গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শিকারির তালিকায় শেখ হাসিনা

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শিকারির তালিকায় শেখ হাসিনা

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শিকারি হিসাবে নিজের অবস্থান পোক্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণমাধ্যমের দলন এবং নিপীড়ন করায় বিশ্বের ৩৭ জন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স এবং এসকল রাষ্ট্রপ্রধানকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শিকারি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি। এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম।

২০১৬ সালে প্রথম প্রকাশের পর ২০২১ সালে আবারও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শিকারির তালিকা প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, "২০২১ সালের নতুন তালিকায় নতুন করে ১৭ জন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শিকারি হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। এরা সকলেই রাষ্ট্রপ্রধান। এরা সেন্সর আরোপ, সাংবাদিকদের স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় জেলে পাঠানো কিংবা নিপীড়ন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে দলন করেছে। যখন তাদের কাছে রক্তপাত করার মত আর কিছুই অবশিষ্ট থাকতো না তখনি তারা প্রকাশ্যে বা আড়ালে চেয়েছে সাংবাদিকদের খুন।"

তালিকায় দুই নারী নেত্রীর নাম রয়েছে৷ এদের একজন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা এই নারী অন্তত ২০১৪ সাল থেকে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শিকারি’ বলে মনে করছে আরএসএফ৷ ২০১৮ সালে তার সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করে, যার আওতায় ৭০ জনের বেশি সাংবাদিক ও ব্লগারকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে৷ যে সাংবাদিকরা তাকে বিরক্ত করেন তিনি তাদের ধরেন বলে মনে করে আরএসএফ৷

হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার সমালোচনা করে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, "২০০৮ সালে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই কর্তৃত্ববাদী আচরণ শুরু করেন শেখ হাসিনা এবং একিসঙ্গে শুরু করেন গণমাধ্যমের উপর নিপীড়ন। ২০১৪ সালে আবার ক্ষমতায় বসাটা তার জন্য সবকিছুকে সহজ করে দেয় এবং পুরনো নিপীড়নের ধারাটা পাকাপোক্ত করে দেয়। সংবাদ মাধ্যমে বিরোধী মতের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও তিনি মুখে বলেন যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী কিন্তু তার ক্ষমতা আঁকড়ে বসে থাকাটা এমন যে তিনি কোন প্রকারের সমালোচনাই সহ্য করেন না।"

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কালা কানুনের সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, "২০১৮ সালে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে তিনি তার সরকারের অভিলাষ বাস্তবায়ন করে থাকেন।অনিয়মের কালাকানুনে ভরপুর এই উদ্দেশ্যমূলক আইনটি সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনলাইনে যেসব কন্টেন্ট জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ তার জন্য রয়েছে ৭ বছরের জেল শাস্তি অথচ শেখ হাসিনার বাবার বিরুদ্ধে কেউ প্রচারণা চালালে তার জন্য শাস্তি ১৪ বছরের জেল।"

এতে আরও বলা হয়, "সরকারের বিপক্ষে যায় এমন লেখার জন্য সাংবাদিক এবং ব্লগারদের শায়েস্তা করার মাধ্যম হিসেবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনা সমর্থকরা। আইনটি বাস্তবায়নের ২ বছরের মধ্যে ৪০০ জনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ জনের বেশী সাংবাদিক এবং ব্লগার রয়েছেন। যাদেরকে এই আইনের আওতায় জেলে পাঠানো হয় তাদের অবর্নণীয় অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। এদেরি একজন মোশতাক আহমেদ ফেব্রুয়ারি মাসে কারা হেফাজতে মৃত্যু বরণ করেন।"

আওয়ামী লীগ এবং ছাত্র্রলীগের কর্মীরা শেখ হাসিনার আদেশ বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, "শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং ছাত্র্রলীগের কর্মীরা তার আদেশ বাস্তবায়নে মাঠে ব্যস্ত থাকে। যেসমস্ত সাংবাদিকরা কোন রাজপথের বিক্ষোভ কিংবা প্রতিবাদের সংবাদ কভার করতে যান, বিশেষ করে নির্বাচনী সংবাদ কভার করা, তখন তাদের উপর হামলা এবং নিপীড়ন চালায় তারা (আওয়ামী লীগ এবং ছাত্র্রলীগের কর্মীরা) যাতে সংবাদ কভার না করা যায়। কখনো গণপিটুনি বলে চালানো হয়। সাংবাদিকদের এ অবস্থার শেষ হয় কখনো হাসপাতালের বেডে আহত অবস্থায় কিংবা মর্গে লাশ হয়ে।"

 কেবি/