মহানবীর অনন্য মর্যাদা

মহানবীর অনন্য মর্যাদা

এ পৃথিবীতে যত নবী-রাসূল এসেছেন, তন্মধ্যে আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-ই সবার সেরা। তাঁর সম্মান ও মর্যাদা বর্ণনা করতে গিয়ে স্বয়ং আল্লøাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আপনি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী’ (সূরা কলম-৪)। শুধু মুসলিম নয়, অমুসলিমরাও তাঁকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী মনে করত। বিশ্বাস করত তাঁকে সত্যবাদী ও আমানতদার হিসেবে। ডাকত তাঁকে আল-আমিন (বিশ্বস্ত) বলে। তাঁর আগমনে জগত হয়েছে আলোকিত । পথ পেয়েছে বহু পথভোলা মানুষ।

তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ মানবজাতিকে দিয়েছে মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই তাঁর কাছে পেয়েছে তাদের আশার বাণী।

আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সারা বিশ্বের জন্য রহমতের প্রতীক হিসেবে পাঠিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছেÑ ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি’ (সূরা আম্বিয়া-১০৭)।

একমাত্র তাঁকেই অনন্য পাঁচটি বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে, যা আর কাউকে দেয়া হয়নি। প্রিয় নবী সা: বলেন, ‘আমাকে পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আমার আগে কোনো নবীকে দান করা হয়নিÑ

১. আমাকে সাহায্য করা হয়েছে শত্রুর অন্তরে ভয়ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে।

২. সমগ্র ভূপৃষ্ঠ আমার জন্য সালাত আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম বানানো হয়েছেন।
কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ যেখানে সালাতের ওয়াক্ত হয় (সেখানেই) যেন সালাত আদায় করে নেয়।

৩. আমার জন্য গণিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) হালাল করা হয়েছে।

৪. অন্যান্য নবী নিজেদের বিশেষ গোত্রের প্রতি প্রেরিত হতেন আর আমাকে সব মানবের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে।

৫. আমাকে সর্বজনীন সুপারিশের অধিকার দেয়া হয়েছে’(সহিহ বুখারি-৪৩৮)।

হাশরের ময়দানে রাসূল সা: মর্যাদার যে সুমহান স্থান লাভ করবেন তার নাম মাকামে মাহমুদ (যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি সুপারিশ করবেন)। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ুন! এটি আপনার জন্য অতিরিক্ত। আশা করা যায়, আপনার পালনকর্তা আপনাকে অধিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদে’ (সূরা বনি ইসরাইল-৭৯)।

সে দিন তাঁকে হাউজে কাওসারের সার্বিক অধিকারও দেয়া হবে। প্রিয়নবী সা: একদিন সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কি জানো কাওসার কী?

সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তখন রাসূল সা: বললেন, ‘তা এমন একটি পানির ঝরনা, যা আমার রব জান্নাতে সৃষ্টি করে রেখেছেন। তাতে অসংখ্য কল্যাণ রয়েছে। আমার উম্মত কিয়ামতের দিন সেখানে উপস্থিত হবে। এর পানপাত্রের সংখ্যা হবে (আকাশের) তারকার সমপরিমাণ’ (সুনানে আবু দাউদ-৪৭৪৭)।

রাসূল সা:-এর সুউচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে আল্লøাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘আমি আপনার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি’ (সূরা ইনশিরাহ-৪)।

রাসূলুল্লøাহ সা: বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি আদম-সন্তানদের নেতা হবো, এতে আমার কোনো অহঙ্কার নেই।

হামদের (প্রশংসার) পতাকা আমার হাতেই থাকবে, এতেও কোনো গর্ব নেই। সে দিন সব নবী-রাসূল আমার পতাকাতলে থাকবেন। সর্বপ্রথম আমার জন্য মাটিকে বিদীর্ণ করা হবে, এতেও কোনো অহঙ্কার নেই’ (তিরমিজি-৩৬১৫)। আল্লাহ আমাদের এ মহামানবের ইজ্জত রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, কুমিল্লøা।