রাখাইনে ৯৯ হিন্দুকে হত্যার অভিযোগ অ্যামনেস্টির

রাখাইনে ৯৯ হিন্দুকে হত্যার অভিযোগ অ্যামনেস্টির

ঢাকা, ২৩ মে (জাস্ট নিউজ) : রোহিঙ্গা সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) গত বছরের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নারী, শিশুসহ অন্তত ৯৯ জন হিন্দুকে হত্যা করেছে। মঙ্গলবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করা হয়।

রাখাইন রাজ্যে ও বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া রাখাইনের লোকজনের থেকে নেওয়া সাক্ষাৎকার, ফরেনসিক টেস্টের মাধ্যমে বাছাই করা ছবির ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সংস্থাটি দেখেছে, আরসা বর্বর এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে হিন্দু ও অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

অ্যামনেস্টির ক্রাইসিস রেসপন্স বিভাগের পরিচালক তিরানা হাসান বলেন, আমাদের সর্বশেষ তদন্ত অনুযায়ী আরসার এই মানবাধিকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের নৃশংসতার দিকটি বেশি করে তুলে ধরা প্রয়োজন।

তিরানা বলেন, আরসার কর্মকাণ্ডের নৃশংসতার দিকটি উপেক্ষা করা খুবই কঠিন। তাদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া যেসব ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, তারা কোনো দিন এই বর্বরতার প্রভাব মুছে ফেলতে পারবে না। রোহিঙ্গাদের ওপর রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো আরসার এ বর্বরতার জন্য জবাবদিহি প্রয়োজন।

খা মং সেইক গ্রামে বর্বরতা
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে রাখাইনের মংডুর উত্তরাঞ্চলের আহ নুক খা মং সেইক গ্রামে হিন্দুদের ওপর চড়াও হয় আরসা সদস্যরা। কালো পোশাকের সশস্ত্র লোকজনের সঙ্গে স্থানীয় রোহিঙ্গা গ্রামবাসী মিলে হিন্দু নারী, পুরুষ ও শিশুদের ঘিরে ফেলে। বাড়িঘর লুটের পর তারা ৫৩ জন হিন্দুকে চোখ বেঁধে গ্রামের বাইরে নিয়ে যায়। সেখানে তারা নারী, পুরুষ ও শিশুদের আলাদা করে। কয়েক ঘণ্টা পর প্রথমে পুরুষদের হত্যা করা হয়। এরপর বাকিদের।

আরসা বিদ্রোহীরা আট হিন্দু নারী ও তাঁদের আট শিশু সন্তানকে তুলে নিয়ে যায়। পরে বিদ্রোহীদের চাপে তারা ইসলাম ধর্মে ‘ধর্মান্তরিত’ হলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

অ্যামনেস্টি বলছে, বেশ কয়েক দিন পরে আরসা যোদ্ধাদের সঙ্গে ওই হিন্দু বন্দীরা বাংলাদেশ সীমান্তে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। কিন্তু এই বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তারা আবার নিজ দেশে ফেরত যায়।

বেঁচে ফেরা ২২ বছরের বিনা বালা নামের এক নারী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বলেন, ওই লোকদের হাতে ছুরি ও বড় বড় রড ছিল। তারা আমাদের হাত পিছমোড়া করে বেঁধে রাখত। চোখ বেঁধে রাখত। আমরা প্রশ্ন করেছিলাম, তোমরা কী করছ। তাদের একজন রোহিঙ্গা ভাষায় বলে, তোমরা আর রাখাইনরা এক। তোমাদের ধর্ম আলাদা। তোমরা এখানে থাকতে পারবে না। এরপর তারা আমাদের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয় এবং মারধর করে। আমার সোনাগয়না ও টাকা সব দিয়ে দিই।

বেঁচে ফেরা আট নারীর সবার সঙ্গে কথা বলেছে অ্যামনেস্টি। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁরা হিন্দু আত্মীয়কে মেরে ফেলতে দেখেছেন অথবা তাদের আর্তনাদ শুনেছেন। ১৮ বছরের রাজ কুমারী বলেন, তারা পুরুষদের গলা কেটে হত্যা করেছে।

২০ বছরের ফরমিলা বলেন, তিনি হিন্দু পুরুষদের হত্যা করতে দেখেননি। কিন্তু বিদ্রোহীরা যখন ফিরে আসে, তখন তাদের ছুরিতে ও হাতে রক্ত ছিল। অন্য সাতজন নারীর সঙ্গে যখন তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তিনি পেছনে তাকিয়ে দেখেন আরসা যোদ্ধারা এক নারী ও শিশুকে হত্যা করছে। তিনি বলেন, আমি দেখলাম, কয়েকজন ওই নারীর মাথা ও চুল ধরে রেখেছ আর অন্যদের হাতে ছুরি। এরপর তারা ওই নারীর গলায় ছুরি চালায়।

অ্যামনেস্টির তালিকা অনুযায়ী নিহত ৫৩ জনের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১০ জন নারী ও ২৩ জন শিশু। এর মধ্যে ১৪টি শিশুর বয়স ছিল আট বছর।

গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আহ ন্যুক খা মং সেইক গ্রামে চারটি গণকবর থেকে ৪৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বাকিদের দেহাবশেষের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

একই দিন পার্শ্ববর্তী গ্রাম ইয়ে বাউক কিয়ার থেকে ৪৬ হিন্দু নারী, পুরুষ ও শিশু গুম হয়েছিল। পাশের গ্রাম থেকে। আরসা যোদ্ধারা তাদেরও হত্যা করেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। রাখাইন রাজ্যের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন অনুমান করেছে, তাদেরও হত্যা করা হয়েছে। এদের নিয়েই নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ৯৯ বলে মনে করছে অ্যামনেস্টি।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/১৮২০ঘ.)