ইসলামে সময়ের গুরুত্ব

ইসলামে সময়ের গুরুত্ব

মানবজাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে সময়। মানবজীবনে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। সময়ের গুরুত্ব বোঝাতে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বয়ান পেশ করেছেন। একাধিক স্থানে তিনি রাত-দিন, দিন-রাতের কসম করেছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘শপথ রাতের যখন তা আচ্ছন্ন করে। শপথ দিনের যখন তা উদ্ভাসিত করে’ (সূরা লাইল: ১-২)। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘শপথ ফজরের, শপথ ১০ রাতের’ (সূরা ফাজর: ১-২)।

ইসলামের সব কর্মপদ্ধতিতে সময়ের মূল্য লক্ষণীয় পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তার কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিলে পৃথিবীর কোনো জীবজন্তুই তাকে রেহাই দিতেন না কিন্তু তিনি নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত তাদের অবকাশ দিয়ে থাকেন তারপর তাদের সময় পূর্ণ হলে তারা জানতে পারবে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি সম্যকদ্রষ্টা’ (সূরা ফাতির-৪৫)। জীবনে সফলতা, নিজেদের লক্ষ্যপানে পৌঁছতে এবং পরকালে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর বিকল্প নেই। লক্ষ্যহীন মানুষ সময় অপচয় করে। যাদের জীবনের লক্ষ্য আছে তারা সময়কে কাজে লাগায়। মানব জীবনের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সময়। তাই সময়ের যথাযথ মূল্যায়ন করা প্রতিটি মানুষের ওপর অপরিহার্য। যেমন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন- ‘মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু তারা নয় যারা বিশ্বাস করে, সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য ধারণ করে ধৈর্য ধারণে সহায়তা করে’ (সূরা আছর : ১-৩)। ইসলামে সময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। সময় ও জীবন এ দু’টি মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক বিশেষ নিয়ামত। সময়ের সমষ্টিই জীবন। বুদ্ধিমানের কাজ সময়কে কাজে লাগানো রাসূল সা:-কে প্রশ্ন করা হলো- হে আল্লাহর রাসূল! সৌভাগ্যবান কারা? জবাবে তিনি বললেন, ‘সৌভাগ্যবান তো তারাই যারা দীর্ঘায়ু লাভ করেছে এবং নেক আমলে তার সময় অতিবাহিত করেছে।’ আবার জিজ্ঞেস করা হলো- তাহলে দুর্ভাগ্যবান কারা? জবাবে রাসূল সা: বলেন, ‘যারা অতিবাহিত করেছে অনর্থক সময় তারা।

অপচয়ের ব্যাপারে ইসলাম কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পবিত্র কুরআনে সময়ের অপচয় ও অনর্থক কাজে সময় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন ওই সূরা মুমিনে ইরশাদ হয়েছে- আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তারা কি ধারণা করে নিয়েছে তাদের অনর্থক সৃষ্টি করা হয়েছে, তাদেরকে আমার দিকে ফিরে আসতে হবে না?’ অন্যত্র আরো বলা হয়েছে- ‘যখনই অবসর পাও ইবাদতের কঠোর শ্রমে লেগে যাও এবং সে রবের প্রতি মনোযোগ দাও’ (সূরা ইনশিরাহ : ৭-৮) রাসূল সা:- সময়কে কেমন মূল্য দিতেন তা তার ইবাদত ও আমল থেকে বোঝা যায়।

ইসলামে সময়ের গুরুত্ব অধিক। কারণ ইসলাম প্রতিটি কাজের জন্যই রয়েছে নির্ধারিত সময়সীমা। যেমন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই নামাজ মুসলমানদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফরজ করা হয়েছে’ (সূরা নিসা-১০৩)। পৃথিবীতে যারা সময়কে যত বেশি মূল্যায়ন করেছেন তারা তত বড় হয়েছেন। পৃথিবীর কোনো শক্তিই সময় ও নদীর স্রোতকে রোধ করতে পারে না। সময়ও নদীর স্রোতের মতোই প্রবহমান। পৃথিবীতে যারা অহেতুক সময় নষ্ট করে তারা কাল হাশরে এর জন্য কঠিন আফসোস করবে যেমন- ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে রাসূল যদি তুমি দেখতে অপরাধীরা যখন তাদের প্রতিপালকের সামনে মাথা নত করে বলবে হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শুনলাম এখন তুমি আমাদের পুনরায় পৃথিবীতে প্রেরণ করো আমরা সৎ কাজ করব নিশ্চয়ই আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী’ (সূরা সাজদাহ-১২)।

সময়ের অপচয় জীবনে ব্যর্থতা ডেকে আনে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে তার বিপরীত পাঁচটি জিনিসের পূর্বে মূল্যায়ন করবে ও সদ্ব্যবহার করবে। প্রথমত তোমার যৌবনকে বার্ধক্যে আসার আগে, সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে, সচ্ছলতাকে দরিদ্রতার আগে, অবসরকে ব্যস্ততার আগে এবং জীবনকে মৃত্যুর আগে’ (বায়হাকি-১০২৪৮)।

সময়ের প্রতি গুরুত্বহীন ব্যক্তি কালের গহ্বরে হারিয়ে যায়। আমাদের যাপিত জীবন থেকে রুটিন মতো প্রতিদিন ৮৬ হাজার ৪০০ সেকেন্ড অতিবাহিত হচ্ছে অথচ আমরা বড়ই অমনোযোগী জাতি। পৃথিবীতে যারা সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগায় না তারাই দোষ ত্রুটি ঢাকতে সময়কে দোষারোপ করে। অথচ রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা যুগকে গালি দিও না কারণ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন যুগস্রষ্টা’ (সহিহ মুসলিম-১২৪৬)।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেককে সময় সচেতন ও সময়কে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। আমীন।