বাংলাদেশ: সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে সাংবাদিক কাজলের সর্বশেষ প্রকাশ্য অবস্থান

বাংলাদেশ: সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে সাংবাদিক কাজলের সর্বশেষ প্রকাশ্য অবস্থান

সম্ভাব্য গুমের শিকার হওয়ার আগে সর্বশেষ যেদিন সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলকে দেখা গিয়েছে, সেদিন কয়েকজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি তার মোটরবাইকের দিকে এগোয় এবং সেটিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত আজকের একটি সিসিটিভি ফুটেজে এমন দৃশ্য ধরা পড়েছে। এ বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি বলেছেন, সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের সন্দেহজনক আচরণ স্পষ্টতই প্রমাণ করে কাজলের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত শুরুর মাত্র একদিন পরই তাকে অনুসরণ করা হচ্ছিল। ওইদিনের পর থেকেই আর তার দেখা মেলেনি এবং তার ভাগ্যে কী ঘটেছে বা কোথায় আছেন কিছুই জানা যায়নি।

১০ই মার্চ বিকাল ৪টা ১৪ মিনিটে মোটরবাইকে করে বাংলা পত্রিকা ‘দৈনিক পক্ষকাল’ এর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজল ঢাকার হাতিরপুলে মেহের টাওয়ারস্থ তার অফিসে পৌঁছান। এরপর কাজল ঘটনাস্থল ত্যাগের আগ পর্যন্ত বাইকটির আশপাশে বেশ কয়েকজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে সন্দেহজনকভাবে ঘুরাফিরা করতে দেখা যায়।

বিকাল ৫টা ৫৯ মিনিট থেকে ৬টা ৫ মিনিটের মধ্যবর্তী ৬ মিনিট সময়ে তিনজন ব্যক্তি আলাদা আলাদাভাবে মোটরবাইকটির কাছে যায় এবং সেটিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে। এরপর ৬টা ১৯ মিনিটে কাজলকে অন্য একজন ব্যক্তির সঙ্গে অফিস থেকে বের হয়ে নিজের বাইকের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। পরে তিনি ফিরে আসেন এবং সন্ধ্যা ৬টা ৫১ মিনিটে একা বাইকে চড়ে চলে যান। এটাই ছিল তাকে প্রকাশ্যে সর্বশেষ দেখা যাওয়ার মুহূর্ত।

তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা অভিযোগ ১১ই মার্চ নিবন্ধন করে পুলিশ। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রথম কয়েকদিন এ ঘটনা তদন্ত করতে অস্বীকৃতি জানায় তারা এবং কাজলকে তাদের হেফাজতে রাখার কথাও অস্বীকার করে। ১৮ই মার্চ হাইকোর্টের নির্দেশ পুলিশকে জানানোর পরই শুধু তারা এ বিষয়ে প্রাথমিক পদক্ষেপ নেয়।

সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনি এবং আরও ৩১ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করে। ফেসবুকে ‘ভুল, আক্রমাণাত্মক ও অবমাননাকর’ বক্তব্য প্রচারের অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে।

গত বছর স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ অন্তত ৩৪ জন ব্যক্তি গুম হওয়ার অভিযোগ নথিবদ্ধ করেছে। এদের মধ্যে পরবর্তীতে ৮ জনের লাশ পাওয়া গেছে, ১৭ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং বাকি ৯ জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনও অজানা।

সাদ হাম্মাদি বলেন, কাজল কোথায় কী অবস্থায় আছেন তা অতিসত্বর প্রকাশ করতে এবং যদি রাষ্ট্রীয় হেফাজতে রাখা হয়ে থাকে, তাহলে দেরি না করে তাকে মুক্তি দিতে আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।