কারাগারে থেকেই দুই পুরস্কার

কারাগারে থেকেই দুই পুরস্কার

ঢাকা, ১৮ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য সম্প্রতি লন্ডনের ফ্রন্টলাইন ক্লাব কর্তৃক ট্রিবিউট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। গত ৯ই অক্টোবর এ অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়। ১১ই অক্টোবর আলোকচিত্রী শহিদুলের পক্ষ থেকে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন তার ভাগ্নি সোফিয়া করিম। তার বোন ড. কাজী নাজমা করিম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এসময় শহিদুলের মুক্তির বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের কাছে আহ্বান জানান সোফিয়া করিম।

ফ্রন্টলাইন ক্লাব সবসময় স্বাধীন ও নিরাপদ সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী। এছাড়া আলোকচিত্রের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের লুসি ফাউন্ডেশন শহিদুলকে এ বছর ‘হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড’ ২০১৮-এর জন্য নির্বাচিত করেছে। আলোকচিত্রের ‘অস্কার’ বলা হয় এ পুরস্কারকে। ২৮শে অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে তার এ পুরস্কার গ্রহণ করার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশের আলোকচিত্রী, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা, দৃক গ্যালারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রতিযোগিতায় এশিয়া থেকে একমাত্র তিনিই ছিলেন জুরি বোর্ডের সভাপতি।

পারিবারিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি স্বজনরা কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। শহিদুল কারাগারে বই পড়ে সময় কাটান। কিছু দিন ধরে তার দাঁতের ব্যথা দেখা দিয়েছে। জেলখানার ভেতরে থাকা একটি সেফালি ফুলের গাছ থেকে অনেকগুলো ফুল কুড়িয়ে পলিথিনে মুড়িয়ে তা স্বজনদের শুভেচ্ছা হিসেবে দিয়েছেন তিনি। তার দেয়া সেফালি ফুলগুলো ইতিমধ্যে টুইটার ও ইন্সটাগ্রামে স্থান করে নিয়েছে। অনেকেই তার সেফালি ফুলের ছবি দিয়ে টুইট করে লিখেছেন, ‘লাভ ফ্রম আওয়ার প্রিজনার অব শহিদুল আলম’।

শহিদুল আলমের জন্ম ঢাকায় ১৯৫৫ সালে। তার বাবার নাম ডা. কাজী আবুল মনসুর এবং মায়ের নাম কাজী আনোয়ারা মনসুর। তারা দুই ভাই-বোন। নাজমা করিম ও শহিদুল আলম। তিনি রসায়ন নিয়ে লেখাপড়া করেন। পরে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জৈব রসায়নে পিএইচডি করেন। ১৯৮৯ সালে দৃক ফটো গ্যালারি প্রতিষ্ঠা করেন শহিদুল আলম। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিণ এশিয়ার ফটোগ্রাফি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠশালা। তিনি ছবি মেলারও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নেদার?ল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ডপ্রেস ফটো প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম এশীয় হিসেবে তিনি এ সম্মান অর্জন করেন। ‘যেই যুদ্ধ আমরা ভুলে গেছি।’ তার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও গণহত্যা নিয়ে সবচেয়ে সফল চিত্রপ্রদর্শনীর একটি। ১৯৮৩ সালে তিনি হার্ভে হ্যারিস ট্রফি জেতেন। ১৯৯৩ সালে তথ্যচিত্রের জন্য জিতে নেন মাদার জোন্স পদক। ‘৯৮-এ তিনি আন্দ্রে ফ্রাঙ্ক ফাউন্ডেশন ও হাওয়ার্ড চ্যাপনিক অ্যাওয়ার্ডস লাভ করেন। ২০১৪ সালে শিল্পকলা পদক ও ২০১৭ সালে চীনের ডালি ইন্টারন্যাশনাল চিত্রপ্রদর্শনীতে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।

সূত্র জানায়, ড. শহিদুলের বাবা ডা. কাজী আবুল মনসুর ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ও অণুজীব বিজ্ঞানী। তিনিই মনসুর’স ডায়েট বা ওরস্যালাইনের অন্যতম আবিষ্কারক। মনসুর’স মিডিয়া তার নামেই নামকরণ করা হয়েছে। যেটা দিয়ে ওলাওঠা বা কলেরার ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু চিহ্নিত করা যায় এবং বিশ্বব্যাপী এটা মনসুর’স মিডিয়া নামেই পরিচিত। চিকিৎসা ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের ‘সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার’ হিসেবে পরিচিত ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করা হয় তাকে। একই বছর শহিদুলের চাচাতো ভাই কাজী সালাহউদ্দীন (বর্তমানে বাফুফে সভাপতি) ক্রীড়াক্ষেত্রে স্বাধীনতা পুরস্কার পান। একই পরিবারের দুজন একই বছরে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। শহিদুলের মা ড. কাজী আনোয়ারা মনসুর ছিলেন অগ্রণী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। ছিলেন আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েরও প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন। নারী শিক্ষায় পেয়েছেন রোকেয়া পদক। ১৯৯৯ সালে তাকে রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় গুজব ছড়ানো ও উস্কানি দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। এরপর থেকে তিনি কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০১০ঘ.)