অস্ত্রধারীদের ভিডিও করায় সাংবাদিক হত্যা?

‘‘শটগানের ৬২টি গুলির চিহ্ন পেয়েছি, ছয়টি গুলি বের করেছি’’

‘‘শটগানের ৬২টি গুলির চিহ্ন পেয়েছি, ছয়টি গুলি বের করেছি’’

সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের শরীরে শটগানের ৬২টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে৷ নিহতের ভাই প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলছেন, আওয়ামী লীগের দু পক্ষের সংঘর্ষের সময় অস্ত্রধারীদের ভিডিও করার কারণে মুজাক্কিরকে হত্যা করা হয়েছে৷

তার মরদেহের ময়না তদন্ত হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷ গত শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ) বিকেলে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাপরাশিরহাট বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিবাদমান দুই গ্রুপেরসংঘর্ষ চলাকালে তিনি গুলিবিদ্ধ হন৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর শনিবার রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান৷

ময়না তদন্তের প্রতিবেদনে তার মুখ, গলা ও বুকে শটগানের গুলি লাগার কথা বলা হয়েছে৷ ডান বুকে লেগে গুলি ফুসফুসে গিয়ে আঘাত করায় তার মৃত্যু হয়েছে৷ ময়না তদন্তকারী ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘‘শটগানের ৬২টি গুলির চিহ্ন পেয়েছি৷ আমরা ছয়টি গুলি বের করেছি৷ এগুলো শটগানের ছোট জোট গুলি (পিলেট)৷’’ সুরতহাল প্রতিবেদনেও একই ধরনের কথা বলা হয়েছে৷ সেখানে বলা হয়, মুজাক্কিরকে সামনে থেকে গুলি করা হয়েছে৷

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন রনি জানান, সংঘর্ষ চলাকালে মুজাক্কির অস্ত্রধারীদের ভিডিও করেছিলেন কাছ থেকে৷ তারাই মুজাক্কিরকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করে৷ গিয়াস উদ্দিন রনি ঘটনার পর ওই এলাকায় গিয়ে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন আমাকে জানিয়েছে মুজাক্কির তার মোবাইল ফোন দিয়ে অস্ত্রধারীদের ভিডিও করছিল৷ সেটা বেশ কাছ থেকেই৷ তখনই তাকে গুলি করা হয়৷’’

মুজাক্কিরকে হত্যা করা হয় চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজারে৷ তার ভাই ফখরুদ্দিন মুফাচ্ছির বলেন, ‘‘সন্ত্রাসীরা আমার ভাইয়ের মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে প্রথমে মারধর করে৷ এরপর গুলি করে হত্যা করে৷ তার মোবাইল ফোন, ক্যামেরা এবং মানিব্যাগ আজ (মঙ্গলবার) পাওয়া গেছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি, অস্ত্রধারীদের গুলি ছোঁড়া অবস্থায় সে ভিডিও করে ফেলেছিল৷ সে কারণেই তাকে ভিডিও করার পর পরই হত্যা করা হয়৷ তার গলা ও বুকে গুলির অনেক আঘাত দেখা গেছে৷ তাকে সামনে থেকে গুলি করা হয়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বাজারের সিসি ক্যামেরা ছাড়াও অনেক মোবাইলে ওই ঘটনা ধারণ করা হয়েছে৷ পুলিশ চাইলেই অপরাধীদের এখন ওই ফুটেজ ধরে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে পারে৷’’

মুজাক্কির হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার তার বাবা নূরুল হুদা নওয়াব আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন৷

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ এখন এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজনীতি করছে৷ তারা পরস্পরকে দায়ী করছে৷ কিন্তু আমরা ওই বাজারের এবং ঘটনাস্থলের ৯টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজই পেয়েছি৷ আশা করি এখান থেকেই অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারবো৷ অনেক ফুটেজ৷ তাই আমাদের দেখতে একটু সময় লাগছে৷ তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রত্যক্ষদর্শী বা অন্যদের মোবাইল ফোনে ধারণ করা কোনো ফুটেজ আমরা পাইনি৷’’

তিনি জানান, একই সঙ্গে সুরতহাল রিপোর্টও পর্যালোচনা করা হচ্ছে৷ আর যাতে ময়না তদন্ত রিপোর্ট দ্রুত পাওয়া যায় তার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ তবে তিনি সুরতহাল রিপোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাতে চাননি৷

মুজাক্কির সম্পর্কে গিয়াস উদ্দিন রনি বলেন, ‘‘নিহত সাংবাদিক মুজাক্কির পড়াশুনার পাশাপাশি অনলাইন পোর্টাল বার্তাবাজারের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন৷ তিনি নোয়াখালী সরকারি কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন৷ সাত ভাই বোনোর মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট এবং অবিবাহিত৷ এক সময় ছাত্রলীগ করলেও কয়েক বছর ধরে সাংবাদিকতায় মনেনিবেশ করেন৷ তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক৷ এক ভাইও স্কুল শিক্ষক এবং আরেক ভাই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারি পরিচালক৷’’

মুজাক্কিরকে হারিয়ে হারিয়ে বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানান তার ভাই স্কুল শিক্ষক মুফাচ্ছির৷

প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মুজাক্কির হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় সাংবাদিকরাও চাপের মুখে আছেন৷ তিনি বলেন, সোমবার তার ওপরও হামলা হয়েছে৷ তারপরও সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানানো অব্যাহত রেখেছেন৷

এদিকে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স এক বিবৃতিতে সাংবাদিক হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অপরাধীদের চিহ্নিত এবং আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে৷