নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের মুখে এরদোগান!

নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের মুখে এরদোগান!

ঢাকা, ৮ জুন (জাস্ট নিউজ) : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান চলতি মাসে অনুষ্ঠেয় তুরস্কের নির্বাচনে নজিরবিহীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন। বিরোধীরা নতুন একটি ঐক্য গড়ে তুলেছে। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জোর নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে।

২০০৩ সালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণকারী এরদোগান এখন দেশটির প্রেসিডেন্ট। তিনি নিজেকে তুরস্কের নির্বাচনে বিজয়ী দেখতে চান। খবর এএফপি’র।

কিন্তু বিশ্লেষকরা বলেন, তার ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) ২৪ জুনের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিরোধী জোটের কাছে হেরেও যেতে পারে।

এরদোগান দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করবেন ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছরের গণভোটের মাধ্যমে তার ক্ষমতাকে বহুগুণ বাড়ানো হয়েছে এবং একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

এরদোগানের বিজয় সম্পর্কে আগে থেকেই কিছু বলা যাচ্ছে না। এই নির্বাচনটি দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে পারে।

প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস’ পার্টি (সিএইচপি) নেতা কেমাল কিলিকদারোগলু নিজেই প্রার্থী না হলে এমপি মুহারেম ইনসেকে মনোনিত করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন।

আর ইনসের দল ভিন্নমতাবলম্বী জাতীয়তাবাদী সাবেক মন্ত্রী মেরাল আকসেনের ও রক্ষণশীল সাদেত পার্টির সঙ্গে বৃহৎ জোট গড়ে তোলেন।

ইউরোপীয় পরিষদের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কর্মকর্তা এসলি আইদিনতাসবাস বলেন, এই প্রথমবারের মতো তুরস্কের বিরোধী দলগুলো এ ধরনের সমন্বয় ও ঐক্য গড়ে তুলছে।

এই নারী কর্মকর্তা আরো বলেন, একেপি ইনসেকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি। কিলিকদারোগলুকে একটি সহজ প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হয়েছিল। অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধির মধ্যেই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

এ বছর তুরস্কের মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে ১২.১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে এবং ডলারের বিপরীতে লিরার মান ২০ শতাংশ কমে গেছে।

লেভিন বলেন, তুরস্কতে বর্তমানে ৩৫ লাখ সিরীয় শরণার্থী অবস্থান করছে। দেশের মানুষ ক্রমেই এদের প্রতি বিরূপ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। বিরোধী দলগুলো জনগণের এই মনোভাবকে পুঁজি করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

২০১৬ সালে তুরস্কের সরকার ও প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর একাংশ অভ্যুথানের চেষ্টা করে। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের আহ্বানে দেশটির সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই অভ্যুথান ব্যর্থ হয় এবং দেশটির আটজন সেনা কর্মকর্তা প্রতিবেশি দেশ গ্রিসে পালিয়ে যায়। সে সময় গ্রিস এই সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করলেও সম্প্রতি তাদের মুক্তি দেয়ায় দেশ দুটির মাঝে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এই আট সেনা কর্মকর্তাকে দেশদ্রোহী ঘোষণা করে তাদেরকে তুরস্কের হাতে ফিরিয়ে দিতে বরাবরই দাবি জানিয়ে আসছে আঙ্কারা।

এমন উত্তেজনার মধ্যেই গ্রিসের আকাশসীমায় যুদ্ধ বিমান পাঠিয়েছে তুরস্ক। গত মঙ্গলবার আজিয়ান দ্বীপের উপর দিয়ে অল্প উচ্চতায় ২০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে তুরস্কের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান উড়ে বেড়ায়। গ্রিস সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে বলে বেশ অনেক দিন ধরে তুরস্ক প্রকাশ্যেই অভিযোগ করে আসছে। পাশাপাশি ২০১৬ সালের জুলাই মাসের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুথানে জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত ও বিচারের অঙ্গীকার করেছে দেশটি।

তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী বাকির বোজদাগ গত সোমবার বলেন, ঐ দেশদ্রোহী সেনারা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের খুজে বের করা ও তুরস্কে ফিরিয়ে আনা আমাদের দায়িত্ব।

অভ্যুথান ব্যর্থ হওয়ার পর সেনারা গ্রিসে পালিয়ে গেলেও তাদেরকে তুরস্কের হাতে ফিরিয়ে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাসের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ব্যর্থ অভ্যুথানের পরপরই গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিকে আমরা ইতিবাচক ভাবেই নিয়েছিলাম। আমরা ভেবিছিলাম গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস তার দেয়া কথা অনুযায়ী পলাতক সেনাদের তুরস্কের নিকট ফিরিয়ে দিবেন। কিন্তু তিনি তার কথা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রায় দুই বছর পার হলেও এখনও তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়নি।

তুরস্কের পলাতক এই আট সেনা কর্মকর্তার ভাগ্য এখন গ্রিসের হাতে। ব্যর্থ সেনা অভ্যুথানের একদিন পর তারা হেলিকপ্টার নিয়ে গ্রিসে পালিয়ে যায়। যদিও এই অভ্যুথানের সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে অভিযুক্ত আট সেনা।

২০১৬ সালের জুলাই মাসের এই ব্যর্থ অভ্যুথানে ২৫০ জন নিহত এবং দুই হাজারের অধিক মানুষ আহত হয়।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৩৫৪ঘ.)