তারাবির নামাজের জন্য ঈমাম টাকা চাইতে পারেন কি না?

তারাবির নামাজের জন্য ঈমাম টাকা চাইতে পারেন কি না?

ঢাকা, ১৯ মে (জাস্ট নিউজ) : নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দ‍র্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

রমজানের বিশেষ আপনার জিজ্ঞাসার সপ্তম পর্বে, তারাবির নামাজ পড়িয়ে ঈমাম সাহেব টাকা চাইলে তা ঠিক হবে কি না সে সম্পর্কে সুনামগঞ্জ থেকে টেলিফোনে জানতে চেয়েছেন মুহিবুর রহমান। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।

প্রশ্ন : আমরা মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করি। যে মসজিদে আমরা তারাবি পড়ি, সেখানে তারাবির জন্য কোনো ইমাম নেই। এখন মসজিদের ইমাম সাহেব নামাজ পড়ানোর পরে বলেন, তারাবি পড়ানোর জন্য তাকে টাকা দিতে হবে। কিন্তু ইমাম সাহেব তো বেতন পান। বেতনের পরও যদি ইমাম সাহেব আবার টাকা চান মুসল্লিদের কাছে, সেটা কি ঠিক হবে?

উত্তর : ইমাম সাহেব তারাবির সালাতের জন্য বা কিয়ামু রমাদানের জন্য যদি টাকা চান এবং সেটা তিনি নিজেই যদি দাবি করে থাকেন অথবা শর্ত করে থাকেন, তাহলে একদল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, তার এ কাজটি শুদ্ধ নয় বা এভাবে টাকা নেওয়াটা বৈধ নয়, জায়েজ নয়। তবে তারাবির সালাত হোক বা নফল সালাত হোক, একজন ব্যক্তি যদি পরিশ্রম করেন, সেক্ষেত্রে উচিত হবে তাকে কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করা। যারা ব্যবস্থাপনায় আছেন, তারাই এ ব্যবস্থা করবেন। এখন সাহায্য না করে যদি আপনি মনে করেন, ইমাম গোল্লায় যাক, তাতে আমার প্রয়োজন কী? তাহলে সালাতটা আদায় করবে কে? ইমামেরও তো পরিবার আছে, প্রয়োজন আছে। ইমাম সাহেব কি আপনার বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করবেন, নাকি নিজের বাসায় খাওয়া-দাওয়া করবেন? তাকে তো ভিক্ষাবৃত্তি করতে হবে। মসজিদে সালাত আদায় করার পর ইমাম সাহেব কি ভিক্ষাবৃত্তি করবেন?

আমাদের একটু বিবেক থাকা দরকার, সেটা হচ্ছে এই- ইমাম হোক বা মুয়াজ্জিন হোক, যেই হোক না কেন, তাদের বেতন এত কম যে এই বেতনে এই পৃথিবীতে থাকা প্রায় অসম্ভব। আমি এমন এক ব্যক্তিকে পেয়েছি, যিনি ৩০০ টাকা বেতনে চাকরি করছেন এবং বলেছেন যে আমি ৩৬ বছর এখানে কাজ করি। এখনো তার বেতন ৩০০ টাকা। আমরা কত জায়গায় কত টাকা অপচয় করি, কিন্তু ইমাম মুয়াজ্জিনকে টাকা দিতে কুণ্ঠিত হই। সেখানে আবার তারাবির সালাতে ইমাম সাহেব যদি টাকা চান, চাওয়াটা ইমাম সাহেবের ভুল কোনো সন্দেহ নেই। হয়তো ইমাম সাহেব বুঝতে পারেননি। কিন্তু ইমাম সাহেবকে টাকা চাইতে হলো কেন? তাকে চাইতে হওয়ার পরিবেশটা তৈরির পেছনে যারা আছেন, কোথায় তাদের ব্যবস্থাপনা? কোথায় উপলব্ধি? কোথায় ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা?

ইমাম সাহেবের টাকা চাওয়ার কারণটা এটাই, যারা ব্যবস্থাপনায় আছেন, তারা মানবিক নন, ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের দিকে তাদের দৃষ্টি তেমন স্পষ্ট নয়। একজন লোক ৩০ দিনে যদি কুরআনে কারিম খতম করেন, তাকে দিনের অনেকটা সময় এর পেছনে খাটতে হয়, এটা যথেষ্ট পরিশ্রমের কাজ। এখন সেখানে যদি তাকে কিছু সহায়তা না করা হয়, তাহলে তিনি কাজটি কীভাবে করবেন? এজন্য সেখানে বিবেকের বিষয় আছে, সেখানে যুক্তির বিষয় আছে। এগুলো সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান নিতে হবে। ইমাম সাহেব কেন চেয়েছেন, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো ইমাম সাহেবকে চাইতে হলো কেন?

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৪৪৩ঘ.)