যশোরে সন্ত্রাসী হামলায় দুই সাংবাদিক আহত

যশোরে সন্ত্রাসী হামলায় দুই সাংবাদিক আহত

যশোর, ২৪ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে যশোরের বেনাপোলে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন যশোরের দুই সংবাদকর্মী। এরা হলেন ইনডিপেনডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক প্রতিদিনের কথার ক্রাইম রিপোর্টার জিয়াউল হক এবং ইনডিপেনডেন্ট টিভির ক্যামেরাপারসন শরীফ খান।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বেনাপোল আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে একদল দুর্বৃত্ত তাদের ওপর হামলা করে। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে যে ক্লিনিকে নেয়া হয়, সেখানেও বোমা ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। জখম দুই সংবাদকর্মীই যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে শরীফের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আক্রান্ত সংবাদকর্মী জিয়া জানান, দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ পাল্টা সংঘর্ষের ঘটনা চলছে। ইনডিপেনডেন্ট টিভি এই খবর সংগ্রহের জন্য তাকে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছিল।
সেই খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা দুইজন আক্রান্ত হন।

তিনি বলেন, সকাল ১০টার দিকে বেনাপোল আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে মিছিল করছিল একদল বন্দরশ্রমিক। এসময় দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। শরীফকে আমি বোমা বিস্ফোরণের ফুটেজ নিতে বলি। শরীফ যখন ফুটেজ নিচ্ছিল, তখন তার ওপর হামলা করে শ্রমিক নামধারী সন্ত্রাসীরা। তারা রড ও লাঠি দিয়ে শরীফকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। অবস্থা বেগতিক দেখে আমি শরীফকে রক্ষা করতে যাই। তখন সন্ত্রাসীরা আমাকেও মারপিট করে। পরে এসএ টিভির বেনাপোল প্রতিনিধি সেলিমসহ আরো কয়েক সংবাদকর্মী আমাদের উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেয়। সেখান থেকে পুলিশের সহায়তায় আমাদের দুইজনকে জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আমাদের ওপর হামলার পর পরই ঘটনাস্থলে ১৫-২০টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় সন্ত্রাসীরা। এমনকি আমাদের প্রথম যে ক্লিনিকে নেওয়া হয়, সেই ভবন লক্ষ্য করেও দুটি বোমা ছোড়ে ওই দুর্বৃত্তরা। তারা তখন যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিনের নামে স্লোগান দিচ্ছিল,- বলেন আক্রান্ত সংবাদকর্মী জিয়া।

যশোরের সংবাদকর্মী জিয়া ও শরীফের ওপর হামলার ঘটনায় বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান বলেন, যারা ওই দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা করেছে, তাদের খুঁজে গ্রেপ্তার করা হবে। বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. এন কে আলম খান বলেন, আক্রান্ত দুই সংবাদকর্মীর মধ্যে শরীফের শরীরে আঘাতের চিহ্ন অনেক বেশি। তাকে কয়েকদিন অবজারভেশনে রাখতে হবে। এর আগে কিছু বলা যাবে না।

জিয়াউল হক যশোর থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘প্রতিদিনের কথা’ পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এই পত্রিকাটি প্রকাশ করেছেন বেনাপোল পৌরসভার মেয়র ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন। তার সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে যশোর-১ (শার্শা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিনের। আজ দুই সংবাদকর্মীর ওপর হামলায় অভিযুক্তরা সংসদ সদস্যের অনুসারী শ্রমিক বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

প্রতিদিনের কথার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল বলেন, হামলাকারীরা স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিনের নামে স্লোগান দেয় বলে আমাকে জানিয়েছে জিয়া। ঘটনার সময় তারা ইনডিপেনডেন্ট টিভির ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। ফলে সন্ত্রাসী তৎপরতা ও সংবাদকর্মীর ওপর হামলার ফুটেজও নষ্ট হয়ে গেছে। তবে বিকল্প পন্থায় ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এদিকে, দুই সংবাদকর্মীর ওপর শাসক দল আশ্রিত সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে মিছিল করেছেন যশোরের সাংবাদিকরা। বুধবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে একই স্থানে এসে শেষ হয়।

মিছিল শেষে প্রেসক্লাবের গেটে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তৃতা করেন ক্লাবের সেক্রেটারি এসএম তৌহিদুর রহমান, সহসভাপতি মনোতোষ বসু, প্রতিদিনের কথার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, ফখরে আলম, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদ রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলন, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।

তারা সংবাদকর্মীদের ওপর হামলাকারী দুর্বৃত্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। না হলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

(জাস্ট নিউজ/একে/২৩৪৩ঘ.)