আবুসাঈদ আনসারী
মেঘ মেঘে ছেয়ে গেছে আকাশ
মনে হচ্ছে আজ করোনাভাইরাসের ভয়ে সারা আকাশটা
পরেছে কালো একটা মাস্ক!
ব্রেন্টফোর্ডে আজ বৃষ্টি হবে খুব।
ওয়েদার ফোরকাস্টে ‘সিরির’ আওয়াজ খুব ক্ষীণ।
আজ কবিতা লেখার দিন। আজ কবিতা লেখার দিন।
গতো রাতে স্বপ্নের মধ্যে আমাকে কবিতা লেখতে দেখলাম।
অনেক বিশাল কবিতা।
স্বপ্নে মানুষ অনেক অলৌকিক, আজগুবি জিনিস পায়
আর আমার কপালে জুটলো কবিতা!
কবিতা আজ লেখেই যাবো সারা দিন।
আজ কবিতা লেখার দিন। আজ কবিতা লেখার দিন।
না দেখা যায়, না ছোঁয়া যায়, এমন ভাইরাসের তান্ডবে
সময়টা এলোমেলো। টালমাটাল পৃথিবী।
বন্দী জীবন যেনো শেষ হয় না...
বসে থাকবো না আজ কবিতাবিহীন।
আজ কবিতা লেখার দিন। আজ কবিতা লেখার দিন।
কিওয়ার্কার হলে শুধু আপনি বাইরে যাবেন।
কারো লাশ দাফন করতে আপনি বাইরে যাবেন।
খবর প্রচার করতে আপনি বাইরে যাবেন।
তা না হলে আপনি ঘরেই থাকুন। নিরাপদে থাকুন।
বৈষম্য মেনে চলি তবু। বসে বসেই কেটে যাক দিন।
আজ কবিতা লেখার দিন। আজ কবিতা লেখার দিন।
পৃথিবীটা আজ এ রকম হলো কেনো?
নিত্য দিনের কোলাহল কেনো বন্ধ?
আবার কখন আমার ছোট্ট মেয়ে হাত ধরে যাবে স্কুলে?
জিরোজালেমের পথে কবে রওয়ানা দেবো কাফেলা নিয়ে?
কেবল ঈশ্বরের কাছে রেখে দেই সেই প্রশ্নগুলো এই দিন।
আজ কবিতা লেখার দিন। আজ কবিতা লেখার দিন।
যাওয়া হয়নি টেমসের পাড়ে বহু দিন।
পাখিগুলোর আওয়াজ আসছে অনবরত।
‘নুসাইবাহ’ তাদের পাউরুটি খাওয়ায় না কতো দিন হলো?
ভাইরাস শুধু মানুষকেই চিনলো?
পশুরা আজ কতো স্বাধীন।
আজ কবিতা লেখার দিন। আজ কবিতা লেখার দিন।
আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় সবই স্বাভাবিক।
ভাবি বৃষ্টি আসলে এইতো মহামারী যাবে ধুয়ে মুছে!
আবার রংধনু উঠবে আকাশ ঘিরে।
টেলিভিশনের থাকবে না আজ মৃত্যুর কোনো খবর।
ভাইরাস মুক্ত এসে গেলো যেনো নতুন দিন।
আজ কবিতা লেখার দিন। আজ কবিতা লেখার দিন।
সপ্নে পাওয়া কবিতাটাই লেখবো। কলম কাগজ না পেলে
মোবাইলের ‘নোটে’ তবু লেখবো।
এই ভয়ানক সময়ে কবিতাই হবে আমার বাঁচার অবলম্বন।
কবিতা আমার সময় আর যৌবন রাখবে ধরে।
ভাইরাস শেষ করুক অর্গান। কবিতা চলবে তবু বিরামহীন।
আজ কবিতা লেখার দিন। আজ কবিতা লেখার দিন।
আজকের কবিতা অন্য দিনের মতো নয়।
ভাইরাসের তান্ডব থামুক বা না থামুক।কবিতা চলবে।
ফেইসবুকের নিউজফিডে আর কিছু থাকুক বা না থাকুক
কবিতা থাকবে। লকডাউনের সময় কেউ না বেরুলেও,
কবিতা বেরুবে। নিরিবিলি বেরুবে। হোক না সে রাত অথবা দিন।
আজ কবিতা লেখার দিন। আজ কবিতা লেখার দিন।
কোনো কোনো শহরে রাতে কার্ফু, রেস্টুরেন্ট আর পাবগুলো
বন্ধ। কেউ কেউ বলছেন, রাতে ভাইরাস শহর দেখতে বের হয়
তাই রাতে আপনি বেরুবেন না। কোনো কোনো কবিতা
দেখলে মনে হয় তা রাতে লেখা হয়েছে। দিনের আলোয় লেখা
কবিতার মোটা শরীরটা বদলে হতো ক্ষীণ!
আজ কবিতা লেখার দিন। আজ কবিতা লেখার দিন।
‘ওগো, আজ তোরা যাস না ঘরের বাহিরে’ রবীন্দ্রনাথ থাকলে
আজও তিনি বলতেন সেটাই।
তবে ‘স্যোশাল ডিসটেনসিংকে’ কি উপমায় আনতেন,
আমার নেই জানা ।
পাখিদের কোনো স্যোশাল ডিসটেনসিং নেই। তাই সব
একসাথে উড়ছে আকাশে। পশু পাখিদের জন্য এ ভাইরাসের
দয়া প্রশংসনীয়! শোধ করার মতো নয় এ ঋন।
আজ কবিতা লেখার দিন। আজ কবিতা লেখার দিন।
মন ভালো না থাকলে আরো বেশি কবিতা আসে।
কিন্তু শরীর ভালো না থাকলে কবিতারা খিন্ন হয়ে যায়।
তারপরও কবিতা লেখা চলবে। স্বপ্নে পাওয়া কবিতা।
এ কবিতা দীর্ঘ হবে ভাইরাসের সফরের মতো।
কবি পার্সি বিশি শেলির মতো ঠিক করবেন না সফরের দিন।
আজ কবিতা লেখার দিন। আজ কবিতা লেখার দিন।
পৃথিবীর ক্ষমতাধর মানুষও আজ আক্রান্ত। ক্ষীন এই
জিনিসের কাছে পরাজিত সবাই অথচ নিউক্লিয়ার দিয়ে
আবার নাগাসাকিকে উড়িয়ে দেবার স্বপ্ন দেখি।
কেউ কেউ বলে, ‘আমরা ভাইরাস থেকে শক্তিশালী!’
অথচ তারা ভয়ে আড়ষ্ট, যেনো ‘জুমে’ আসলে হবে তারা বিলীন।
আজ কবিতা লেখার দিন। আজ কবিতা লেখার দিন।
স্বপ্নে পাওয়া কবিতাটি লেখে যাবো আজ। থামবো না।
কোথাও কোথাও গনকবর হচ্ছে। চেনা জানা অনেক মানুষ
হারিয়ে গেলো নিমিষেই। তবু ভাবি এই ঝড় থেমে যাবে।
কোনো এক ল্যাব থেকে বেরিয়ে যাবে একদা এক ভ্যাকসিন।
আজ কবিতা লেখার দিন। আজ কবিতা লেখার দিন।
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০, লন্ডন, ইংল্যান্ড