মুসলিমদের প্রতি ইসরাইলকে মোকাবিলার আহ্বান এরদোগানের

মুসলিমদের প্রতি ইসরাইলকে মোকাবিলার আহ্বান এরদোগানের

ঢাকা, ১৯ মে (জাস্ট নিউজ) : বিশ্ব মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরাইলের মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান। গাজা উপত্যকায় গত সপ্তাহে গণহারে ইসরাইলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেছে। এমন দাবি করে এসব হত্যার জন্য অবশ্যই ইসরাইলকে জবাবদিহি করানোর জন্য তিনি ইসলামিক দেশগুলোর সংগঠন ওআইসির নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। এ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট এখন এরদোগান। ইসরাইলি দখলকারিত্বের ৭০তম বছর উপলক্ষে ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভ প্রতিবাদ করছেন। আর তাদের ওপর বৈষম্যপূর্ণভাবে গুলি ছুড়ে হত্যা করছে ইসরাইলি সেনারা।

এর প্রেক্ষিতে শুক্রবার তিনি ওআইসির ব্যতিক্রমী সম্মেলন আহ্বান করেন। তাতে বক্তব্য রাখেন এরদোগান। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদেরকে এভাবে হত্যার ফলে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। এশিয়া থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকাজুড়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে।

তুরস্কের সবচেয়ে বড় শহর ইস্তাম্বুলে এরদোগান এ সম্মেলনে বলেন, ইসরাইলি দস্যুরা ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। তাই ইসরাইলের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে সারা বিশ্বকে দেখানো যায় যে, মানবতা মরে যায় নি। তিনি ইসরাইলের এই কর্মকান্ডকে গুন্ডাপনা, নৃশংসতা ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হিসেবে অভিহিত করেন। ফিলিস্তিন সমস্যার জন্য তিনি এ সময় যুক্তরাষ্ট্রকেও দায়ী করেন।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্র যখন তেল আবিব থেকে তার দূতাবাস স্থানান্তর করে জেরুজালেমে নেয়, তার প্রতিবাদে কমপক্ষে ৬২ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি শিশু রয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৭০০ মানুষ। নাকবা দিবস বা ইহুদি দখলদারিত্বের ৭০ বছর ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস স্থানান্তরের প্রতিবাদে ওই বিক্ষোভ হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের জেরুজালেম যখন ইসরাইল দখল করে নেয় তখন সেখান থেকে জোর করে বের করে দেয়া হয় সাড়ে সাত লাখ মুসলিম ফিলিস্তিনিকে। এসব ঘটনায় মুসলিম বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ইস্তাম্বুল সম্মেলন আহ্বান করেন রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান।

৫৭ জাতির এ সংস্থায় সৌদি আরব বাদে বহু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যোগ দিয়েছিলেন। তবে সৌদি আরব শুধু তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে পাঠিয়েই ক্ষান্ত হয়েছে। এ ছাড়া অধঃস্তন পর্যায়ের কিছু মন্ত্রীদের পাঠিয়েছিল মিশর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি।

তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর যে নির্যাতন করা হচ্ছে তা প্রতিটি স্থানের নির্যাতিত মানুষের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এ সময় তিনি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নৃশংস গণহত্যা চালানোর জন্য ইসরাইলের নিন্দা করেন।

তিনি আরো বলেন, গাজা উপত্যকায় জোরপূর্বক জমি দখল করে নেয়া ও এর অধিবাসীদের ওপর সামগ্রিক যে নির্যাতন হচ্ছে তা আমরা কে না জানি? গাজা উপত্যকাকে একটি বিশাল বন্দি শিবিরে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে কয়েক লাখ মানুষ সফর, শিক্ষা, কাজ করা ও চিকিৎসা পাওয়া সহ বেশির ভাগ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্ছিত রাখা হয়েছে। এসব নির্যাতিত মানুষের সন্তানরা যখন অস্ত্র হাতে তুলে নেয় তখন তারা হয়ে যায় সন্ত্রাসী। তাদেরকে বলা হয় সন্ত্রাসী। যখন তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশ করে তখন তাদেরকে বলা হয় জঙ্গি। আর তারপরে তাদেরকে সরাসরি গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী রামি হামদাল্লাহ বলেছেন, এখানকার সমস্যার একটি অংশ হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা কোনো সমাধান দেয় নি। তারা ইসলামপন্থি জাতি, মুসলিমদের বিরুদ্ধে আগ্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে দূতাবাস স্থানান্তর করেছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধকে সমর্থন করে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহ্বান জানান জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।

শুক্রবার দিনশেষে চূড়ান্ত ঘোষণা দেয় ওআইসি। এ বিষয়ে দেয়া বিবৃতিতে গাজায় গণহত্যার আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করা হয জাতিসংঘের প্রতি। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষা দিতে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। যেসব দেশ জেরুজালেমে ইসরাইলের দখল সম্প্রসারণকে সমর্থন তা স্বীকৃতি দেবে এমন দেশ বা কোম্পানি বা ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক কড়াকড়ি আরোপের আহ্বান জানানো হয় ওআইসির প্রতি।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৩০৭ঘ.)