সিপিজের রিপোর্ট

বিশ্বজুড়ে আড়াইশ সাংবাদিক জেলে, শীর্ষে চীন

বিশ্বজুড়ে আড়াইশ সাংবাদিক জেলে, শীর্ষে চীন

বিশ্বজুড়ে এ বছর কমপক্ষে ২৫০ জন সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে চীনে। নিরপেক্ষ সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে কর্তৃত্বপরায়ণ শাসকগোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান দমনপীড়নের ফলে এসব ঘটছে বলে বুধবার প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, যাদেরকে জেলে পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী অথবা ভুয়া খবর প্রকাশের অভিযোগ আনা হয়েছে। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের জেলে পাঠানো হয়েছে তুরস্ক, সৌদি আরব, মিশর, ইরিত্রিয়া, ভিয়েতনাম ও ইরানে।

স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম বিষয়ক এই পর্যবেক্ষক সংগঠন বলছে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মিডিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ কড়াকড়ি করেছেন। এ কারণে এ বছর সেখানে কমপক্ষে ৪৮ জন সাংবাদিককে জেলে পাঠানো হয়েছে। ২০১৮ সালের তুলনায় এ সংখ্যা এক বেশি।

এর ফলে সাংবাদিকদের জেলে পাঠানোর ক্ষেত্রে এক নম্বর দেশ হয়ে উঠেছে চীন।

এর পরেই রয়েছে তুরস্ক। সেখানে এ বছর জেলে পাঠানো হয়েছে ৪৭ জন সাংবাদিককে। তুরস্কে গত বছর জেলে পাঠানো হয়েছিল ৬৮ জন সাংবাদিককে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেখানকার অবস্থার বাস্তব কোনো উন্নতি হয়নি। স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম ও সমালোচনাকে রুদ্ধ করতে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগানের সরকার।

সিপিজে বলেছে, তুরস্ক সরকার শতাধিক নিউজ আউটলেট বন্ধ করে দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেক স্টাফের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছে। ফলে বহু সাংবাদিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অন্যদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে।

সিপিজের ভাষায়, তুরস্কে জেলে নেই এমন অনেক সাংবাদিক এখন বিচারের মুখোমুখি। তাদেরকে জেলে ভরা হতে পারে। অন্যদের অনুপস্থিতিতে বিচার করা হয়েছে। জেল দেয়া হয়েছে তাদের। দেশে ফিরলেই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে।

রিপোর্টে সিপিজে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ববাদ, অস্থিতিশীলতা এবং বিক্ষোভের কারণে সাংবাদিকদের জেলে যাওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে মিশরের সঙ্গে রয়েছে সৌদি আরবের নাম। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের জেল দেয়ার ক্ষেত্রে সৌদি আরব ও মিশর একই অবস্থানে রয়েছে। সারা বিশ্বে তারা এক্ষেত্রে তৃতীয়। প্রতিটি দেশে ২৬ জন করে সাংবাদিককে জেল দেয়া হয়েছে। সৌদি আরবে ১৮ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রকাশ করা হয় নি। তবে তারা এখনো জেলে রয়েছেন। চারজন সাংবাদিকসহ রাজনৈতিক বন্দিদের প্রহার, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া এবং অনাহারে রাখার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিপিজে।

ওদিকে সেপ্টেম্বরে মিশরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রতিবাদ হয়। তার আগেই বেশ কিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বিক্ষোভ থেকে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির পদত্যাগ দাবি করা হয়েছিল।

সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক কর্মীরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে এ বছর মোট আড়াইশ সাংবাদিককে জেল দেয়া হয়েছে। এ সংখ্যা এখনও উদ্বেগজনক অবস্থায়, যদিও ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৫৫ এবং ২০১৬ সালে রেকর্ড সংখ্যক ২৭৩ ছিল। সিপিজে তার রিপোর্টে বলেছে, দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিকদের জেলে নেয়া উচিত নয় বলে বিশ্বাস করে সিপিজে। এতে চীনের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সোফিয়া হুয়াং সুইকিনের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। তিনি হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের বিক্ষোভের বিষয়ে রিপোর্ট করেছিলেন। এ জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অক্টোবরে।

সিপিজে তার রিপোর্টে মিশরের অর্থনৈতিক রিপোর্টার মোহাম্মদ মোসায়েদের প্রসঙ্গও তুলে ধরেছে। জ্বালানির উচ্চ মূল্যের প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় মিশরে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এটা ছিল দমিয়ে রাখার উদ্যোগ। এ নিয়ে তিনি টুইট করার অপরাধে তাকে আটক করা হয়। বিশ্বজুড়ে ভুয়া রিপোর্ট করার অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে ৩০ জনের বিরুদ্ধে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২৮। মিশরে খুব ঘন ঘন এই অভিযোগ তোলা হয়। একই অভিযোগ রাশিয়া এবং সিঙ্গাপুরেও আনা হয়।