মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

ঢাকা, ৪ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার নাজিবকে গ্রেপ্তার করে দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন (এমএসিসি)। কুয়ালালামপুরের বাসভবন থেকে নাজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বুধবার সকালে কুয়ালালামপুর হাইকোর্টে নাজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নাজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি মালয়েশিয়ার ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থেকে ৭০ কোটি মার্কিন ডলার নিজের পকেটে পুরেছেন। গত মে মাসে নির্বাচনে পরাজয়ের পর তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। অবশ্য সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

গতকাল টুইটারে পোস্ট করা এক ভিডিওতে জনগণের উদ্দেশে নাজিব বলেন, অভিযোগগুলো বিশ্বাস করবেন না। অভিযোগগুলো সত্য নয়। আমার আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।

পুলিশ বলছে, গত জুন মাসে তারা নাজিব রাজাকের প্রাসাদে বিলাসবহুল পণ্য ও নগদ অর্থ উদ্ধার করে, যার পরিমাণ ২৭ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। মালয়েশিয়ার ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় ধরনের মূল্যবান জিনিসপত্র জব্দের ঘটনা।

ওয়ানএমডিবি বিশেষ টাস্কফোর্স এক বিবৃতিতে বলেছে, গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিট) নাজিবকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমএসিসির একটি দল দুপুরে তিন-চারটি গাড়িতে করে নাজিবের বিলাসবহুল বাসভবনের সামনে হাজির হয়। তবে ওই গাড়িগুলোয় কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ ছিল না। এরপর বাড়িতে ঢুকে নাজিবকে গ্রেপ্তার করে তারা।

এমএসিসির এক মুখপাত্রের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তারের পর নাজিবকে কুয়ালালামপুরের বাইরে মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় এমএসিসির সদর দপ্তরে নেওয়া হয়। গতকাল রাতটা তাঁর সেখানেই কেটেছে। সেখান থেকে তাঁকে আদালতে নেওয়া হয়।

৬৪ বছর বয়সী নাজিবের এই গ্রেপ্তার কিছুটা অনুমেয়ই ছিল। গত মে মাসের জাতীয় নির্বাচনে নাজিবের দল ইউনাইটেড মালয়েস ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন জোটের কাছে ধরাশায়ী হয়। এরপর থেকেই নতুন সরকারের দুর্নীতিবিরোধী তৎপরতা, বিশেষ করে ওয়ানএমডিবি দুর্নীতি নিয়ে জোরেশোরে তদন্ত চলছিল। এমএসিসির তদন্তকারীরা বেশ কয়েক দফায় নাজিবের বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ অর্থ, অলংকারসহ ২৭ কোটির বেশি মার্কিন ডলার মূল্যমানের সম্পদ জব্দ করেছে। এ ছাড়া নাজিব, তার স্ত্রী রোসমাহ মনসুর এবং নাজিবের সৎছেলে রিজা আজিজকে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। সর্বশেষ ওয়ানএমডিবি দুর্নীতির তদন্তের অংশ হিসেবে ৪০৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে কর্তৃপক্ষ।

২০১৫ সালে একটি প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, ২০১৩ সালে নাজিব ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেয়েছিলেন।

প্রাথমিকভাবে অস্বীকার করা হলেও পরে সরকার দাবি করে, সৌদি আরবের রাজপরিবারের কাছ থেকে ‘ব্যক্তিগত অনুদান’ হিসেবে এই অর্থ পাওয়া যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তে বলা হয়েছে, ওয়ানএমডিবি থেকে অর্থ সরানোর কাজে জড়িত একজন মালয়েশীয় কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা হলেন নাজিব নিজেই।

ওয়ানএমডিবি কী
ওয়ান মালয়েশিয়ান ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ বা ওয়ানএমডিবি হলো একটি রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পর ২০০৯ সালে নাজিব রাজাক রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এ তহবিল গঠন করেন। এর মাধ্যমে মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও আবাসন খাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ করা হয়।

২০১৪ সালে খবর ছড়ায়, ওয়ানএমডিবি তহবিল ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের ঋণগ্রস্ত। এরপর ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বিস্ফোরণ ঘটায় যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে পত্রিকাটি দাবি করে, নাজিব ওই তহবিল থেকে ৬ কোটি ৮১ লাখ ডলার নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগও ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারির ঘটনায় মামলা করেছে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ওয়ানএমডিবি থেকে ৪৫০ কোটি ডলার চুরি হয়েছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, তহবিল তছরুপের অভিযোগে মালয়েশিয়ায় চলমান তদন্তপ্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করেছেন নাজিব। তবে তিনি এবং ওয়ানএমডিবি কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০৫০ঘ.)