ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পবিত্র লাইলাতুল কদর পালিত

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পবিত্র লাইলাতুল কদর পালিত

যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা এবং ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশের মধ্য দিয়ে সারাদেশে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র লাইলাতুল কদর। ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ পবিত্র এই রজনী অতিবাহিত করেছেন। মসজিদে মসজিদে নফল নামাজ, জিকির, কোরআন তেলায়তসহ অন্যান্য ইবাদতে মশগুল ছিলেন মুসল্লিরা।

শবে কদর বা লায়লাতুল কদরকে বলা হয় হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। অর্থাৎ এই রাতে ইবাদত করলে হাজার মাসের চেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবে কদর হলেও ২৭ রমজানের রজনীকেই পবিত্র রজনী হিসেবে ধরা হয়।

এ উপলক্ষে শনিবার দিবাগত রাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে নানা আয়োজন করা হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জানান, যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে শনিবার দিবাগত রাতে সারাদেশে পবিত্র লাইলাতুল কদর উদযাপিত হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ উপলক্ষে বাদ যোহর বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে ওয়াজ পেশ করেন মিরপুর বায়তুল মামুর জামে মসজিদের খতিব ড. মুফতি আবদুল মুকিত আযহারী।

রাতেও জাতীয় মসজিদে নফল ইবাদত করার জন্য ভিড় জমান মগানগরীর বিভিন্ন প্রান্তের মুসল্লিগণ। বাদ ইশা ও তারাবী নামাজ শেষে নফল ইবাদতে শামিল হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় রাজধানীর অন্যান্য মসজিদেও মুসল্লিরা ইবাদতের জন্য এসেছেন।

পবিত্র রজনীতে মুসল্লিগণের সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে নফল ইবাদতের জন্য বায়তুল মোকাররম ও এর আশেপাশে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, বায়তুল মোকাররম ও আশেপাশের এলাকায় মুসল্লীদের জন্য টুপি, আতর-সুরমা, জায়নামাজ বিক্রিও বেশ জমে উঠে দিন থেকেই।

শবে কদরের তাৎপর্য
রমজানের শেষ দশকের যেকোনো বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর হতে পারে। তবে হাদিস শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী ২৬ রমজান দিবাগত রাতটি পবিত্র লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। মহিমান্বিত এ রাতের ফজিলতের সঙ্গে অন্য কোনো রাতের তুলনা হয় না। লাইলাতুল কদর বা শবে কদর অর্থ সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ রাত। বছরের যে কটি দিন ও রাত বিশেষভাবে মহিমান্বিত, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ও ফজিলতপূর্ণ এই শবে কদর। পবিত্র রমজানের এ রাতে লাওহে মাহফুজ থেকে নিম্ন আকাশে মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ হয়। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে রমজান যেমন বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত, তেমনি কোরআন নাজিলের কারণেই শবে কদর অতি ফজিলত ও তাৎপর্য বহন করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তুমি জান লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন।’

অসংখ্য হাদিসে শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরে ঈমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের আশায় ইবাদত করে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরো রমজান, বিশেষত রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের অন্বেষায় ব্যাকুল হয়ে ওঠতেন। পরিবার-পরিজন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলতেন।

লাইলাতুল কদর উম্মতে মোহাম্মদির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আর কোনো নবীর উম্মতকে এ ধরনের ফজিলতপূর্ণ রাত বা দিন দান করা হয়নি। আগের যুগের উম্মতেরা অনেক আয়ু পেতেন। সে জন্য তারা অনেকদিন ইবাদত করারও সুযোগ পেতেন। সে তুলনায় উম্মতে মোহাম্মদীর আয়ু নিতান্তই কম। এজন্য আল্লাহতায়ালা তার বিশেষ দয়ায় মহানবীর (সা.) উম্মতকে মহিমান্বিত এ রাত দান করেছেন। যারা এ রাতে ইবাদত করে কাটাবেন তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। এ রাতে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, দান-সদকা সবই এ রাতে করা যায়। আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে যেকোনো ইবাদত করলে অভাবনীয় প্রতিদান পাওয়া যাবে।

এমজে/