দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তায় ঠাসা প্রশাসন পেয়েছি: মাহাথির মোহাম্মদ

দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তায় ঠাসা প্রশাসন পেয়েছি: মাহাথির মোহাম্মদ

ঢাকা, ২৭ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তায় ঠাসা একটি প্রশাসনের উত্তরাধিকারী হয়েছেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাক লাগানো এক জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী হন ৯২ বছর বয়সী মাহাথির। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।

নিজের দেশের প্রসঙ্গ ছাড়াও তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বাণিজ্যযুদ্ধ ইত্যাদি প্রসঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন।

সাক্ষাতকারে মাহাথির বলেন, আমরা সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর যে পরিস্থিতি দেখছি তাতে বিশ্বস্ত কোনো কর্মকর্তা পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। বাইরে থেকে আমরা বুঝতে পারছিলাম, দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে গোটা প্রশাসন। কিন্তু পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ তা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার আগে বুঝতে পারিনি। সরকার যাদের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেবে, সেই শীর্ষ কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই দুর্নীতিগ্রস্ত।

মাহাথিরের পূর্বসূরি নাজিব রাজাক জনগণের বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে এমন লোকজনকে নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে যারাও দুর্নীতির কারণে বিচারের মুখোমুখি হবার যোগ্য। এটা ভীষণ কঠিন একটা কাজ। কারণ যাদের আপনি বিশ্বাস করতে পারেন না, তাদের যে দায়িত্ব দিবেন তা তারা আদৌ ঠিকভাবে করবে কি না সেই সংশয় থেকে বের হওয়া কঠিন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ সূচক অনুসারে মালয়েশিয়া বিশ্বের ৬২তম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ।

মাহাথির বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা তাদের অর্জিত বিপুল অর্থ নিজেরা এবং স্ত্রী-সন্তানদের বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি, বিদেশভ্রমণ, কিংবা দেশের বাইরের ব্যাংকে জমা করার সুযোগ পেয়েছেন। সরকার তাদের বিন্দুমাত্র বাধা দেয়নি।

মার্কিন এই গণমাধ্যমকে মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যতদিন সুযোগ পাই জনগণের সেবা করে যাব।

যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন প্রসঙ্গ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক মালয়েশিয়াকে অতিমাত্রায় চীনঘেষা করে ফেলেছিলেন বলে মন্তব্য করেন মাহাথির।

তিনি বলেন, আমরা চীনের সঙ্গে চলার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করব। চীনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া একটি মাল্টিবিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট আমরা সম্প্রতি বাতিল করেছি। কারণ আমরা যাচাই করে দেখেছি ওই প্রোজেক্টের বাজেট যা হওয়া উচিত ছিল তার চেয়ে ২ হাজার কোটি ডলার বেশি ধরা হয়েছিল। বাড়তি অর্থ যে দুর্নীতির উদ্দেশে খরচের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই।

মাহাথির আরো বলেন, আমরা চীনের সঙ্গে সব সময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পক্ষে। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে চাই। কারণ সবাই জানে, ক্ষমতাবানরা যা চায় তা আদায় করে নিতে পারে, দুর্বলের কপালে যা লেখা থাকে তা হারাতে হবেই। চীনের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বন্দ্ব হতেই পারে। তাদের সঙ্গে যুদ্ধে যাবার সামর্থ্য আমাদের নেই। কারণ তারা অধিক শক্তিশালী। তাদের শক্তি কিংবা সম্পদ থেকে আমাদের লাভবান হবার কোনো সুযোগ নেই। ফলে তাদের সম্পদে কিংবা শক্তিতে আমাদের গদগদ হবারও যুক্তি নেই। এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।

চীন তার অর্থবলে শক্তির আওতা বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে তিনি বলেন, এই বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্বের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে তিনি ‘অপরিপক্ব’ বলে মন্তব্য করেন।

বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক বলেন, ট্রাম্প চান তিনি মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে একটি সীমান্ত দেয়াল নির্মাণ করবেন আর এই অর্থ তিনি মেক্সিকোর নিকট থেকে আদায় করবেন। এটা হাস্যকর একটা চাওয়া। দেয়াল নির্মাণ আমেরিকার প্রোজেক্ট। আর সেই প্রোজেক্টে অর্থায়ন করবে আরেকটি দেশ, এটা যুক্তিহীন। এমন অপরিপক্ব চিন্তাধারার মানুষের সঙ্গে কিভাবে চলবে বিশ্ব?

বাণিজ্যযুদ্ধ বন্ধ না হলে চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ সবাইকে পস্তাতে হবে বলে সাক্ষাতকারে মন্তব্য করেন মাহাথির।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০৫০ঘ.)