পাকিস্তানে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামবে বিরোধীরা

পাকিস্তানে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামবে বিরোধীরা

ঢাকা, ২৮ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে তার ফল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

শুক্রবার ইসলামাবাদে এক সম্মেলনে তারা নতুন করে স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবি জানান। এমএমএ নেতা মিয়ান আসলামের ইসলামাবাদের বাসায় এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন দলের নেতারা থাকলেও সভাপতিত্ব করেন নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম পার্টির সভাপতি শাহবাজ শরীফ ও মুত্তাহিদা মজলিশ-ই-আমল (এমএমএ) দলের সভাপতি মাওলানা ফজলুর রেহমান। সম্মেলন থেকে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরুরও ঘোষণা দেওয়া হয়।

বুধবার সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহনের পর শুক্রবার রাত পর্যন্ত ২৭০টি আসনের মধ্যে ২৬৮ টির ফল ঘোষণা করতে পেরেছে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ইমরানের পিটিআই পেয়েছে ১১৭টি আসন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৪ আসন পেয়েছে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন। আর বিলাওয়ল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি(পিপিপি) পেয়েছে ৪৩ আসন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ১২টি আসনে।

ধর্মীয় দলগুলোর জোট মুত্তাহিদা মজলিস-এ-আমাল (এমএমএ) পেয়েছে ১৩টি আসন, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) পেয়েছে ৬ আসন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদ ৪টি আসনে জয় পেয়েছে। এছাড়া সিন্ধুর গ্রান্ড ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স ও বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি) পেয়েছে ২টি করে আসন।

বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি ৩ আসনে জয়ী হয়েছে। তবে ফল ঘোষণার আগে থেকে বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে আসছে। এবার ফল প্রকাশের পর তা প্রত্যাহার করে আন্দোলনের হুমকিও দেয় দলগুলো।

সংবাদ সম্মেলনের মাওলানা ফজলুর রেহমান বলেন, সর্বদলীয় সম্মেলন ঐক্যবদ্ধভাবে ২০১৮ সালের ২৫ জুলাইয়ের নির্বাচনকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি আরও বলেন, আমরা এই নির্বাচনকে জনগণের রায় বলে মনে করি না। বরং এটা জনগণের রায়কে চুরি করা বলে মনে করি।

ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই’র কথা উল্লেখ করে মাওলানা ফজলুর রেহমান বলেন, যে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা দাবি করে বিজয়ের ঘোষণা দিয়েছে সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবৃদ্ধ তা মানে না। রেহমান বলেন, সম্মেলেন অংশ নেওয়া দলগুলোর যেসব প্রার্থী জয়ী হয়েছে তারাও শপথ নেবে না।

রেহমান এমন ঘোষণা দিলেও পিএমএল-এন দলের নেতা শাহবাজ শরীফ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে চেয়েছেন।

তিনি বলেন, আন্দোলন শুরু হবে আর পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ হবে। দুয়েক দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি এই সিদ্ধান্ত নেবে। যেসব দল শুক্রবারের সম্মেলনের উপস্থিত থাকতে পারেনি কিন্তু নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদেরও এই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান শাহবাজ। তিনি ঘোষণা দেন, ‘আমরা কোনও কোনও প্রতিষ্ঠানের কাছে গণতন্ত্রকে জিম্মি হতে দেব না’।

সম্মেলনে জেইউআই-এফ দলের প্রধান বলেন, নির্বাচনের জন্য পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের জন্য সংসদে দুই হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, তারা কি এই নির্বাচন করেছে?’ তিনি অভিযোগ করেন, জনগণের বিশাল অর্থ অপচয় করার পরও কমিশন নির্বাচনের সঠিক ফল ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং অফিসারসহ অন্যরা সামিরক সদস্যদের হাতে জিম্মি ছিল। তারা দলের পোলিং এজেন্টদের ফলাফল হস্তান্ত করেনি। রেহমান বলেন, ‘আমরা এই চোরদের সংসদে ঢুকতে দেবো না’।

নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তান পিপলস পার্টি শুক্রবারের সম্মেলনে যোগ দেয়নি। দলটির মুখপাত্র বলেছে, নির্বাচন কারচুপি নিয়ে তাদের নেতৃত্ব নিজস্ব কৌশল নিয়ে কাজ করবে।

শুক্রবারের বৈঠকে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে রয়েছে জামাত-ই-ইসলামি (জেআই) প্রধান সিনেটর সিরাজুল হক, সিন্ধ গভর্নর মোহাম্মদ জুবাইর, গিলগিট-বেলুচিস্তারে মুখ্যমন্ত্রী হাফিজুর রেহমান, আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী রাজা ফারুক হায়দার, আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির প্রধান আসফানদিয়ার ওয়ালি খান, কওমী ওয়াতান পার্টির চেয়ারম্যান আফতাব আহমেদ খান শিরপাও, ন্যাশনাল পার্টির সিনেটর মির হাসিল বিজেনজো, পাখতানখুয়া মিল্লি আওয়ামী পার্টির চেয়ারম্যান মেহমুদ খান আচাকজাই ও এমএমএ দলের কয়েকজন নেতা।

এছাড়া পিএমএল-এন দলের নেতা শহীদ খাকান আব্বাসী, আয়াজ সাদিক, মারিয়ুম আওরঙ্গজেব, চৌধুরী তানভীর, খুররাম দস্তগীর, পাক সরজামিন দলের নেতা মুস্তাফা কামাল, রাজা হারুন ও ওয়াসিম আহমেদও এই সম্মেলনে অংশ নেন। এমনকি পিটিআই এর সঙ্গে জোট সরকারে যোগ দিতে চাওয়া দল মুত্তাহিদা কওমী মুভমেন্টের নেতা ড. ফারুক সাত্তারও এই সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনের ফারুক সাত্তার বলেন, ২৫ জুলাইয়ের নির্বাচনের ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে আর ফল বদলে দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তারা তাদের পছন্দ মতো ফল নির্ধারণ করেছে আর তাদের পছন্দমতো দলকেই জয়ী করা হয়েছে।

জোট সরকার গঠনে পিটিআই’র উদ্যোগ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে জিও নিউজ জানায়, শুক্রবার এমকিউএম-পির কনভেনর ড. খালিদ মাকবুল সিদ্দিকিকে সরকারের থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইমরানের দল। ড. খালিদও আমন্ত্রণের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পিটিআই নেতা জাহাঙ্গীর তারিন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে পিটিআই প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাবিতা কমিটি। সূত্র: ডন

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৯৩৫ঘ.)