লন্ডনের সমাবেশে তারেক রহমান

কোনো স্বৈরাচার টিকেনি, হাসিনাও পারবেনা

কোনো স্বৈরাচার টিকেনি, হাসিনাও পারবেনা

বিশেষ সংবাদদাতা

অত্যাচার-নির্যাতন করে বৃটিশ, পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীসহ কোনো স্বৈরাচারই বাংলাদেশের ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি উল্লেখ করে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “ধৈর্য্য ধরেন, ঐক্যবদ্ধ থাকেন, সাহস রাখেন। হাসিনা বা আওয়ামী লীগ পারবেনা। ১৮ কোটি মানুষের কাছে তারা ডাকাত, চোর, স্বৈরাচারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। শুধু দেশে নয় বিদেশেও একই পরিচিতি পেয়েছে। এরাও থাকবেনা, সময়ের ব্যাপার, এদেরকে যেতে হবে, হবেই হবে। ইনশাআল্লাহ।”

বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের হাইস্ট্রীট নর্থ এর দি রয়্যাল রেজেন্সী হোটেলে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক। সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসসহ অনেকে।

মানুষের ভালোবাসা আর সমর্থনই বিএনপির বড় অর্জন মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “ক্ষমতায় যাওয়া, সরকার গঠন একটি রাজনৈতিক দলের একটি উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের ৭০-৮০ ভাগ মানুষ বিএনপির সমর্থক। তারা ধানের শীষের সমর্থক। এটাই আমাদের অর্জন। হাজার-হাজার নেতাকর্মী যাদের মধ্যে অনেকে শহীদ হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা এটি অর্জন করেছি। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন এটিই। কাজেই আমাদের হতাশ বা মন খারাপ করার কিছু নেই, আমরা রাজনীতিবিদ, আমরা রাজনৈতিক দলের সদস্য।”

তিনি বলেন, “আমাদের নীতি-আদর্শ আজ মানুষের মধ্যে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। এটিই হচ্ছে আমাদের অর্জন। এবং এটিই যখন আমরা অর্জন করেছি তখন আজ না হয় কাল, কাল না হয় পরশু ইনশাআল্লাহ আপনারা সরকার গঠন করবেন।”

ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিদায় সময়ের ব্যাপার উল্লেখ করে মজলুম এই জননেতা বলেন, “২০০ বছর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে বৃটিশরা এই দেশে থাকতে চেয়েছিল পারে নাই। চলে আসতে হয়েছে। ২৪ বছর ধরে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশি মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন-চালিয়ে টিকে থাকতে চেয়েছিলো, পারে নাই চলে আসতে হয়েছে। ১০ বছর স্বৈরাচারি এরশাদ, অত্যাচার-নির্যাতন করে টিকে থাকতে চেয়েছিলো। পারে নাই, দেশের মানুষ তাদের বিদায় করে দিয়েছে। ইনশাআল্লাহ ধৈর্য্য ধরেন, ঐক্যবদ্ধ থাকেন, সাহস রাখেন। হাসিনা বা আওয়ামী লীগ পারবেনা। কারণ ১৮ কোটি মানুষের কাছে তারা ডাকাত, চোর, স্বৈরাচারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এটা শুধু দেশে নয় বিদেশেও একই পরিচিতি পেয়েছে। এরাও থাকবেনা, সময়ের ব্যাপার, এদেরকে যেতে হবেই হবে। হবে, ইনশাআল্লাহ।”

তারেক রহমান শহীদ জিয়ার একটি উক্তির কথা তোলে ধরে বলেন, “শহীদ জিয়া ১৯৭৮ সালে একটি কথা বলেছিলেন। একটি অনুষ্ঠানে তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আমাদের বিপদ আসবে, আমাদের বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। যেখানে বিপদ দেখবেন ভয় পেয়ে পালাবেন না। বিপদ দেখলে একেবারে বিপদের মাঝখানে ঢুকে পড়বেন। এবং একদম সেন্টারে ঢুকে পড়বেন, দেখবেন সেই বিপদ ধ্বংস হয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে আমরা তাই করতে চেষ্টা করেছিলাম। আমরা সকলেই যদি যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যেতাম স্বাধীনতা আসতো না। আমরা যুদ্ধের মাঝে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম সাহস করে। তাই আমরা স্বাধীনতাকে এনেছি ছিনিয়ে।- এটি ছিলো শহীদ জিয়ার উক্তি।”

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা শহীদ জিয়ার কর্মী। আপনাদের প্রত্যেককে এই উক্তিটি মনে রাখতে হবে। বিশেষ যেসকল নেতা-কর্মী শত অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেও দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন বিএনপির ঝান্ডাকে উঁচু করে তাদরেকেও এই কথাটি মনে রাখতে হবে।”

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ার ম্যান বলেন, “নেতৃবৃন্দ ও প্রিয় ভাই-বোনেরা। আজ আমাদের নেত্রীকে জেলে জোর করে আটকে রাখা হয়েছে। অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে। কেন? আটকে রাখা হয়েছিলো যাতে করে আমাদের নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে দিতে পারে। পেরেছেন তারা ভাঙ্গতে? পারে নাই। আজ আমাদের হাজার-হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়েছে, ঘর-বাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, কেন করেছে-মনোবল ভাঙ্গার জন্য। পেরেছিলো ভেঙ্গে দিতে পারে নাই। আপনাদের বড় শক্তি আর সাহস হলো আজ আপানাদের নেত্রী জেলের ভেতর থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কাজেই এটি আমাদের সকল নেতা-কর্মীকে মনে রাখতে হবে উনি জেলের ভেতর থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইনাশাআল্লাহ এর আগে যে রকম আমাদের নেতা-কর্মীরা, দেশের মানুষ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, স্বৈরাচারকে সরিয়ে ছিলো, ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও আমরা সেটি করতে সক্ষম হব।”

তিনি বলেন, “আমাদের পিছিয়ে থাকার কোনো কারণ নেই। অবশ্য, অবশ্যই আমরা সামনে এগিয়ে যাবো। হতাশ হবার কোনো কারণ নেই। হতাশ বলে কোনো শব্দ নেই শহীদ জিয়া দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।”

সরকারের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ থাকার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “সবচেয়ে বড় যে জিনিসটি আমাদের মনে রাখতে হবে তা হলো- এরা নিজেদের ডাকাতি, খারাপ কাজ, নিজেদের দুর্নীতি এই সকল কিছু ঢাকার জন্য তারা বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রকাশ করবে, নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করবে। চেষ্টা করবে বিভ্রান্ত করে আপনাদের দমিয়ে রাখতে।”

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, “তিনটি জিনিসকে লক্ষ্য রেখে সামনে এগিয়ে যাবেন। এক ধৈর্য্য, দুই সাহস, তিন একতা। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করবো, আমাদের হাজার-হাজার নেতা-কর্মীকে মুক্ত করবো। মুক্ত করবো গণতন্ত্রহীন বাংলাদেশকে, যে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ছিনতাই হয়ে গেছে। দেশকে আমরা মুক্ত করে আনতে পারবো।”

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে উল্লেখ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “শেখ হাসিনা বলেছেন তার বেয়াই রাজাকার হলেও ভালো রাজাকার। তবে তারেক রহমান ঘোষণা দিয়ে বলেন, রাজাকার ভালো কিংবা মন্দ হোক, সব রাজাকারকেই বিচারের আওতায় আনা হবে। আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবি করলেও এবারও অনেক চিহ্নিত রাজাকারকে দলের মনোনয়ন দিয়েছে।”

৩০ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের নামে প্রহসনের পর আওয়ামী লীগ ব্যাংক ডাকাতিতে লিপ্ত হয়েছিলো। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামে প্রহসন করে তারা রাতের অন্ধকার জনগণের ভোট ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ডাকাতদের দলে পরিণত হয়েছে। ৭৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যতবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে কখনোই তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারেনি।”

বিএনপির হতাশ হওয়ার কিছু নেই মন্তব্য করে মজলুম এই জননেতা বলেন, “দেশে ৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি। ২৯ ডিসেম্বর রাতে জনগণের ভোট ডাকাতি হয়েছে। ভোট ডাকাতরা যে ফলাফল ঘোষণা করেছে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফলাফল ঠিক উল্টোটা হতো বলে ভোটাররা বিশ্বাস করে। দেশের জনগণ বিএনপির সঙ্গে এই ভয়েই র‌্যাব-পুলিশ ও প্রশাসনের দুর্নীতিবাজদের নিয়ে আওয়ামী লীগ রাতের বেলা ভোট ডাকাতি করেছে। দিনের বেলায়ও কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটে চুরি করেছে।”

তারেক রহমান বলেন, “ভোট ডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি করে আওয়ামী লীগ আর বেশিদিন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে পারবেনা। পাকিস্তানিরাও টিকতে পারেনি। আওয়ামী লীগের দোসর স্বৈরাচারী এরশাদও টিকতে পারেনি। হাসিনাও টিকতে পারবেনা।”

তারেক রহমান বলেন, “বিএনপি বছরের পর বছর ধরে বলে আসছে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারেনা। বিএনপি বারবার বলে আসছে, আওয়ামী লীগ আইনের শাসনে বিশ্বাস করেনা, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনা, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনা। এবার এটি আবারো প্রমাণিত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের সময়টাতে যেভাবে যেভাবে গুম-খুন, অপহরণ, ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে এখনো একইরকম চিত্র। একইরকম ঘটনা ঘটছে।”

জিয়াউর রহমান দেশকে আধুনিক ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে এসেছিলেন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, “স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রায় চার বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান অপরদিকে চার বছর ক্ষমতায় ছিলেন জিয়াউর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমানের চার বছরে গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম হয়েছে, মাত্র চারটি পত্রিকা রেখে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়। মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়। দেশে দুর্নীতি লুটপাট হয়েছে। দুর্ভিক্ষ হয়েছে। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিকভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। অপরদিকে মাত্র চার বছরের শাসনামলে জিয়াউর রহমান দেশকে আধুনিক ও সমৃদ্ধির ধারায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর চেষ্টায় বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের গার্মেন্টসের যাত্রা শুরু হয়। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার তৈরী হয়।”

তিনি বলেন, “জনগণের ইচ্ছায় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে জিয়াউর রহমান দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমানের কাছে লিখিত দরখাস্ত করে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে নিজ নামে রাজনীতি করার সুযোগ নিয়েছিল।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমানের শাসনকালের তুলনামূলক আলোচনা করলে দেখা যাবে শহীদ জিয়ার সাফল্যের কাছে শেখ মুজিব ম্লান। এ কারণেই আওয়ামী লীগ শহীদ জিয়া সম্পর্কে আলোচনা করতে দিয়ে চায়না।”

শহীদ জিয়ার আদর্শকে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের নাম জড়িত। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দিকনির্দেশনাহীন স্বাধীনতাকামী বাঙালির সামনে চট্টগ্রামে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার কথা ছিল রাজনৈতিক নেতৃত্বের কিন্তু তাদের ব্যর্থতায় সেই দায়িত্বটি পালন করেন জিয়াউর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিএনপি কখনোই কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করেনি বরং সত্য ইতিহাস স্বীকার না করে আওয়ামী লীগ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে।” জিয়াউর রহমানের সাফল্যগুলো সারাদেশে তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জন্য তিনি বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান। ‌

জিএস/