৭৯ শতাংশ সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে বাধা মনে করেন: জরিপ

৭৯ শতাংশ সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে বাধা মনে করেন: জরিপ

দেশের ৭৯ শতাংশ সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে বাধা বলে মনে করছেন। মহামারিকালে ৩৪ শতাংশ সাংবাদিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ৬০ শতাংশ সাংবাদিক মহামারিকালে বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের সম্মুখীন হন। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। সংস্থাটি কোভিড-১৯ মহামারিকালে স্বাস্থ্য সাংবাদিকতা এবং সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে ১০০ জন সাংবাদিকের উপর এই জপির চালায়। সমীক্ষার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের সাংবাদিকদের উপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের মহামারির জন্য তাদের প্রস্তুতির মূল্যায়ন করা।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৩ শতাংশ ছিলেন ঢাকা বিভাগের এবং বাকি ৩৭ শতাংশ দেশের অন্য সাত বিভাগের। নির্বাচিত নমুনার মধ্যে ৭০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩০ শতাংশ নারী ছিলেন।

২০২০ সালে মহামারির প্রথম লকডাউনের সময়কালকে বিবেচনায় নিয়ে পরিচালিত জরিপটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের আগস্টে শেষ করা হয়।

জরিপে ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে একটি বাধা। ২৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর মতে তারা মহামারিকালে কাজ করার সময় বাহ্যিক হুমকির সম্মুখীন হয়েছিলেন। ১৩ শতাংশ মহামারিকালে তাদের সম্পাদকদের দ্বারা বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশে বাধার সম্মুখীন হন।

মহামারিকালে ৪০ শতাংশ নিয়মিতভাবে সম্পূর্ণ বেতন পেয়েছেন। ৩৬ শতাংশ তাদের মূল বেতনের অর্ধেক পেয়েছেন

বিজ্ঞাপন

বাকি ২৪ শতাংশ সাংবাদিক মাসিক বেতন পুরোটাই পেয়েছেন, কিন্তু অনিয়মিতভাবে। অধিকন্তু, উত্তরদাতাদের ৪ শতাংশ সাংবাদিক মহামারির কারণে তাদের চাকরি হারিয়েছেন। ৬০ শতাংশ সাংবাদিক বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের মুখোমুখি হয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে সংক্রমিত হওয়ার ভয়, তাদের পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকিতে ফেলা, আর্থিক অনিশ্চয়তা ইত্যাদি।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের সাংবাদিকরা উচ্চহারে করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন। উত্তরদাতাদের ৩৪ শতাংশ করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে কর্মরত সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছেন (৪১ শতাংশ)।

মাত্র ১০ শতাংশ সাংবাদিক কোভিড-১৯ মহামারি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ৪৮ শতাংশ স্বাস্থ্য সাংবাদিকতার তাত্ত্বিক বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত নয়। এই জরিপ থেকে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব একটি উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা হিসেবে রয়ে গেছে।

জরিপে উত্তরদাতাদের মতামত বিশেষণ করে কিছু সুপারিশের কথা তুলে ধরা হয়। সাংবাদিকদের যে কোনো দুর্যোগ বা মহামারির সময় তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত করার জন্য সুপারিশ করা হয়। যেমন-সাংবাদিকদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, ভ্যাকসিন এবং সঠিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার মতো উপযুক্ত আর্থিক ও মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করা। প্রতিটি সম্ভাব্য ঝুঁকি কমানোর উপর জোর দিয়ে নিরাপত্তা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। এমন পরিবেশ তৈরি করা যেখানে সাংবাদিকরা কোনো অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চাপ ছাড়াই কাজ করতে পারে।