লন্ডনে রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের জন্মবার্ষিকী পালিত

লন্ডনে রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের জন্মবার্ষিকী পালিত

তারেক রহমানের শ্বশুর ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. জোবায়দা রহমানের পিতা সাবেক মন্ত্রী রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয়েছে।

জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার যুক্তরাজ্যের ব্রিকলেন জামে মসজিদে মরহুমের পরিবার ও রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান স্মৃতি কমিটির উদ্যেগে খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন ব্রিকলেন জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা নজরুল ইসলাম।

দোয়াতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়। বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে দেশ ও জাতির সুখ, সমৃদ্বি ও শান্তির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করা হয়। করোনার মহামারী থেকে দেশ-বিদেশের সকল মানুষের সুরক্ষা এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করা হয়। সাবেক মন্ত্রী ও নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের জামাতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং কনিষ্ঠ কন্যা ডা. জোবায়দা রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করে দেশবাসীর নিকট দোয়া চাওয়া হয়।

মাহবুব আলী খাঁন স্মৃতি সংসদ যুক্তরাজ্যের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দোয়া মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি, কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য ও মাহবুব আলী খাঁন স্মৃতি সংসদের প্রধান উপদেষ্টা এম এ মালিক, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসভাপতি ও কমিউনিটি নেতা আবুল কামাল আজাদ, মাহবুব আলী খাঁন স্মৃতি সংসদ যুক্তরাজ্যের সাধারণ সম্পাদক আবেদ রাজা, সিনিয়র সহসভাপতি কামাল উদ্দিন, আমিনুর রহমান আকরাম, যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক খসরুজ্জামান খসরু, যুগ্ম সম্পাদক ডঃ মুজিবুর রহমান (দপ্তর), যুক্তরাজ্য যুবদলের সভাপতি রহিম উদ্দিন, মাহবুব আলী খাঁন স্মৃতি সংসদ যুক্তরাজ্যের যুগ্ম সম্পাদক এমাদুর রহমান এমাদ, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট দুলাল আহমেদ, হাসানুল করিম, মিনহাজ উদ্দিন লিমন প্রমুখ।

উল্লেখ্য, সাবেক নৌ বাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান (এম এ খান) ১৯৩৪ সালের ৩ নভেম্বর পূণ্যভূমি সিলেট জেলার বিরাহীমপুরের এক সম্ভ্রান্ত ও বিখ্যাত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সিলেটের বিরাহীমপুর, কলকাতা ও পুরান ঢাকার ৬৭ পুরানা পল্টন লাইনের বাড়িতে এম এ খানের শৈশব ও কৈশোর অতিবাহিত হয়। তিনি কলকাতা ও ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পড়াশোনায় তিনি ছিলেন কৃতী ছাত্র। তাঁরকলেজ জীবনের শিক্ষা ঢাকা কলেজে। তাঁর পিতা আহমেদ আলী খান প্রথম মুসলিম হিসেবেতৎকালীন ভারতে ১৯০১ সালে ব্যারিস্টার হন। তিনি নিখিল ভারত আইন পরিষদের সদস্য (এমএলএ) ও আসাম কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি তিনটি বিষয়ে এমএ ডিগ্রিও নেন। হায়দ্রাবাদ নিজামের প্রধান আইন উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।

এম এ খানের মাতা ছিলেন জুবাইদা খাতুন। অবিভক্ত বিহার, আসাম ও উড়িষ্যার জমিদার পরিবার খানবাহাদুর ওয়াসিউদ্দিন আহমেদের কন্যা। মরহুমা জুবাইদা খাতুনের দাদা ছিলেন ব্রিটিশদের থেকে ‘অর্ডার অব এমপায়ার’ (Officer of the Most Excellent Order of the British Empire -- OBE) খেতাবপ্রাপ্ত ।

এম এ খানের দাদা ছিলেন তৎকালীন ভারতের বিশিষ্ট চিকিৎসক খানবাহাদুর আজদার আলী খান। তিনি বিহার ও আসামের দারভাঙ্গা মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ও পাটনা মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করতেন। তিনি ছিলেন স্যার সৈয়দ আমীর আলীর জামাতা। স্যার সৈয়দ আমীর আলী ছিলেন ইংল্যান্ডের রয়্যাল প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য এবং ইন্ডিয়ান ভাইসরয়েজ এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য। তিনি ১৯২৪ সালে সিলেটে নাফিজাবানু চ্যারিটেবল হাসপাতাল ও ১৯৩০ সালে ম্যাটারনিটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। স্যার সৈয়দআমীর আলীর বিখ্যাত দুটি গ্রন্থ হলো ‘হিস্ট্রি অব সারাসেন’ ও ‘স্পিরিট অব ইসলাম’।

এম এ খানের দাদা খান বাহাদুর আজদার আলী খানের অপর ভাই খানবাহাদুর গজনফর আলী খান ১৮৯৭ সালে বাংলা, বিহার ও ঊড়িষ্যার প্রথম এবং সর্ব ভারতে চতুর্থ মুসলিম হিসেবে আইসিএস লাভ করেন। গজনফর আলী খান ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ রাণী থেকে অর্ডার অব এমপায়ার খেতাব পান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী ছিলেন এম এ খানের চাচাতো ভাই। সিলেট ও অবিভক্ত পাকিস্তানের মন্ত্রী মরহুম আজমল আলী চৌধুরীও তার চাচাতো ভাই।

দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে এম এ খান ছোট। সবার বড় বোন সাজেদা বেগম। মেজভাই বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. সেকেন্দার আলী খান। মরহুম ডা. সেকেন্দার আলী খানের মেয়ে আইরিন খান, যিনি মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল। এম এ খানের ফুফু মিস জিল খান ছিলেন তৎকালীন সময়ের অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট।

১৯৫৫ সালে সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের দুই কন্যা শাহিনা খান জামান (বিন্দু) এবং ডা. জোবায়দা রহমান (ঝুনু)। শাহিনা খান জামানঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়াশোনা করেন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীরঅবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমডোর সৈয়দ শফিউজ্জামান এম এ খানের জ্যেষ্ঠ জামাতা। তিনি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন। ছোটকন্যা ডা. জোবায়দা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রিলাভ করেন। আর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানতারেক রহমান তাঁর কনিষ্ঠ জামাতা। তাঁদের কন্যা ব্যারিস্টার জায়মা রহমান এম এ খানের নাতনি।

এম এ খানের ছোটকন্যা ডা. জোবায়দা রহমান যুক্তরাজ্যেও চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। লন্ডনের স্বনামধন্য লন্ডন ইমপেরিয়াল কলেজের ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের চার বছরের মাস্টার্স অব কার্ডিওলজিতে (এমএসসি ইন কার্ডিওলজি) ডিস্টিংশনসহ শতকরা ৮৩ ভাগ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। মোট চার বছরের এই কোর্সে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউই), কমনওয়েলথভুক্ত দেশ, নাইজেরিয়া ও চীনসহ মোট ৫৫টি দেশের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ডা. জোবায়দা রহমান সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন। এমএসসি কার্ডিওলজিতে ডা. জোবায়দা রহমানই বাংলাদেশি চিকিৎসক হিসেবে প্রথম হওয়ার সম্মান অর্জন করেছেন।

সততা, সাহস ও দেশপ্রেমের প্রেরণা বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খান যিনি একজন দক্ষ রাজনীতিবিদের ভূমিকাও পালন করেছেন। তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সততা ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন। যোগাযোগউপদেষ্টা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে সিলেট বিভাগে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য মরহুম মাহবুব আলী খানের রয়েছে আলাদা ইমেজ।

দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষা, সমুদ্রে জেগে ওঠা দ্বীপের দখল রক্ষা, দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ বাংলাদেশের দখলে রাখা, সমুদ্র এলাকায় জলদস্যু দমন এবং সুন্দরবন এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে নৌবাহিনীকে সচেষ্ট রাখতে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। সততা ও দেশপ্রেম ছিল তাঁর চলার পাথেয়। তিনি বিশ্বাস করতেন সততা ছাড়া দেশপ্রেম জাগ্রত হয় না । সততা নিয়ে দেশের জন্য কাজ করাকে ইবাদতের শামিল মনে করতেন তিনি।