নওয়াজের ১০ বছর কারাদণ্ড, মেয়ের ৭ বছর

নওয়াজের ১০ বছর কারাদণ্ড, মেয়ের ৭ বছর

ঢাকা, ৬ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ১০ বছর ও তার মেয়ে মরিয়মকে ৭ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দুর্নীতি মামলায় শুক্রবার পাকিস্তানের একাউন্টিবিলিটি কোর্ট এ রায় দিয়েছে।

পাকিস্তানের গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে, কারাদণ্ডর পাশাপাশি নওয়াজকে ৮ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ৯০ কোটি টাকা) ও মেয়ে মরিয়মকে ২ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২৩ কোটি টাকা) জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া নওয়াজের শ্যালক ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত সফদারকে এক বছরের কারদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

 

নওয়াজ শরিফ ও তার মেয়ে মরিয়ম লন্ডনে অবস্থান করছেন। নওয়াজের স্ত্রী কুলসুম নওয়াজ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসাধীন। এ কারণে নওয়াজ ও মরিয়ম এই রায় অন্তত সাত দিন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত শুক্রবারই রায় ঘোষণা করলেন।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, লন্ডনে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনাকে কেন্দ্র করে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। এই মামলার রায় শুক্রবার সকালেই ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু আদালত কয়েক দফা পিছিয়ে বিকেলের পর রায় ঘোষণা করেন। নওয়াজ শরিফ বরাবরই দুর্নীতির এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন।

নব্বইয়ের দশকে লন্ডনে পার্ক লেনের অ্যাভেনফিল্ড হাউসে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনে নওয়াজের পরিবার। পাকিস্তানের জাতীয় জবাবদিহি সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোর (এনএবি) কৌঁসুলি আদালতকে বলেন, নওয়াজ এই ফ্ল্যাটগুলি কেনার অর্থের বৈধ আয় দেখাতে পারেননি। যদিও নওয়াজের পরিবারের দাবি, বৈধ আয়ের অর্থ দিয়ে এসব ফ্ল্যাট কিনেছেন তারা। তবে এনএবির জিজ্ঞাসাবাদে এসব ফ্ল্যাট কেনার বিষয়ে নওয়াজের পরিবারের সদস্যরা ভিন্ন রকম তথ্য দেন।
২০১৫ সালে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসে নওয়াজের। ওই সময় জানা গিয়েছিল, বেশ কয়েকটি অফশোর কোম্পানির সঙ্গে নওয়াজ শরিফের ছেলে-মেয়েদের যোগসূত্র রয়েছে। অভিযোগ আছে, এই কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করা হয়েছে এবং বিদেশে নানা সম্পদ কেনা হয়েছে। আলোচনায় ছিল, লন্ডনে কেনা এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটগুলোও। শেষতক সেই ফ্ল্যাটের কারণেই কারাদণ্ড হলো নওয়াজ ও তার মেয়ের।

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ফ্ল্যাট কেনার অর্থের বৈধ উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন নওয়াজ। আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া এনএবিকে অসহযোগিতা করা দায়ে দেওয়া হয়েছে এক বছরের কারাদণ্ড। তবে দুটি সাজা একই সঙ্গে চলবে। তাই নওয়াজকে ১০ বছর কারাগারে থাকতে হবে।

অন্যদিকে অবৈধ কর্মকাণ্ডে উৎসাহ দেওয়ার কারণে সাজা পেয়েছেন নওয়াজ কন্যা মরিয়ম। এ জন্য তাকে দেওয়া হয়েছে ৭ বছরের কারাদণ্ড। আবার এনএবিকে অসহযোগিতা করা দায়ে দেওয়া হয়েছে এক বছরের কারাদণ্ড। তবে দুটি সাজা একই সঙ্গে চলায় মরিয়মকে ৭ বছর কারাগারে থাকতে হবে। আর তার স্বামী ক্যাপ্টেন সফদারকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এনএবিকে অসহযোগিতা করা দায়ে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা হয়েছে। শুক্রবার যে মামলাটির রায় হয়েছে, তা এগুলোরই একটি। এই মামলার প্রায় শতাধিক শুনানিতে অংশ নিতে হয়েছিল নওয়াজ ও তার মেয়েকে। লন্ডনে বসে সরাসরি মামলার রায় শোনার কথা তাদের। নওয়াজের দুই ছেলে-হাসান ও হুসেইনেও সেখানে আছেন। তবে ক্যাপ্টেন সফদার পাকিস্তানে থাকলেও আদালতে হাজির হননি।

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যেতে হয়েছিল নওয়াজ শরিফকে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিল। আদালত তাকে রাষ্ট্রীয় যে কোনো পদে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পরে আদালতের রায়ে দলীয় প্রধানের পদও ছাড়তে হয় নওয়াজকে।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/১৮১৩ঘ.)