হ্যারি ও মেগান মার্কলের রূপকথার বিয়ে

হ্যারি ও মেগান মার্কলের রূপকথার বিয়ে

ঢাকা, ২০ মে (জাস্ট নিউজ) : সত্যি হল রূপকথার বিয়ে। শনিবার বাংলাদেশ সময় তখন বিকাল সাড়ে ৫টা। লন্ডনের সেন্ট জর্জ’স চ্যাপেলে তেত্রিশ বছরের রাজকুমার হ্যারি এবং ছত্রিশের যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেত্রী মেগান মার্কলের চার হাত এক হল। ডিউক এবং ডাচেস অব সাসেক্স বলে ঘোষণা করা হল হ্যারি-মেগানকে। লন্ডনের উইনসরে সেই ছকভাঙা রাজকীয় বিয়ের সাক্ষী রইলেন ৬০০ অতিথি আর ১২০০ সাধারণ নিমন্ত্রিত। এই প্রথম রাজপরিবারের কোনও বিয়ের অনুষ্ঠানে শরিক হওয়ার সুযোগ পেলেন সাধারণ মানুষ। তবে চ্যাপেলের মূল সভাঘরে প্রবেশের অনুমতি ছিল না তাদের।

যেভাবে বিয়ে
সেন্ট জর্জ’স গির্জার সামনে যখন কালো কাচে ঢাকা মেগানের গাড়ি এসে দাঁড়াল। দুধসাদা বোটনেক গাউন আর মাটিতে লুটানো ওড়নার আঁচল গুছিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এলেন কনে। গাড়ি থেকে নেমে বাবার হাত ধরে বহু স্বামীর কাছে যাওয়াটাই রীতি। নিয়ম অনুযায়ী, এই পথটুকু কনে একা হাঁটেন না। সঙ্গে থাকেন অভিভাবক স্থানীয় কেউ। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে মেয়ের বিয়েতে থাকতে পারেননি টমাস মার্কেল। সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মেগানের হবু শ্বশুর প্রিন্স চার্লস। বাবা না আসায় প্রথমে একাই হাঁটতে শুরু করেছিলেন মেগান। খানিক পরে যুবরাজ চার্লস এগিয়ে এসে হাত ধরলেন তার। তখন সঙ্গী শুধু খুদে চার পেজ বয় আর ছ’জন ব্রাইডসমেড।

যার মধ্যে ছিল কেট ও উইলিয়ামের দুই সন্তান জর্জ এবং শার্লটও। চার্লস ছেলের হাতে বউমার হাত তুলে দিতেই অলটারে দাঁড়িয়ে অস্ফূটে মেগানের দিকে তাকিয়ে হ্যারির স্বগোক্তি, ‘দারুণ লাগছে তোমায়।’ রাজকীয় বিয়ের রোমান্টিক মেজাজটা বাঁধা হয়ে যায় এখানেই। সেন্ট জর্জস চ্যাপেলের ভিতর সামনাসামনি তো বটেই, উইন্ডসর ক্যাসেলের মাঠে আমন্ত্রিতরাও তখন বিশাল পর্দায় মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন ডিউক অ্যান্ড ডাচেস অব সাসেক্সের দিকে। আর ক্যাসেলের বাইরে অন্তত ১ লক্ষ মানুষ অপেক্ষমান।

কানে হিরের দুল আর রাজপরিবারের দেওয়া হিরেখচিত মুকুটে সেজেছিলেন মেগান। তাঁর ইচ্ছে ছিল, কমনওয়েলথের ৫৩টি দেশকে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে শামিল করা। মেগানের পোশাক পরিকল্পনায় সেই ইচ্ছেই বাস্তবায়িত করেছেন ব্রিটিশ ডিজাইনার ক্লেয়ার রাইট কেলার। পাঁচ মিটার লম্বা, কনের মাথা ঢাকা ওড়নায় ছিল এই দেশগুলির ৫৩টি ফুলের নকশা। ভারতের প্রতীক হিসেবে ছিল পদ্ম। হ্যারি পরেছিলেন কালো ফ্রককোট। একই পোশাকে সেজেছিলেন দাদা উইলিয়ামও।

বিয়ের অনুষ্ঠানে সবুজ পোশাকে সেজে এসেছিলেন রানি। টুপিতে বেগুনি ফুল। যুবরানি ক্যামিলা পার্কার এবং কেট মিডলটন ছিলেন সভার প্রথম সারিতেই। মেগানের পরিবারের তরফে অবশ্য ছিলেন শুধু মা ডোরিয়া রাগল্যান্ড। রাজবাড়ির নিয়ম মেনে মহিলারা সকলেই পরেছিলেন রাজকীয় টুপি।

পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও নারীশক্তির দিকে নজর রেখেছিলেন মেগান। দায়িত্ব পড়েছিল ‘গিভেনচি’র প্রথম মহিলা প্রধান ক্লেয়ার ওয়েট কেলারের উপর। মেগান চেয়েছিলেন, বিয়ের গোটা সফরে কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি দেশের সাহচর্য পেতে। সেইমতোই কাজ করেছেন ক্লেয়ার। পাঁচ মিটারের সাদা ‘ভেইল’ এবং ‘গাউন’-এ জুড়েছেন ৫৩টি দেশের জাতীয় ফুলের ত্রিমাত্রিক প্রতীক। যার মধ্যে ভারতের পদ্ম স্থান পেয়েছে রাজবধূর ‘ভেইল’-এ। জানা গিয়েছে, যে সব কর্মীরা এই ভেইল তৈরির কাজে নিয়োজিত ছিলেন, প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর তাঁদের হাত ধুতে হয়েছে, যাতে সেলাই কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আর মেগানের হাতে যে ফুলের তোড়া ছিল, ফিলিপিয়া ক্র্যাডক পুরোটাই তৈরি করেছেন রাজপরিবারের বাগানের ফুল দিয়ে। এর মধ্যে কিছু ফুল শুক্রবার কেনসিংটন প্যালেসে নিজের ব্যক্তিগত বাগান থেকে নিজে তুলে রেখেছিলেন প্রিন্স হ্যারি। এছাড়া ছিল, ডায়নার বিশেষ পছন্দের ‘ফরগেট-মি-নটস’ও।

এই বিয়ে প্রথা ভাঙার বিয়ে হিসেবেই হয়তো চিহ্নিত হয়ে থাকবে রাজপরিবারে। গতানুগতিক প্রথা ভেঙে বিবাহবিচ্ছিন্না মেগানকে বিয়ে করলেন হ্যারি। সঙ্গে এটাও উল্লেখ্য, মেগান কৃষ্ণাঙ্গ। তাই হ্যারি-মেগানের বিয়ে বর্ণবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে নজির। এমনকী ধর্মীয় রীতিকে উপেক্ষা করে রাজপরিবারের পুত্রবধূ হলেন এক ক্যাথলিক। পাশাপাশি এদিন রাজপরিবারের প্রথার বাইরে গিয়ে বিয়ের পর আংটি বদল করেন প্রিন্স হ্যারি। হ্যারির টেক্সচার ফিনিশড প্ল্যাটিনাম ব্যান্ড এবং মার্কেলের ওয়েলশ গোল্ড-এর টুকরোর আংটি—দু’টোই তৈরি করেছে ক্লিভ অ্যান্ড কোম্পানি। একে অপরের হাতে আংটি পরিয়ে দিয়েই একসঙ্গে জীবন শুরু করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার রীতি থাকলেও, তা এদিন ভাঙেন ডিউক অ্যান্ড ডাচেস অব সাসেক্সে। প্রথা ভেঙেছে শব্দোচ্চারণের ক্ষেত্রেও। ‘ফর বেটার, ফর ওরস, ফর রিচার, ফর পুওরার, ইন সিকনেস অ্যান্ড ইন হেলথ, টু লাভ অ্যান্ড চেরিশ, টিল ডেথ আস ডু পার্ট’ উচ্চারিত হলেও, হ্যারির প্রতি ‘টু ওবে’ বলতে রাজি হননি মেগান। একুশ শতকের অভিজাত যুগল শুধু বিয়ে সারলেন এমন নয়, তার সঙ্গে আধুনিক মনস্কতারও পরিচয় দিয়ে গেলেন। তাই ঐতিহ্য বজায় রাখার থেকে একসঙ্গে থাকার প্রতিই বেশি অঙ্গীকারবদ্ধ হতে চেয়েছেন দু’জন। তাদের এই মনোবাঞ্ছা আগে জানতে পেরে সেইমতোই তৈরি করা হয়েছিল বয়ান। অবশ্য ১৯৮১ সালে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিয়ের সময় প্রথমবার এই রাজপ্রথার বিরুদ্ধাচারণ করেছিলেন ডায়না। ২০১১ সালে শাশুড়ির পথেই হাঁটেন কেট মিডলটন। আর মেগানও একই পথে হাঁটলেন।

বিয়ে শেষে প্রথা অনুযায়ী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ হ্যারি এবং মেগানকে ‘ডিউক অ্যান্ড ডাচেস অব সাসেক্স’ উপাধিতে ভূষিত করেন। কারণ, রাজপরিবারের এই উপাধিই ফাঁকা পড়েছিল। রাজপরিবারের ইতিহাস বলছে, এর আগের ডিউক অব সাসেক্স দু’বার বিয়ে করলেও তার বাবা রাজা তৃতীয় জর্জ কোনোটাই মেনে নেননি। ফলে এই উপাধি কাউকে দেয়া সম্ভব হয়নি। যা আজ পূর্ণ হলো। মেগান-হ্যারির রাজকীয় বিয়েতে।

রাজপরিবারের আর পাঁচটা বিয়ে থেকে অনেকটাই ব্যাতিক্রমী মেগান-হ্যারি জুটি। ব্রিটেনের রাজপরিবারে এই প্রথম কোনও অশ্বেতাঙ্গ মহিলা বধূ হয়ে এলেন। বিয়ের অনুষ্ঠানেও তারা বজায় রাখলেন সেই স্বাতন্ত্র্য।

অতিথি তালিকাতেও ছিল চমক। ছিলেন এলটন জন, ওপরা উইনফ্রে, জর্জ ও আমাল ক্লুনি, সেরেনা উইলিয়াম, সস্ত্রীক ডেভিড বেকহ্যাম, প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার মতো তারকারা। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে অবশ্য নিমন্ত্রিত ছিলেন না। উপহার নয়, তাদের জন্য শুভেচ্ছাই কাম্য বলে জানিয়েছিলেন হ্যারি-মেগান। পরিবর্তে ওই অর্থ তাঁরা বিভিন্ন জনসেবামূলক সংগঠনে দান করতে অনুরোধ করেছিলেন।

রাজকীয় বিয়েতে পৌরোহিত্যের মূল দায়িত্বে ছিলেন ক্যান্টরবেরির আর্চবিশপ। তবে নজর কেড়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ রেভারেন্ড মিশেল কারি। ভালবাসা নিয়ে মার্কিন এই যাজকের আবেগঘন বক্তৃতায় রীতিমতো বিস্মিত দেখাচ্ছিল অতিথিদের। আবেগের আতিশয্যে অবশ্য খানিকটা অপ্রস্তুত দেখাচ্ছিল রানি আর যুবরাজ চার্লসকে। মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে সুখে-দুঃখে আমৃত্যু পাশে থাকার শপথ নিলেন হ্যারি-মেগান। স্ত্রী-র হাতে বহুমূল্য ওয়েলস সোনায় তৈরি আংটি পরিয়ে দিলেন হ্যারি। আর নিজেও প্রথা ভেঙে পরলেন প্ল্যাটিনামের ওয়েডিং রিং। রাজপরিবারের বিয়েতে পুরুষদের আংটি পরার চল নেই। আজ বিয়ের শপথ নেওয়ার সময়ে মন্ত্রমালা থেকে ‘ওবে হার হাজব্যান্ড’ শব্দবন্ধটি বাদ দিয়েছিলেন মেগান। ভালবাসার বিয়েতে ‘মান্যতা’র প্রতিশ্রুতি পর্বটি বাদ দিয়েছিলেন কেট আর ডায়ানাও। বিয়ের অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ গায়কেরা। চেলোয় সুর তুলেছেন কৃষ্ণাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী শেকু কানে মেসন।

বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হল জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে। ঘোড়ার গাড়িতে চেপে উইনসর প্রদক্ষিণে বেরোলেন নবদম্পতি। রাস্তার দু’ধারে তখন উৎসাহী জনতার ভিড়। হাতে ব্রিটেনের জাতীয় পতাকা আর ক্যামেরার ঝলকানি। অক্লান্ত হাসিতে অভিবাদন ফিরিয়ে দিয়েছেন হ্যারি-মেগানও।

প্রেম থেকে পরিণয়ে হ্যারি-মেগান
রাজকীয় এ বিয়ে উপলক্ষে লক্ষাধিক মানুষ উইন্ডসরে হাজির হন। সারা বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ টেলিভিশনে বিয়ের অনুষ্ঠান সরাসরি উপভোগ করেন। বিয়েতে রাজ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- রানী এলিজাবেথ, তার স্বামী এডিনবরার ডিউক, প্রিন্স হ্যারির ভাই ডিউক অব কেমব্রিজ উইলিয়াম, হ্যারির মামা ও প্রিন্সেস ডায়ানার ভাই আর্ল স্পেন্সার ও তার স্ত্রী ক্যারেন এবং ডাচেস অব ইয়র্ক সারাহ্ ফার্গুসন।

বিবিসির রাজপরিবার সংক্রান্ত সংবাদদাতা জনি ডাইমন্ড বলছেন, আয়োজনের দিক থেকে এটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের এক রাজকীয় অনুষ্ঠান। অন্যান্য বিয়ের অনুষ্ঠানের মতো এ বিয়েতে বড় বড় কেক তৈরি করা হয়নি।

অনুষ্ঠানে গির্জার মধ্যে এবার গসপেল কয়্যার ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন করেন। বিয়ে উপলক্ষে প্রথমবারের মতো সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে ১২০০ ব্যক্তিকে উইন্ডসর প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

১৯৯৭ সালে প্রিন্স হ্যারির মা প্রিন্সেস ডায়ানার বিয়ের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাকে ‘পিপলস প্রিন্সেস’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। নানা আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই বিয়েটাকেও জনগণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়েছে, বলেন জনি ডাইমন্ড। সূত্র: বিবিসি।

প্রিন্স হ্যারির হবু স্ত্রীর সাবেক স্বামী নিরুদ্দেশ!
প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে সাবেক স্ত্রী মেগান মার্কেলের বিয়ের রাজকীয় আয়োজন নিয়ে হইহুল্লোড় খবরের মধ্যেই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ট্রেভর অ্যাঙ্গেলসনের। মেগানের এক সময়ের স্বামী চলচ্চিত্র পরিচালক লস এঞ্জেলেসের বাসিন্দা ট্রেভর নাকি এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে গেছেন। ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।

বছর সাতেক চুটিয়ে প্রেমের পর ২০১১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হয়েছিলেন তারা। তবে দুই বছরের মাথায় বিচ্ছেদ হয় ট্রেভর-মেগানের।

একটি সূত্রের বরাতে ইউএস উইকলি বলছে, সাবেক স্ত্রীর বিয়ে ঘিরে গণমাধ্যমের চোখ এড়াতেই নিরুদ্দেশ হয়েছেন ট্রেভর। তিনি উত্তর আমেরিকার কোনও দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশের অল্প কিছু দিন পরই ২০০৪ সালে ২৩ বছর বয়সে মেগানের সঙ্গে পরিচয় হয় ট্রেভরের। এর কিছুদিন পর থেকেই একসঙ্গে বসবাস শুরু করেন ট্রেভর-মেগান। অবশেষে ২০১১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তারা। বিয়ের সেই অনুষ্ঠানও চলেছিল চারদিন ধরে।

ট্রেভরের সঙ্গে বিচ্ছেদের তিন বছর পর নিজের থেকে তিন বছরের ছোট ব্রিটিশ যুবরাজ হ্যারির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান ৩৬ বছর বয়সী মেগান।

বিয়ের পর অতিথিদের অভিনন্দনের জবাব দেন বর-কনে
দেশ বিদেশের কয়েক’শ সেলিব্রেটি আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন এই বিয়েতে। বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো যেন তারকার মেলা। প্রিন্স হ্যারির দাদি ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ উপস্থিত ছিলেন বিয়ের অনুষ্ঠানে। এছাড়া ব্রিটিশ রাজপরিবার ও কনে মেগানের পরিবারের সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। উইন্ডসর রাজপ্রাসাদ পুরোপুরি প্রস্তুত। ইতোমধ্যে অতিথিরাও আসতে শুরু করেছেন। আজ শনিবার বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন প্রয়াত ডায়ানার ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি ও মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেল।

কেক থেকে ফুল, এমনকি কুশন কভারও- কতো কিছু কেনাকাটা হয় বিয়েতে। যারাই বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন তারাই জানেন একটি বিয়েতে চোখ কপালে ওঠার মতোও খরচ হতে পারে। কিন্তু বিয়ে যখন রাজপরিবারের, তখন ওই বিয়েতে কতো খরচ হবে সেটা খুব আন্দাজ করা না গেলেও এটা অনুমান করা খুব একটা কঠিন কিছু নয় যে খরচটা বিশাল।

রাজকীয় বিয়ে বলে কথা। এই বিয়েতে অতিথি হয়ে আসছেন সারা দুনিয়া থেকে কতো নামী দামী আর গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তি, আছে নিরাপত্তার মতো বিষয়, একই সাথে জাঁকজমক নানা আয়োজন- সুতরাং শেষ পর্যন্ত খরচের বিলটা যে কয়েক মিলিয়নে গিয়ে ঠেকবে সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

বিয়ে হবে লন্ডনের কাছের শহর উইন্ডসরে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বিয়েকে কেন্দ্র করে এক লাখের মতো মানুষ উইন্ডসরে হাজির হবেন। বিয়েতে যোগ দেওয়ার জন্যে ৬০০ জন অতিথির কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে রাজপরিবার। আরো ২০০ অতিথি উপস্থিত থাকবেন সন্ধ্যায় নবরাজ দম্পতিকে দেওয়া রিসেপশনে। আরো আছেন ১২০০ সাধারণ অতিথি।

এতো অতিথির দেখাশোনার জন্যে প্রয়োজন বড় রকমের পরিকল্পনা। আর নিরাপত্তার খরচ তো আছেই। সম্ভবত এই খাতেই খরচ হবে সবচেয়ে বেশি।

কতো খরচ হবে নিরাপত্তার পেছনে সেটা নিয়ে নানা কাগজে নানা ধরনের হিসেবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব হিসেবে আসলেই কতোটা ঠিক- সেটা জানতে বিবিসির রিয়েলিটি চেক থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তারা জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ হিসেব প্রকাশ করা হবে না।

তবে টেমস ভ্যালি পুলিশ জানিয়েছে, প্রিন্স চার্লসের বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম এবং ক্যাথরিনের বিয়েতে নিরাপত্তা বাবদ মেট্রোপলিটন পুলিশ (জনগণের করের অর্থ) প্রায় ৬৪ লাখ পাউন্ড খরচ করেছিল। তথ্য অধিকার আইনে এই হিসেব প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের কাছে প্রকাশ করা হয়েছিল।

তবে প্রিন্স হ্যারি ও মার্কেলের বিয়ের সাথে উইলিয়াম ও ক্যাথরিনের বিয়ের খরচের তুলনা করা কঠিন। কারণ বিয়ের স্থান ও অতিথির সংখ্যা দুটো বিয়েতে আলাদা।

বিয়ের অনুষ্ঠান বাবদ ঠিক কতো খরচ হবে কেনসিংটন প্যালেস থেকে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এর আগে প্রিন্স উইলিয়াম এবং ক্যাথরিনের বিয়েতে কতো খরচ হয়েছে সেটা কখনো প্রকাশ করা হয়নি।

যুক্তরাজ্যে ব্রাইডবুক নামে একটি ওয়েবসাইটের হিসেব হচ্ছে- বিয়েতে খরচ হতে পারে প্রায় সোয়া তিনশো কোটি পাউন্ড, নিরাপত্তার খরচসহ। তারা বলছে, কেকের পেছনে খরচ হবে ৫০ হাজার, ফুলের পেছনে এক লাখ ১০ হাজার ও খাওয়া দাওয়া বাবদ প্রায় তিন লাখ পাউন্ড।

বিয়ে উপলক্ষে রাজ পরিবার যেসব জিনিস কেনাকাটা করেছে, সেগুলোর বাজারদর ধরে এই অর্থ হিসেব করা হয়েছে। তাতে খরচ দাঁড়িয়েছে সোয়া তিন কোটি পাউন্ড।

বিয়ে হবে যেখানে সেই হল ভাড়া হিসেবে খরচ হবে সাড়ে তিন লাখ পাউন্ড। খাওয়া দাওয়ায় আরো প্রায় তিন লাখ। পানীয়ের পেছনে দুই লাখ। পোশাকে তিন লাখ। ফুলের জন্যে এক লাখের বেশি। কেকের পেছনে ৫০ হাজার। গানবাজনার জন্যে আরো তিন লাখ। চুল সাজানো ও মেকাপ ১০ হাজার। বিয়ের আংটি ৬ হাজার পাউন্ড।

নিরাপত্তার পেছনে যে খরচ হবে সেটা আসবে জনগণের দেওয়া কর থেকে। আপাতত টেমস ভ্যালি পুলিশকে এই খরচ বহন করতে হবে। তবে বিয়ের পরে অনুদান চেয়ে তারা আবেদন করতে পারবে হোম অফিসের কাছে। বাদবাকি খরচ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে বহন করা হবে। সূত্র-বিবিসি বাংলা।

রাজকীয় বিয়েতে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হলো যা দিয়ে
রাজ পরিবারের বিয়েতে ৬০০ বিশেষ অতিথি মধ্যাহ্নভোজ সারলেন। আর সেই বিবাহবাসরের মেনুতে ছিল তিন ধরনের খাবার। শুরুতে সেভরি ক্যানাপিতে ছিল স্কটিশ ল্যাঙ্গোস্টাইন র‌্যাপড ইন স্মোকড স্যালমন উইথ সাইট্রাস ক্রিম ফ্রেইচ, গ্রিলড ইংলিশ অ্যাসপ্যারাগাস র‌্যাপড ইন কামব্রিয়ান হ্যাম, গার্ডেন পি পান্না কোট্টা উইথ কোয়েল এগস অ্যান্ড লেমন ভার্বানা, হেরিটেজ টোমাটো অ্যান্ড বাসিল তারতারে উইথ বালসেমিক পার্লস, পোচড ফ্রি রেঞ্জড চিকেন বাউন্ড ইন এ লাইটলি স্পাইসড ইয়োগার্ট উইথ রোস্টেড অ্যাপ্রিকট, ক্রোকেট অফ কনফিট উইন্ডসোর ল্যাম্ব, রোস্টেড ভেজিটেবলস অ্যান্ড শ্যালট জ্যাম, ওয়ার্ম অ্যাসপারাগাস স্পিয়ারস উইথ মোজারেলা অ্যান্ড সান-ব্লাশ টোমাটোজ। অতিথিদের জন্য আরও বেশ কয়েক ধরনের খাবার ছিলো।

এছাড়াও ফ্রিকাসি অব ফ্রি রেঞ্জ চিকেন উইথ মোরেল মাশরুম অ্যান্ড ইয়ং লিকস, পি অ্যান্ড মিন্ট রিসোটো ইউথ পি শুটস, ট্রাফল অয়েল অ্যান্ড পারমেশান ক্রিস্পস, টেন আওয়ার স্লো রোস্টেড উইন্ডসোর পর্ক বেলি ইউথ অ্যাপেল কম্পোট অ্যান্ড ক্র্যাকলিং। সবশেষে সুইট ক্যানাপিতে রয়েছে শ্যাম্পেন অ্যান্ড পিস্টাচিও ম্যাকারুন, অরেঞ্জ ক্রিম ব্রুলি টার্টলেটস, মিনিয়েচার রুবার্ব ক্রাম্বল টার্টলেটস। আর একদম শেষে সবথেকে আকর্ষণীয় কেক।

রাজ পরিবারের এই বিয়ের খাবার টেবিলের অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ এই কেক। এল্ডারফ্লাওয়ার সুইস মেরিঙ্গের বানানো সুস্বাদু এই কেকের স্বাদে রয়েছে ঐতিহ্যের ছোঁয়া। গোটা কেকটি সাদা বাটারক্রিমে মোড়া। কেকের উপাদানে রয়েছে ২০০ আমালফি লেমন, ১০ বোতল সান্দ্রিঘাম এল্ডারফ্লাওয়ার, ২০ কেজি মাখন, ২০ কেজি চিনি এবং ৫০০টি অর্গানিক এগ। গত পাঁচ দিন ধরে সাতজন বেকার মিলে বাকিংহাম প্রাসাদের রান্নাঘরে এই কেকটি বানিয়েছেন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৬৪২ঘ.)