মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ক্রমেই নীচে নামছে বাংলাদেশ, ১৫১তম

মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ক্রমেই নীচে নামছে বাংলাদেশ, ১৫১তম

মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে অবনতির বৃত্ত থেকে বের হতে পারছেনা বাংলাদেশ। সরকার নিয়ন্ত্রণ আর ক্রমাগত রোষানলের শিকার হচ্ছেন দেশের সংবাদ কর্মীরা। দেশটিতে রাজনীতি করা যত কঠিন হয়ে উঠেছে, সংবাদপত্রে স্বাধীনতার লঙ্ঘনও তত বেড়েছে।

মঙ্গলবার রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পরিস্থিতি মূল্যায়নে এ চিত্র উঠে এসেছে। এতে ১৮০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫১। শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে।

গতবছরের তুলনায় আরও এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। শুধু যে পিছিয়েছে, তা-ই নয় প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে, এমনকি মিয়ানমারের চেয়েও। তালিকায় ৬৭ নম্বরে থাকা ভুটান এ অঞ্চলে মুক্ত সাংবাদিকতার শীর্ষে। এরপরই আছে মালদ্বীপ, দেশটির অবস্থান ৭৯। তালিকায় মিয়ানমারের অবস্থান ১৩৯, ভারত ১৪২, পাকিস্তান ১৪৫, শ্রীলঙ্কা ১২৭, নেপাল ১১২ এবং আফগানিস্তান ১২২।

বাংলাদেশের এই অবস্থানের ব্যাখ্যায় আরএসএফ বলছে, দেশটিতে রাজনীতি করা যত কঠিন হয়ে উঠেছে, সংবাদপত্রে স্বাধীনতার লঙ্ঘনও তত বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও এর নেতৃত্ব ২০০৯ সাল থেকে যে কঠোর পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন, তার শিকার সাংবাদিকরা। ২০১৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হয়। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকরা হামলার শিকার হন, ইচ্ছে হলেই ওয়েবসাইট বন্ধ, সরকারের সংবাদ সম্মেলনে দেশের দুই শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারকে অংশ নিতে না দেওয়া এর কিছু উদাহরণ।

চলতি বছর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ সমর্থক ও এর সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ১০ জন সাংবাদিকের ওপর হামলা চালান। সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। 'নেতিবাচক প্রচারণা'র দায়ে এই আইনে ১৪ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। জেল-জরিমানা এড়াতে ও সংবাদমাধ্যমের বন্ধ হয়ে যাওয়া এড়াতে, সম্পাদকরা নিজে থেকেই নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছেন। এই প্রবণতা এখন তীব্র।

সূচক সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাজে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবেদন এখনো তিনি দেখেননি। পুরো প্রতিবেদন পড়ে শিগগিরই তিনি মন্তব্য জানাবেন।

২০০২ সাল থেকে রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্স বিশ্বের ১৮০ টি দেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে, তার ভিত্তিতে এই সূচক প্রকাশ করে থাকে। গুণগত তথ্যের পাশাপাশি একটি প্রশ্নমালার ভিত্তিতে সূচক চূড়ান্ত করা হয়।
বহুত্ববাদ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, স্বেচ্ছা নিয়ন্ত্রণ আরোপ, আইনী কাঠামো, স্বচ্ছতা, খবর ও তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অবকাঠামোর গুণগত মানের ওপর এই প্রশ্নগুলো করা হয়ে থাকে।

২০১৩ সালে থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই সূচিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৪ থেকে ১৪৬ এর মধ্যে ছিল। পরের বছর বাংলাদেশের অবস্থান গিয়ে দাঁড়াায় ১৫০ এ। সেখান থেকে চলতি বছর নামল আরও একধাপ।