সালাম সমাজে শান্তি বয়ে আনে

সালাম সমাজে শান্তি বয়ে আনে

মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বাস করে। প্রত্যেক সমাজ, জাতি ও সভ্যতার রীতিনীতি দেখে তার বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করা যায়, যেমন—ইসলামী সম্ভাষণ : ‘আস-সালামু আলাইকুম’, একটি দোয়া, একটি শান্তি প্রস্তাব এবং প্রীতিময় উজ্জ্বলতার প্রমাণ। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাস করল কোন ইসলাম (ইসলামের কোন কাজ) উত্তম? তিনি বলেন, ‘(অভুক্তকে) খাদ্য দান করা এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ইসলামপূর্ব যুগেও আরবদের মধ্যে নানা সম্ভাষণরীতি প্রচলিত ছিল। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা জাহিলি যুগে সাক্ষাতে বলতাম ‘আল্লাহ তোমার চোখ শীতল করুন’, ‘প্রাতঃকাল আনন্দময় হোক’। কিন্তু ইসলাম আসার পর আমাদের এরূপ করতে নিষেধ করা হয়।’ (আবু দাউদ) বর্তমান সমাজেও দেখা যায়, সাক্ষাতে অনেকে ‘হাই-হ্যালো’ আর বিদায় কালে ‘টা-টা’ বলে থাকেন। আমেরিকা, ইউরোপ তথা পাশ্চাত্য সভ্যতায় সকালে ‘গুড মর্নিং’ (সুপ্রভাত), সন্ধ্যায় ‘গুড ইভিনিং’ (শুভ সন্ধ্যা), রাতে বিদায়কালে ‘গুড নাইট’, অন্য সময় বিদায়কালে ‘গুড বাই’ বলা হয়। তেমনি হিন্দু সংস্কৃতিতে বলা হয় ‘নমস্কার’, ‘নমস্তে’, ‘প্রণাম’ ইত্যাদি।

মুসলিম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ হলো ‘সালাম’। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবীদের উদ্দেশে সালাম দিয়েছেন। আর ফেরেশতারা এ আমল অব্যাহত রেখে আল্লাহর আদেশে ইবরাহিম (আ.)-কে সালাম দিয়েছেন। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘তারা (ফেরেশতারা) তার [ইবরাহিম (আ.)] কাছে এসে বলল, সালাম।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৫২)

অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ বেহেশতবাসীদের সালামের মতো বরকতময় সম্ভাষণে স্বাগত জানাবেন মর্মে আল-কোরআনেই আছে—‘তোমরা প্রশান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৪৬)

সালাম বিনিময়ে পারস্পরিক হৃদ্যতা বৃদ্ধি পায়। এ জন্যই প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কথা বলব না, যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে? (আর তা হলো) তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন করবে।’ (মুসলিম)

এ জন্যই হাদিসে আছে, ‘কম বয়সী বয়োজ্যেষ্ঠকে, পথ অতিক্রমকারী উপবিষ্টকে এবং কমসংখ্যক অধিকসংখ্যককে সালাম করবে।’ (বুখারি)

এমনিভাবে হাদিসে আছে, আরোহী ব্যক্তি পথচারীকে সালাম দেবে। মূল উদ্দেশ্য হলো, সালাম প্রচলনের মাধ্যমে আন্তরিকতা বাড়ানো এবং ব্যবধান ঘোচানো। তাই সালাম দেওয়া সুন্নত, জবাব দেওয়া ওয়াজিব।

জানা দরকার যে সালাম দেওয়ায় যেমন কার্পণ্য করা উচিত নয়, তেমনি তা হওয়া চাই সঠিক উচ্চারণে এবং যথা সময়ে। কেননা নামাজরত, পানাহাররত, কোরআন পাঠরত ইত্যাদি প্রায় ২০-২১ অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ।

সালামের বাক্য হতে হবে শুদ্ধ। অনেক জ্ঞানীগুণী-দায়িত্বশীল মানুষও থাকেন এ ব্যাপারে অজ্ঞ ও উদাসীন। কেননা সালাম একটি অর্থপূর্ণ সম্ভাষণ ও দোয়া। আর বিকৃত উচ্চারণে অর্থের পরিবর্তন হলে সালামের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইহুদিরা যখন তোমাদের সালাম দেয়, তখন বলে ‘আসসামু-আলাইকুম’ অর্থাৎ তোমার মৃত্যু হোক। জবাবে তুমি বলবে ‘ওয়া-আলাইকা—অর্থাৎ তোমারই।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মুসলিম ও অমুসলিমের উপস্থিতিতে বলতে হয়, ‘আস-সালামু আলা মান ইত্তাবাল হুদা’। সালামের সঙ্গে হাত ওঠানো বা আঙুলের ইশারা করা ইসলামী রীতি নয়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা ইহুদি-খ্রিস্টানদের সাদৃশ্য গ্রহণ কোরো না। ইহুদিদের সালাম হলো আঙুলের ইশারায় আর খ্রিস্টানদের সালাম হলো হাতের তালুর ইশারায়।’ (তিরমিজি)

বস্তুত সালামের উদ্দেশ্য আন্তরিকতা ও সম্মান। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তোমাদের সালাম করা হয় তখন তোমরাও জবাব দেবে তার চেয়েও উত্তমরূপে। অথবা তারই মতো ফিরিয়ে বলবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৮৬)

মহান আল্লাহ আমাদের উত্তম পদ্ধতিতে সালাম দেওয়ার তাওফিক দান করুন।

এমজে/