আটক সাংবাদিককে অবিলম্বে মুক্তির দাবি আরএসএফ-সিপিজের

আটক সাংবাদিককে অবিলম্বে মুক্তির দাবি আরএসএফ-সিপিজের

নির্বাচনে মিডিয়ার স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার। এ জন্য তারা নিন্দা প্রকাশ করেছে।

অন্যদিকে, সাংবাদিকদের আরেকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) খুলনায় গ্রেপ্তার করা সাংবাদিক হেদায়েত হোসেন মোল্লার অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছে। সংগঠন দুটি আলাদা আলাদা বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) লিখেছে, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে মিডিয়ার স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হওয়ার জন্য নিন্দা প্রকাশ করছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স।

বলা হয়েছে, এ সময়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে, জেলে পাঠানো হয়েছে এবং একটি টিভি নিউজ চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, নির্বাচন পরবর্তী সময়টা মিডিয়া স্বাধীনতার জন্য খুব বাজেভাবে শুরু হয়েছে। একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে পাঠানো হয়েছে রিমান্ডে। পুলিশ বলছে, তিনি মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেছেন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য।

এ ঘটনার শিকার সাংবাদিক হলেন হেদায়েত হোসেন মোল্লা। তিনি ঢাকা ট্রিবিউন নামের পত্রিকার খুলনা প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ সংগ্রহ করেন। একই সঙ্গে তিনি সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট বাংলা ট্রিবিউনেরও সাংবাদিক। তিনি ‘মিথ্যা তথ্য’ বলতে যা রিপোর্ট করেছিলেন তা হলো তার খুলনায় নিবন্ধিত ভোটারের চেয়ে ২২৪১৯ ভোট বেশি পড়েছিল।

এই অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট করেছিলেন দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার খুলনায় স্টাফ রিপোর্টার রাশিদুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। গত অক্টোবরে পাস হওয়া বহুল বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে তারা দু’জনেই এখন ১৪ বছরের জেল পেতে পারেন।

এশিয়া প্যাসিফিক ডেস্কে আরএসএফের প্রধান ডানিয়েল বাস্টার্ড বলেছেন, এই দু’জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তাদের একমাত্র অপরাধ হলো নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন, যে কাজটি যেকোনো সাংবাদিকের করা উচিত একটি কার্যকর গণতন্ত্রে। এই নির্বাচনে মিডিয়ার স্বাধীনতা বার বার যেভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে তাতে নির্বাচনী ফলের বিশ্বাসযোগ্যতাকে খর্ব করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরএসএফ আরও বলেছে, নির্বাচনের দিনে বেশ কিছু সাংবাদিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ঢাকায় একটি ভোটকেন্দ্রের ছবি তুলতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা হামলা চালায় ডেইলি স্টার পত্রিকার ফটো সাংবাদিক কাজী তাহসিন আগাজ অপূর্বর ওপর। ঢাকায় একই রকম হামলা হয় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার রিপোর্টার কাফি কামালের ওপর। তাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে।

বিখ্যাত ফটোসাংবাদিক ড. শহিদুল আলম সম্প্রতি জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি ও সাংবাদিক সুমন পাল কিছু ছবি তোলার চেষ্টা করলে হট্টগোলে আহত হয়েছেন শহিদুল আলম। সুমন পালকে বেশ কিছু ঘুষি মারা হয়েছে। দৈনিক মানবকণ্ঠের সাংবাদিক জুবায়ের রাকেশের ওপর হামলা চালায় প্রায় ২০ জন নেতা-কর্মী। তারা তার ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। হামলা হয়েছে সিভয়েস ২৪ ডট কম সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইটের রিপোর্টার আল আমিনের ওপর। তিনি চট্টগ্রামে একটি ভোটকেন্দ্রে সংবাদ সংগ্রহের চেষ্টাকালে তার ওপর হামলা চালায় প্রায় ১৫ জন নেতা-কর্মী।

নির্বাচন কমিশন থেকে এক্রিডিটেশন পাওয়া সত্ত্বেও ডেইলি স্টারের কমপক্ষে সাতজন সাংবাদিককে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয় নি পুলিশ বা ক্ষমতাসীন জোটের প্রতিনিধিরা। ক্যাবল টিভি অপারেটররা অকস্মাৎ যমুনা টিভির সিগন্যাল অফ করে দেয় ২৮শে ডিসেম্বর। এর চারদিন আগে সশস্ত্র প্রায় ৩০ জন নেতা-কর্মী এই টিভির সাংবাদিক ও এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের ওপর একটি হোটেলে হামলা চালায়।

আরএসএফের ২০১৮ সালের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম।

ওদিকে, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট বিবৃতিতে বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে খুলনার সাংবাদিক হেদায়েত হোসেন মোল্লাকে তিনদিনের রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ‘মিথ্যা তথ্য’ প্রকাশ করেছেন। এ মামলায় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সাংবাদিক রাশিদুল ইসলামকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে, তাকে গ্রেপ্তার করা হয় নি।

এ বিষয়ে সিপিজের এশিয়া প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী স্টিভেন বাটলার বলেছেন, সরকারের উচিত তার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা। মিডিয়ার স্বাধীনতাকে আক্রমণ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। এ ছাড়া নির্বাচনী খবর সংগ্রহে যাওয়া বেশ কিছু সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়েছে। তাদেরকে নির্বাচন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয় নি।

এমআই