রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে হাঙ্গেরিতে ৭০ সাংবাদিকের পদত্যাগ

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে হাঙ্গেরিতে ৭০ সাংবাদিকের পদত্যাগ

হাঙ্গেরিতে সরকারি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ইনডেক্স’-এর কমপক্ষে ৭০ জন সাংবাদিক ও স্টাফ পদত্যাগ করেছেন। তাদের অভিযোগ, সরকার তাদের ওয়েবসাইটকে ধ্বংস করে দিতে অথবা তাদের বশীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটিতে সর্বশেষ নিরপেক্ষ গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া হিসেবে পরিচিত ইনডেক্স। এর প্রধান সম্পাদক সাবোলকস ডাল’কে মঙ্গলবার বরখাস্ত করা হয়। সাংবাদিকদের অভিযোগ, এই বরখাস্তকরণ সুস্পষ্ট হস্তক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে সরকার এই সাইটটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়। এ ঘটনার কয়েক ঘন্টা পরেই বুদাপেস্টে স্বাধীন মিডিয়ার পক্ষে বিক্ষোভ করেন সাংবাদিকরা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

এতে বলা হয়, গত এক দশক ধরে দেশটির রক্ষণশীল ও জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবার্নের সমর্থকরা দেশের নিরপেক্ষা মিডিয়ার ওপর আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে হাঙ্গেরির অবস্থান ৮৯তম।

গত মাসে ইনডেক্সের প্রধান সম্পাদক সাবোলকস ডাল সতর্কতা দেন যে, বাইরে থেকে ইনডেক্সের ওপর চাপ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে আক্রান্ত হতে পারেন সম্পাদকীয় স্টাফরা। ২২ শে জুন একটি উদ্বেগজনক লেখায় তিনি হুঁশিয়ারি দেন। তাতে বলেন, এই ওয়েবসাইটটির সম্পাদকীয় বিভাগের স্টাফরা বিপদের মুখে। এর হোমপেজে ‘ফ্রিডম ব্যারোমিটার’ও বিপদের মুখে।

এ অবস্থায় তিনজন শীর্ষ স্থানীয় সম্পাদক ও কমপক্ষে আরো ৭০ জন স্টাফ শুক্রবার ওই ওয়েবসাইটের চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। এর কারণ, ওয়েবসাইটের পরিচালনা পরিষদের প্রেসিডেন্ট রাজলো বোদোলাই প্রধান সম্পাদক সাবোলকস ডাল’কে পুনর্বহালে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এর প্রতিবাদে চাকরি থেকে পদত্যাগ করে যখন ওইসব স্টাফ ও সাংবাদিকরা বেরিয়ে যান অফিস থেকে তখন সেখানে এক আবেগঘন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ওদিকে এই সাইটটির নিরপেক্ষতা ঝুঁকিতে এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রেসিডেন্ট বোদোলাই। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন। বলেন, নিউজরুমের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন সাবোলকস ডাল।

কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানপন্থি একজন ব্যবসায়ী মিকলোস ভাসজিলে প্রতিষ্ঠানটির শতকরা ৫০ ভাগ শেয়ার কিনে নেন, যেখান থেকে ইনডেক্সের বিজ্ঞাপন ও রাজস্ব আয় নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ ঘটনার পরই ইনডেক্সের নিরপেক্ষতা নিয়ে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ী মিকলোস ভাসজিলে সরকারপন্থি আরেকটি টেলিভিশন সেন্টার টিভি২ পরিচালনা করেন। তাকে দেখা হয়, হাঙ্গেরির আরেকটি ওয়েবসাইট ‘ওরিগো’কে প্রধানমন্ত্রী অরবানপন্থি করে তোলার ক্ষেত্রে একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে। এসব ঘটনা যখন ইনডেক্সের নিউজরুমে শুক্রবার প্রকাশিত হয়, তখন একটি ছবি প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা যায় ব্যবসায়ী ভাসজিলে প্রধানমন্ত্রী অরবানের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা ও ইতিহাসবিদ মারিয়া শমিডটের সঙ্গে লাঞ্চ করছেন।

হাঙ্গেরিতে নিরপেক্ষ শক্তিশালী মিডিয়া হিসেবে ইনডেক্সের সুনাম রয়েছে। তাকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত করার দাবি জানিয়ে সাংবাদিকরা শুক্রবার পদত্যাগ করেন। এ দেশটিতে বেশির ভাগ মিডিয়াই সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকে- কি বিষয়ে, এবং কেমন করে রিপোর্ট করতে হবে তার জন্য। বহু আগেই সরকারি রেডিও, টেলিভিশন, রাষ্ট্র পরিচালিত বার্তা সংস্থা এমটিআই নিরপেক্ষতা ত্যাগ করেছে। ২০১৪ সালে সেখানে অরিগো নামের আরেকটি ওয়েবসাইট সরকারপন্থি হয়ে পড়ার পর ২০১৬ সালে বাম ঘরানার পত্রিকা নেপজাবাদসাগ প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। ওদিকে ইনডেক্সের রিপোর্টাররা তাদের কাজ অব্যাহত রাখার জন্য ফেসবুকে একটি গ্রুপ গঠন করেছেন।

এমজে/