মিয়ানমারে বন্দি ২ সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের

মিয়ানমারে বন্দি ২ সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের

নিউইয়র্ক, ৪ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ): মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের দায়ে দণ্ডিত বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে মুক্ত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের নতুন মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট।

সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এটি ন্যায় বিচারের সঙ্গে প্রতারণা। মিয়ানমারের উচিত অবিলম্বে এ দুই সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়া।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) এ দুই সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর থেরেসা মে’র একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এই রায় এবং শাস্তিতে অত্যন্ত হতাশ। সাংবাদিকদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ এই রায় পর্যালোচনা করা উচিত এবং দুই সাংবাদিককে অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেওয়া হোক।’

সোমবার রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে’কে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় মিয়ানমারের একটি আদালত। ইয়াঙ্গুনের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা জজ আদালতের বিচারক ইয়ে লুইন এ রায় দেন।

রায় ঘোষণার সময় বিচারক বলেন, সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে তথ্য সংগ্রহের সময় দেশের ঔপনিবেশিক যুগের রাষ্ট্রীয় গোপন আইন লঙ্ঘন করেছিলেন। এ অপরাধে তাদের দু'জনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হলো। গ্রেফতারের দিন থেকে তাদের এ সাজা কার্যকর হবে।

রায় ঘোষণার পর মিয়ানমারে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত স্কট মার্শেল বলেন, এখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য যারা কঠোর লড়াই করে যাচ্ছে, এ রায় তাদের সবার জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে।

রায় ঘোষণার পর দুই সাংবাদিকের একজন ওয়া লোন বলেন, আমার কোনো ভয় নেই। কারণ, কোনো অপরাধ করিনি। আমি ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।

১২ ডিসেম্বর দুই পুলিশ কর্মকর্তা ওই দুই সাংবাদিককে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে তাদের হাতে কিছু কাগজপত্র তুলে দেওয়া হয়। রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়ার সময় তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ গঠন করে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, বিদেশি গণমাধ্যমকে সরবরাহ করতে এসব তথ্য অবৈধভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে দুই সাংবাদিকের আইনজীবী বলেছেন, পুলিশই তাদের ফাঁসিয়েছে। কারণ, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়টি প্রকাশ করায় কর্মকর্তারা তাদের শাস্তি দিতে চাইছেন।

যে কারণে আটক হন দুই সাংবাদিক: মিয়ানমারের রাখাইনে গণহত্যার একটি ঘটনা অনুসন্ধান করেছিলেন রয়টার্সের দুই সাংবাদিক। পরে তাদের আটক করে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। রয়টার্স দাবি করে, রাখাইনে দশ রোহিঙ্গাকে হত্যার বিষয়টি উদ্ঘাটন করেন এই দুই সাংবাদিক। সে জন্যই তাদের আশা ছিল যে দুই সাংবাদিকের তৎপরতা জনস্বার্থ হিসেবেই বিবেচিত হবে। রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক স্টিফেন জে অ্যাডলার বলেন, আমরা অনুসন্ধানী রিপোর্টটি প্রকাশ করেছিলাম, কারণ, এটি নিয়ে বিশ্বব্যাপী আগ্রহ ছিল।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে যা ছিল: উত্তর রাখাইনের ইনদিন গ্রামে সেনাবাহিনী ও কিছু গ্রামবাসী মিলে সারিবদ্ধভাবে একদল রোহিঙ্গাকে বসিয়ে গুলি করে হত্যা করেছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর। ওই ঘটনাই উঠে এসেছিল রয়টার্সের প্রতিবেদনে, যার তথ্য-উপাত্ত ওই দুই সাংবাদিকই সংগ্রহ করেছিলেন। রয়টার্স দাবি করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের এটিই প্রথম কোনো প্রমাণ।

 

(জাস্ট নিউজ/জিএ/১৩৫০ঘ)