এই ছবি কোনো নাটক অথবা ফিল্মের নয়!

এই ছবি কোনো নাটক অথবা ফিল্মের নয়! বিবিসি

মা ও মেয়ে দুজনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুটি বিছানায় পাশাপাশি অবস্হান করছেন, মায়ের মাস্ক খোলা হলেই তিনি চলে যাবেন পৃথিবীর সীমা ছেড়ে বহুদূর! জীবনের শেষ মূহুর্তে একজন আরেকজনের হাত ধরে আছেন, এই স্পর্শ শেষ স্পর্শ! কিন্তু এই স্পর্শের আবেগ শেষ হবার নয়, এই স্পর্শের বেদনা, মর্ম শুধু তাঁরাই বুঝবে যারা একে অপরের হাতকে শেষবারের জন্যে হলেও ধরে রেখেছে!

তারপর, মাস্ক খুলে ফেলা হলো, যা হবার তাই হলো, মা মারিয়া রিকোকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেললেন মেয়ে এ্যানাবেল সারমা, কি নির্মম, নিষ্ঠুর, ভয়ংকর আর অমানবিক তুমি করোনাভাইরাস! মানুষকে কতো অসহায় বানিয়ে দিলে, হায়!! মায়ের এ নির্মম অন্তিম যাত্রা ঘটেছে ১লা নভেম্বর ইংল্যান্ডের Leicster Royal Infirmary হাসপাতালে। অক্টোবরের একই দিন তারা দুজনে হাসপাতালে ভর্তি হন।

ভ্যারিয়ান্ট ভাইরাসের তান্ডবে লন্ডভন্ড বিলেত। সমস্ত দেশ জুড়ে তৃতীয় লকডাউন শুরু হলো আজ থেকে। তারপরও অনেকে আমরা সচেতন নেই, মাস্ক না পরেই এখানে সেখানে চলে যাই, অনেকে এখনো মনে করে এটা একটা conspiracy কিংবা hoax. এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন ইতোমধ্যে শুধুমাত্র ইংল্যান্ডেই। আজ ৮৩০ জন দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিলেন। যারা সরকারী নীতিমালা না মেনে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন! তাদেরকে আপনি কি বলবেন?

ঘোর অমানিশায় কাটছে বিলেতবাসীর, কবে যে তা কেটে যাবে তা রাহমানুর রাহিম আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। দ্বিতীয় বিশ্বেযুদ্ধের পর এটাই এদেশের জন্য সবচেয়ে বড়ো বিপর্যয়!

আমার মনে আছে আমার শাশুড়ী মারা যাবার সময় এক নির্মম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিলো, শুক্রবার ৪ এপ্রিল ২০২০, তিনি করোনাভাইরাসের আক্রমণে চলে যান, তখন তার হাসপাতালের বিছানায় তিনি একাই ছিলেন, কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বাসায় আমার স্ত্রী তখন অঝোর ধারায় কাঁদছিলেন, এদিকে আমিও ভাইরাসে আক্রান্ত, তাকে ভালোভাবে শান্তনা দিতে পারিনি! কমিউনিটির অনেকেই অসুস্হ, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত East London Mosque and London Muslim Centre এর ইমাম শায়খ আব্দুল কাইয়ুম ও আক্রান্ত! شفاه الله

তবে আমরা আশাবাদী, ইনশাল্লাহ এ ঘোর অমানিশা কেটে যাবে। ‘’এ আকাশ মেঘে ঢাকা রবে না, আলোয় আলোয় হেসে উঠবে। এ নদী গতিহীন হবে না, সাগরের পানে শুধু ছুটবে...।’’

হে করোনাভাইরাসের মালিক, আপনি আমাদের প্রতি দয়া করুন। এ ভাইরাসের কবল থেকে আমাদেরকে মুক্তি দিন, আমাদের দোয়া আর চোখের পানিকে কবুল করে নিন।
আমিন।

আবু সাঈদ আনসারী