টিউলিপ সিদ্দিকিকে বৃটিশ ম্যাগাজিন ‘স্পেকটেটর’

‘ট্রাম্পকে নয় মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে আন্টিকে বলুন’

‘ট্রাম্পকে নয় মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে আন্টিকে বলুন’

মুশফিকুল ফজল আনসারী, লন্ডন, ৬ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : যুক্তরাজ্যের লেবার দলীয় এমপি টিউলিপ সিদ্দিকীর ট্রাম্প বিরোধীতার কড়া সমালোচনা করেছে বৃটেনের প্রভাশালী ম্যাগাজিন স্পেকটেটর। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় মনযোগ দেবার আহবান জানিয়ে বৃটেনের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘দ্য স্পেকটেটর’ বলেছে, টিউলিপ যদি পৃথিবীর অন্যায় দূর করতে চান তাহলে ট্রাম্প বিরোধীতা না করে বাংলাদেশের দিকে মনযোগ দিতে এবং সরাসরি তার আন্টিকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কল দিতে।

শেখ রেহানার মেয়ে ও যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টাড ও কিলবার্ন আসনের এমপি টিউলিপ যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের আগে ও পরে ট্রাম্প বিদ্বেষের কারণে আলোচনা ও তুমুল বিতর্কে খানিকটা জায়গা করে নিয়েছেন যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমগুলোতে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার দাবিও জানিয়ে ছিলেন তিনি। পক্ষান্তরে তার খালা শেখ হাসিনা শাসিত বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও বিচারহীনতা, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, মানবাধিকারের চরম লংঘন এবং গুম-খুনের সংস্কৃতি পাতা জুড়ে স্থান পাচ্ছে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের চেয়ে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি কোনো অংশে কম নয়।

জাস্ট নিউজ বিডি’র বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে বৃটেনের গণমাধ্যমের অন্যতম সাপ্তাহিক ‘দ্য স্পেকটেটর’ ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধে এ বিষয়ে টিউলিপের কড়া সমালোচনা। ম্যাগাজিনটিতে দেশটির সেরা সাংবাদিক ও লেখকদের মতামত, সমালোচনা ও কার্টুন প্রকাশ করা হয়।

সম্প্রতি ডগলাস মুরের লেখা এক নিবন্ধে টিউলিপকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, ট্রাম্প আদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের মুসলিমদের উস্কানি না দিয়ে সরাসরি আন্টি (শেখ হাসিনা)কে ফোন দিন।

বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দল নিপীড়নের দুর্বিষহ চিত্রের বর্ণনা দিয়ে প্রায় দুইশ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এই ম্যাগাজিনটিতে ডগলাস লিখেছেন, গ্রিসের ক্যাম্পে আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের অনেকেই বলেছে, তারা বাংলাদেশের বিরোধীদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো, যার জন্য দেশ ছাড়তে হয়েছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তাদের জীবন হুমকির মুখে ছিলো। নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তাদের জবানিতে ফুটে উঠেছে। এই লোকগুলোর দুর্দশা প্রকৃত অর্থেই ভয়ংকর। না পারছে দেশে ফিরতে, না পারছে গ্রিস ছেড়ে ইউরোপে প্রবেশ করতে।

‘মাই পিক ফর দ্য পিয়াস পলিটিক্যাল হিপোক্রেট অব দ্য উইক অ্যাওয়ার্ড’ শিরোনামে ডগলাস মুরের লেখা নিবন্ধের চুম্বক অংশ হলো:
ধর্মীয় রাজনীতির বকধার্মিক হিসেবে এ সপ্তাহে আমি লেবার দলীয় এমপি টিউলিপকে বিজয়ী ঘোষণা করতে চাই। ট্রাম্পের সাময়িক অভিবাসন নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে তার যে অবস্থান সে জন্যই তাকে (টিউলিপ) এর যোগ্য মনে করি।

গার্ডিয়ানে সংবাদ থেকে আমরা জানলাম যে, সিদ্দিক লেবার দলের এমপিদের মধ্যে একজন যিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির ব্যাপারে ‘নিরব’ ভূমিকার পালন করছেন বলে সতর্ক করেছেন। আর এর ফলে যুক্তরাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায় নিজেদের ভোটাধিকার বঞ্চিত ও হতাশায় ভুগছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

‘এ ব্যার্থতার ধারবাহিক ফল দেখা যাবে রাজপথগুলোতে, অভিবাসন নিষেধাজ্ঞার বাস্তব বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করলে যুক্তরাজ্য দেশটির পুরো মুসলিম তরুণদের বিশ্বাস হারাতে বসবে।’

তাকে (টিউলিপ) পুরষ্কৃত করার উদ্দেশ্যে আমার মনে এ চিন্তাটা গিজ গিজ করছে। টিউলিপ সিদ্দিক কেনো এ ধরণের মন্তব্য করলেন, কারণ যুক্তরাজ্যের সীমানা রাজনীতির চাইতেও ঘনিষ্ট কিছুর সূত্রতা এ দেশে লুকিয়ে আছে। সিদ্দিক শুধু হ্যাম্পস্টাড ও কিলবার্ন এর এমপিই নন, তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে। যার সঙ্গে (টিউলিপের) বন্ধন খুবি দৃঢ়। এগুলো আন্তঃবিশ্বীয় মধুর যোগসূত্র।

সিদ্দিক কি আসলেই বিশ্বের অনিয়মগুলোতে উদ্বিগ্ন? যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর ব্যাপারে আমাদের প্রধানমন্ত্রী (তেরেসা মে) কেনো প্রতিবাদ জানাননি এ বিষয় নিয়ে আমি অধিক সময় নষ্ট করবো না, কারণ এটা দীর্ঘ মেয়াদি জটিল প্রক্রিয়া, হয়তো কোনো ফল বয়ে আনবে না।

বাংলাদেশ কয়েক দশক ধরে গোঁড়ামি নীতিতে তাদের সীমান্ত কানুন পরিচালনা করছে, এর মধ্যে একটি হলো দেশটি ইসরাইলি পাসপোর্টধারী কাউকে প্রবেশ করতে দেয় না। আপনি যদি একজন ইহুদি হন আর নিজ বাড়িতে বসবাস করেন তাহলে ছুটির সময়টুকু যদি আপনি বাংলাদেশে কাটাতে চান- আপনি চাইলেও তা পারবেন না। এখন আমিও যদি টিউলিপের মতো মানুষের যেখানে ইচ্ছা সেখানেই যাবার স্বাধীনতার চিন্তায় বিশ্বাস করি তা আরো অসুবিধারই সৃষ্টি করবে, যে নিষেধাজ্ঞা বছরের পর বছর চলে আসছে তার কাছে সাময়িক এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আসন্ন সপ্তাহগুলোতেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এ বিষয়গুলোর মতোই অন্য আরো মজার বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি যখন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ ইউরোপের অভিবাসী ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেছি। এসময় আমার প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশি এমন গ্রুপের সঙ্গে দেখা হয়েছে যারা নিজেদের বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। কেন তারা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসেছে যদিও এর সত্যতা যাচাই কাজটা অনেক কঠিন। গ্রিসের ক্যাম্পে আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের অনেকেই বলেছে, তারা বাংলাদেশের বিরোধীদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো, যার জন্য দেশ ছাড়তে হয়েছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তাদের জীবন হুমকির মুখে ছিলো। এই লোকগুলোর দুর্দশা প্রকৃত অর্থেই ভয়ংকর। না পারছে দেশে ফিরতে, না পারছে গ্রিস ছেড়ে ইউরোপে প্রবেশ করতে।

আমি যা বলছিলাম, যদি টিউলিপ পৃথিবীর অবিচার দূর করতে চান তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের মুসলিমদের আন্দোলনে নামানোর উস্কানী না দিয়ে সরাসরি আন্টিকে (শেখ হাসিনা) ফোন দিতে পারেন। এর চাইতে উত্তম তার কাছে অন্য কিছু নয়।

(জাস্ট নিউজ/জিইউএস/একে/০০৩৭ঘ)