ষিণ কোরিয়ান প্রেসিডেন্ট দুজনেই একমত যে - উত্তর কোরিয়ার সাথে শান্তি আলোচনার কৃতিত্ব ডোনাল্ড ট্রাম্পেরই প্রাপ্য।

এর জবাবে অনেকে বলছেন, এই আলোচনায় আসলে কি প্রভাব ফেলেছে, তা শুধু ঐতিহাসিক দলিলপত্র থেকেই প্রতীয়মান হবে, তবে তথ্যপ্রমাণ থেকে আভাস পাওয়া যায় যে দক্ষিণ কোরিয়াই উত্তরের সাথে আলোচনাকে উৎসাহিত করেছিল, আর এর সাথে ছিল চীনের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার চাপ।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে কোরিয়া উপদ্বীপে পরিবর্তনের আভাসের কৃতিত্ব নেবার আভাস দেন অনেক আগেই।

এ বছরই জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখ ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করেছিলেন, 'ব্যর্থ 'বিশেষজ্ঞ'-রা এ নিয়ে নানা কথা বলছে। কিন্তু আমি যদি শক্ত অবস্থান না নিতাম এবং উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগের অঙ্গীকারের কথা প্রকাশ না করতাম - তাহলে এ সংলাপ-আলোচনা হতো এমন কথা কি কেউ বিশ্বাস করবে?'

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনও এ কথা প্রকাশ্যেই বলেছেন, যে উত্তরের সাথে এই শান্তি আলোচনা হবার পেছনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পে বড় কৃতিত্ব পাওনা আছে।

তার কথায় 'যুক্তরাষ্ট্রের-নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা ও চাপের ফলেই' এটা সম্ভব হয়েছে।

এ বছরই মে বা জুন মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-আনের বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে - যা হবে উত্তর কোরিয়ার কোনো নেতার সাথে ক্ষমতাসীন কোনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রথম বৈঠক।

হয়তো এ আলোচনা কোরিয়া উপদ্বীপে উত্তেজনা কমিয়ে আনবে, ৬৮ বছরের পুরোনো কোরিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে একটি শান্তি চুক্তিও হতে পারে।

উত্তর কোরিয়া ২০০৬ সালে তাদের প্রথম পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়।

তার পর থেকে জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার ওপর বহু বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে - যার অনেকগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে। এর পর দিন দিন এসব নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর থেকে কঠোরতর হয়েছে।

কিন্তু যা উত্তর কোরিয়াকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে তা হলো চীনের অবস্থান পরিবর্তন - কারণ উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই হয় চীনের সাথে।

এর আগে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো চীন খুব কমই প্রয়োগ করতো। কিন্তু গত বছর থেকে চীন এসব নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করতে শুরু করে বলে মনে করা হয়।

এবছর ২রা জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইট করেন, কিম জং আন যে তার ডেস্কে সর্বক্ষণ পারমাণবিক বোতাম থাকার কথা বলেন, এই খেতে-না পাওয়া দেশটির শাসককে কি কেউ জানিয়ে দেবেন যে আমারও একটা পারমাণবিক বোতাম আছে যা আরো অনেক বড়, আরো ক্ষমতাশালী।

মি. ট্রাম্পের আগে দুই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং জর্জ বুশও অবশ্য উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের কথা বলেছেন। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার পূর্বতন প্রেসিডেন্টদের কেউ কেউ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কড়া নীতির কথা এবং অন্যরা আলোচনা কথা বলেছেন। দুজন দক্ষিণ কোরিয়ান প্রেসিডেন্ট উত্তরের নেতার সাথে বৈঠক করেছেন।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের সময় এবার শীতকালীন অলিম্পিকে উত্তর কোরিয়ার ক্রীড়াবিদদের আসা এবং এক পতাকার নিচে প্যারেড করাটা ছিল এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

তাহলে দক্ষিণ কোরিয়া কেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এর কৃতিত্ব দিচ্ছে?

এ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ভার্জিনি গ্রেলচিক বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়া কৌশলগতভাবে কাজ করেছে।

তারা আমেরিকানদের একটা সংলাপের জাগায় আনতে চেয়েছে, কারণ দুই কোরিয়ায় একটা পর্যায়ে আমেরিকার নীতি দেখে কিছুটা ধাঁধায় পড়ে গেছে এবং উদ্বিগ্ন বোধ করেছে। সূত্র: বিবিসি

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২০২৮ঘ.)