ট্রাম্পের ‘অসহিষ্ণু অভিবাসী আইন’র সংস্কার চায় আমেরিকা

ট্রাম্পের ‘অসহিষ্ণু অভিবাসী আইন’র সংস্কার চায় আমেরিকা

ঢাকা, ১৯ জুন (জাস্ট নিউজ) : আমেরিকাকে অবৈধ অভিবাসীশূন্য করতে প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্পের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ বা শূন্যসহিষ্ণু বা অসহিষ্ণু অভিবাসী নীতির সংস্কার চায় পুরো আমেরিকা। মা-বাবার কোল থেকে শিশু-সন্তানদের পৃথক করার অমানবিক ঘোষণায় ফুঁসে উঠেছে মার্কিনরা। তৃণমূল থেকে অভিজাত- সবাই বলছেন ‘এই আইন অ-আমেরিকান’।

ট্রাম্পপত্নী ফাস্টলেডি মেলানিয়াও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। নির্মম এ আইনের সংস্কার দাবি তুলে স্বামীকে হৃদয় দিয়ে দেশ শাসন করতে বলেছেন মেলানিয়া।

সাবেক ফাস্টলেডি লরা বুশও কলম ধরেছেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। নতুন আইনকে বর্বর আখ্যা দিয়ে তাল মেলাচ্ছেন গণদাবির সুরে। শিশুদের সমঝোতার অস্ত্র বানানো ঠিক নয়।

এই আইনের পরিবর্তন করা উচিত বলে কঠোর সমালোচনা করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পরিবার থেকে শিশুদের আলাদা নীতির দায়ভার উল্টো ডেমোক্রেটদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।

শনিবার এক টুইট বার্তায় দূরত্ব মিটিয়ে আরেকটি নতুন আইন প্রণয়নের ব্যাপারে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সিএনএন, এপি, এএফপি।

অভিবাসীবিরোধী ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপকে ধিক্কার দিচ্ছে গোটা যুক্তরাষ্ট্র। ডেমোক্রাটরা এ শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিকে বলছে শূন্য মানবিক নীতি।

রিপাবলিকানরাও একে নির্মম অমানবিক বলে ছিঃ ছিঃ করছে। ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্ট স্টিভ ব্যানন বলছেন, নতুন এ একগুঁয়েমির ফলে নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কমপক্ষে ৫০টি অতিরিক্ত আসন হারাবে রিপাবলিকানরা।

৮ এপ্রিল ট্রাম্পের এই ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ ঘোষণা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ শেসনস। পরদিন থেকেই হোমল্যান্ডা অ্যান্ড সিকিউরিটি অধিদফতরের এ আইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে গোটা মার্কিন মুল্লুকে।

এরপর থেকে গত দেড় মাসে দুই হাজারের বেশি অভিবাসী শিশু গ্রেফতার করেছে দেশটির অভিবাসী পুলিশ। ১৯ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১৯৯৫ শিশু-কিশোর গ্রেফতার করে মা-বাবা- পরিবার থেকে পৃথক করা হয়েছে। অন্য এক হিসাব বলছে, গত ছয় সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৪৬ জন নিরপরাধ অভিবাসী শিশুকে বন্দি করা হয়েছে।

অবৈধ অধিবাসীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্সে’ ক্রমবর্ধমান বিতর্কের প্রেক্ষাপটে এই প্রথমবার স্বামীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখালেন ফাস্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প।

এ নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার কংগ্রেসের রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছেন মেলানিয়া। এছাড়াও সবাইকে একজোট হয়ে একটি সফল অভিবাসন নীতিমালা তৈরি করতে পারবেন।

মেলানিয়ার মুখপাত্র বলেছেন, মেলানিয়া ‘বিশ্বাস করেন, আমি আমাদের আইন মান্যকারী দেশ হওয়া উচিত, কিন্তু হৃদয় দিয়ে দেশ শাসন করা প্রয়োজন। শিশুদেরকে তাদের পরিবার থেকে আলাদা করা হচ্ছে, এটি দেখতে ঘৃণা করেন মিসেস ট্রাম্প। তিনি অভিবাসন প্রক্রিয়ার সফল সংস্কার চান।’

সাবেক ফাস্টলেডি লরা বুশও ট্রাম্পের এই বিতর্কিত নীতির নিন্দা জানিয়েছেন। এ নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে এক নিবন্ধও লিখেছেন লরা বুশ।

তিনি লিখেছেন, বাবা-মার কাছ থেকে সন্তানকে আলাদা করা নির্মম, অনৈতিক ও হৃদয়বিদারক। তিনি লিখেছেন, গত ছয় সপ্তাহে এই আইনের আওতায় অন্তত দুই হাজার মানুষকে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক যারা আশ্রয়ের আশায় মার্কিন সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তাদের অনেককেই কারাগারে রাখা হয়েছে। এ কারণে বহু শিশুই এখন তাদের বাবা-মা থেকে আলাদা থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

আর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এ শিশুদের ডিটেনশন সেন্টার, ওয়ারহাউস ও সুপার মার্কেটে রাখা হয়েছে। সমালোচকরা সরকারের বিতর্কিত এই নীতিকে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন। তবে সমালোচকরা বলছেন, গেল মাসে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্স পরিবার থেকে শিশুদের আলাদা করার এই নীতি ঘোষণা করেন।
(জাস্ট নিউজ/জেআর/১০২০ঘ.)