বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় যুবতীকে পুড়িয়ে হত্যা

বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় যুবতীকে পুড়িয়ে হত্যা

ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বারে বারে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে শেষ পর্যন্ত এক যুবতীকে জীবন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছে তারই প্রাক্তন সহকর্মী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ ভারতের হায়দরাবাদ শহরে, জনসমক্ষেই ওই যুবক পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে দেয় ওই যুবতীর গায়ে। শুক্রবার সকালে হাসপাতালে মারা গেছেন ২৫ বছর বয়সী ওই যুবতী। খবর বিবিসি বাংলার।

স্থানীয় সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, পরিবারের সবচেয়ে ছোট মেয়ের মৃত্যু হলো এমন দিনে, যেটা তার ভাইয়ের জন্মদিন ছিল।

হায়দ্রাবাদের পুলিশ বলছে, নিহত সন্ধ্যা রানী (২২) যখন বৃহস্পতিবার বিকেলে অফিস ছুটির পরে বাড়ি ফিরছিলেন, তখনই তাঁর পিছু নেন কার্তিক নামের অভিযুক্ত ওই যুবক। লালাগুডা এলাকায় তার বাড়ির কাছেই একটি অ্যালমুনিয়াম কারখানায় কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে কাজ করতেন সন্ধ্যা। ওই একই কারখানায় বছর খানেক আগে পর্যন্তও কাজ করতেন কার্তিক। কিন্তু বদ স্বভাবের কারণে তার সেসময় চাকরি চলে যায়। তারপর থেকে সে একদিকে সন্ধ্যাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছিল, অন্যদিকে তাকে ওই সংস্থার চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্যও চাপ দিচ্ছিল।

তার যুক্তি ছিল তাকে যেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, সেখানে কেন সন্ধ্যা কাজ করবেন! এই নিয়ে রাস্তাতেই ঝগড়া হয় দুইজনের।

হায়দ্রাবাদ উত্তর জোনের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বি সুমথি বলেন, ওই যুবতী হাসপাতালে যে জবানবন্দী দিয়েছে, সেটাকেই মৃত্যুকালীন জবানবন্দী হিসাবে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও কার্তিককেও গ্রেপ্তারের পরে জেরা করা হয়েছে। ওই যুবতী জানিয়েছিলেন যে আটককৃত যুবক কার্তিক বারে বারে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছিল, চাকরি ছাড়ার কথাও বলতো। সে কথায় কান না দেওয়ায় গতকাল বাড়ি ফেরার সময়ে দুইজনের ঝগড়া হয়। হঠাৎই গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় কার্তিক। আগুন লাগানোর সময়ে ওই এলাকায় বেশ কিছু মানুষ ছিলেন, কিন্তু তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই পালিয়ে যায় কার্তিক।

অন্যদিকে, শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া অবস্থায় স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সন্ধ্যাকে। শুক্রবার সকালে হাসপাতালেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে তার আগে, রাতেই কার্তিক নামের ওই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সন্ধ্যার মৃত্যুর পরে কার্তিকের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগও যোগ করা হয়েছে।

কমিশনার সুমথি জানান, জবানবন্দী ছাড়াও সিসিটিভির ফুটেজসহ অন্যান্য প্রমাণও তারা যোগাড় করেছেন। ধৃত কার্তিক কোথা থেকে কীভাবে পেট্রল কিনেছিল - এসবের ক্লোজড সার্কিট টিভির ফুটেজ যোগাড় করেছি আমরা। দেখা গেছে একটা বোতলে পেট্রল ভরার পরে সেটা নিজের জামার ভেতর লুকিয়ে রেখেছিল কার্তিক। ওই যুবতী কাজ থেকে বের হওয়ার সময় থেকেই তার পিছু নিয়েছিল কার্তিক। গোটা ঘটনাই সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যাচ্ছে। এটাও স্পষ্ট যে এটা ছিল ‘পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।

হায়দ্রাবাদের স্থানীয় সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, খুবই গরীব পরিবারের ৭ ভাই বোনের মধ্যে সবথেকে ছোট ছিলেন সন্ধ্যা। ২০১১ সালে বাবা মারা যাওয়ায় স্নাতক স্তরের পড়া শেষ না করেই কাজে ঢুকেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে কাজে যাওয়ার আগে মায়ের হাতে ৫০০ টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন সন্ধ্যা। বৃহস্পতিবারই ছিল তার ভাইয়ের জন্মদিন। সবার জন্য বিরিয়ানি আর কিছু মিষ্টির ব্যবস্থা করতেই ওই টাকা দিয়েছিলে সে। শুক্রবার হাসপাতালে সংবাদদাতাদের সামনে বড়ভাই শুধুই কেঁদে চলছিল। মাঝে মাঝে সস্তার মোবাইল ফোনে তুলে রাখা বোনের ছবির দিকেও তাকিয়ে দেখছিল সে। বিবিসি বাংলা।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২২৫৫ঘ.)