ভারতে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা, মৃত ১৬৭

ভারতে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা, মৃত ১৬৭

ঢাকা, ১৭ আগস্ট (জাস্ট নিউজ): ভারতের কেরল রাজ্যে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা আঘাত হেনেছে। বন্যাবিধ্বস্ত এলাকায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বৃহস্পতিবার ২৫ জনের পরে বৃহস্পতিবার গোটা রাজ্যের বিভিন্ন অংশে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ১৬৭ পেরিয়ে যাবে বলে মনে করছে প্রশাসন।

শুক্রবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজই তিনি আকাশপথে কেরলের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টও বলেছে, কেরলের বন্যা-পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ।’ মুল্লাপেরিয়ার বাঁধের পানির স্তর কমাতে জাতীয় সঙ্কট মোকাবিলা কমিটির সঙ্গে শুক্রবার রাজ্যগুলোকে বৈঠকে বসতে বলেছে আদালত।

মুল্লাপেরিয়ার-সহ ৩৫টি জলাধারের বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে। মুল্লাপেরিয়ার নিয়ে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন উদ্বেগ জানানোর পরে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এপ্পাডি কে পলানীস্বামী বৃহস্পতিবার তাকে চিঠি লিখে জানান, বাঁধ সব দিক থেকেই সুরক্ষিত রয়েছে। এই বাঁধে ফাটল ধরার গুজব উড়িয়ে দিয়েছে কেরল সরকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় কারা এ নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে তা খুঁজে বার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এ দিন বন্যার কথা মাথায় রেখে কেরল ও তামিলনাড়ুকে জাতীয় সঙ্কট মোকাবিলা কমিটির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছনোর কথা বলেছে।

মুল্লাপেরিয়ার বাঁধের পানির স্তর ১৩৯ ফুটে নামিয়ে আনার কথা জানিয়েছিল কেরল। কিন্তু তামিলনাড়ু সরকার কোর্টে তার বিরোধিতা করে। তারা বলেছে, এই মুহূর্তে বাঁধে ২০ হাজার কিউসেক পানি রয়েছে। এত বৃষ্টির মধ্যে দুম করে পানির স্তর কমানো হয়তো সম্ভব হবে না। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি ইন্দু মলহোত্রের বেঞ্চ বলেছে, ‘সঙ্কটের এই মুহূর্তে কোনো পক্ষেরই বিরোধিতার অবস্থান নেয়া উচিত নয়।’ বেঞ্চের মতে, ‘অতীতকে এর মধ্যে টানবেন না। বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভেবে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন।’ অতীতে মুল্লাপেরিয়ার বাঁধ নিয়ে কেরল-তামিলনাড়ুর বিরোধ দূরে সরিয়ে রাখার দিকে ইঙ্গিত করেছে শীর্ষ আদালত।

কেরলের পরিস্থিতিতে টুইটারে উদ্বেগ জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও। রাজ্যে কংগ্রেস বিরোধী আসনে থাকলেও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সাহায্য করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন সবার কাছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ করেছেন, রাজ্যে আরো বেশি করে জওয়ান এবং নৌসেনা মোতায়েন করার জন্য। এর পরই কেরল যাওয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

পানির তলায় থাকা কোচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ২৬ অগস্ট পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। প্রথমে ১৮ অগস্ট পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হলেও বিমানবন্দরের অবস্থা দেখে আরো আট দিন বন্ধ রাখার কথা ভাবা হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ছিল কোচির মেট্রো পরিষেবাও। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটের পরে চালু হয়েছে মেট্রো। আরো ১২টি জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যে কারণে রোববার পর্যন্ত লাল সতর্কতা জারি রয়েছে।

বৃহস্পতিবার ত্রিশূর, আলুভা ও পেরুমবভুরে ১৩২ জনকে আকাশপথে উদ্ধার করেছে ভারতীয় নৌবাহিনী। পোল্লাচি-ভালপারাই ঘাট রোডে এক কিলোমিটার জুড়ে বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা নাগাদ বড় ধস নামে। তার পরেও ছোটখাটো ধস এবং পাহাড় থেকে গড়িয়ে আসা পাথরের চাঁই রাস্তার বিভিন্ন অংশে পড়ে রয়েছে। সূত্র
: আনন্দবাজার পত্রিকা

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৫৫২ঘ.)