ফেসবুকে দুজন সাংবাদিকের উসকানিতে ‘সংগ্রামে’ হামলা

ফেসবুকে দুজন সাংবাদিকের উসকানিতে ‘সংগ্রামে’ হামলা

দৈনিক সংগ্রাম এর অফিসে হামলার তীব্র নিন্দা ও সম্পাদকের মুক্তি দাবি করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

শহীদ বৃদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এই দাবি জানান।

এসময় দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল (১৫ ডিসেম্বর) রবিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেন বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী।

রুহুল আমিন গাজী বলেন, আবুল আসাদ একজন অত্যন্ত নিরীহ সম্পাদক। তার শত্রু আছে বলে আমার জানা নেই।

তিনি আরো বলেন, শহীদ শব্দটি গত পাঁচ বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনও দল বা সরকার এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেনি। এটি দুজন সাংবাদিক ফেসবুকের মাধ্যমে উসকে দিয়েছেন। যদি আপনাদের আপত্তি থাকতো গত পাঁচ বছর কোনো জানাননি। সরকারও আপত্তি করেননি। গত পাঁচ বছর কেন আপত্তি করেননি এটাই আমার প্রশ্ন?

বিএফইউজের মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আব্দুল কাদের মোল্লা অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি ছিলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য ছিলেন।’

বিএফইউজের মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আবুল আসাদকে লাঞ্ছিত করে নিচে নামানো হয়েছে। ক্ষমা চাইতে পিড়াপিড়ি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি তার জায়গায় অবিচল থেকেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আব্দুল কাদের মোল্লা অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি ছিলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য ছিলেন। কিন্তু তাকে ‘শহীদ’ বলায় আপনাদের পছন্দ নাও হতে পারে। সেখানে প্রতিবাদ পাঠাতে পারেন। তা না হলে প্রেস কাউন্সিলে যেতে পারেন। সেখানে সন্তুষ্ট না হলে আদালতে মামলা করতে পারেন। কিন্তু এহেন নেক্কারজনক কাজ করে ইতিহাসে নতুন এক কলঙ্কজনক ঘটনার সৃষ্টি করেছে।’

বিএফইউজের সাবেক মাহাসচিব ও সিনিয়ির সাংবাদিক এম এ আজিজ বলেন, সংগ্রাম অফিসে যে তাণ্ডব হয়েছে সংবাদ পত্রে ঝড় হওয়ার কথা। সারা দেশের সকল সংবাদ কর্মী রাস্তায় থাকার কথা।

ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, মানবিক মার্যাদা এবং ন্যায়বিচার এর কোনোটিই এখন নেই। সরকার ন্যায়বিচারের পথ পূর্বেই ধবংস করেছে। সাম্য বলতে কিছুই নেই। আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কে আপনারা দেখেছেন। তার পত্রিকায় আগুন পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। তার উপর হামলা করা হয়েছে। আপনারা জানেন ফরহাদ মাজহার, শফিক রেহমান, শওকত মাহমুদ ভাইদের মত বুদ্ধিজীবীদের জেল খাটতে হয়েছে। ডা. জাফরুল্লাহ ভাইদের জন্য আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। অথচ তাদেরকে কেমন হেনস্থা করা হয়েছে আমরা তাও দেখেছি।

তিনি আরও বলেন, আজকে আবুল আসাদ ভাইয়ের উপর যে নির্যাতন হয়েছে এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আসাদ ভাই একজন নম্র-ভদ্র মানুষ। বাংলাদেশের দশ জন বুদ্ধিজীবীদের যদি তালিকা করেন তাহলে আসাদ ভাইকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এই হামলা শুধু আসাদ ভাইয়ের উপর নয়। এই নির্যাতন ১৭ কোটি মানুষের উপর। এই নির্যাতন ৩০ লাখ শহিদের উপর। এই নির্যাতন বুদ্ধিজীবীদের উপর নির্যাতন। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।

তিনি এও বলেন, আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সমাবেশ থেকে আবুল আসাদ ভাইয়ের মুক্তি দাবি করছি এবং হামলাকরিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করছি।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধরাণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বুদ্ধিজীবী দিবসের একদিন আগে বাংলাদেশের সবচােইতে প্রাচীন পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামে হামলা করে ৫৮টি কম্পিউটারসহ সবকিছু ধ্বংস করা হয়েছে।

বয়জ্যেষ্ঠ সম্পাদক ও বুদ্ধিজীবী আবুল আসাদকে পত্রিকা অফিস থেকে টেনে হেঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই শীতে সারা রাত তাকে থানায় বসীয়ে রাখা হয়েছে। এই হামলা শুধু সংগ্রামের উপর নয়, এই হামলা মত প্রকাশকারী স্বাধীনতাকামী মানুষের উপর হামলা, সমস্ত গণমাধ্যমের উপর হামলা।

এই হামলা আরও আগেই শুরু হয়েছে- সিএসবি, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, আমর দেশ, ইসলামী টিভিসহ অসংখ্য নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল দৈনিক সংগ্রামে হামলা করা হয়েছে।

অন্যান্য গণমাধ্যমের কর্ণধরদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই হামলা অব্যাহত থাকলে এক সময় কেউ টিকে থাকতে পারবেন না। যদি এই হামলাকে মেনে নেন, রুখে না দাঁড়ান তাহলে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। আপনাদের উপরও হামলা আসবে। আপনাদের পাশে কেউ থাকবে না।

সমাবেশে বিএফইউজে ও ডিইউজের অন্যান্য নেতারাও বক্তব্য দেন।