সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করছে মিয়ানমার: জাতিসংঘ

সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করছে মিয়ানমার: জাতিসংঘ

ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ করতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকার একজোট হয়ে ‘রাজনৈতিক আক্রমণ’ শুরু করেছে এবং সেই লক্ষ্য থেকেই অস্পষ্ট আইনে বহু সাংবাদিককে গ্রেপ্তার বা বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে বলে মনে করছে জাতিসংঘ।

রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে সাজা দেওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাসহ পাঁচটি ঘটনা পর্যালোচনা করে মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের তথ্য সংগ্রহের সময় গ্রেপ্তার রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সো ওকে (২৮) গত ৩ সেপ্টেম্বর ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় ইয়াংগনের একটি আদালত।

রাখাইনের সেনা অভিযানের সময় ইনদিন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে লাশ পুঁতে ফেলার একটি ঘটনা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন ওই দুই সাংবাদিক।

ওই ঘটনাকে মিয়ানমারে সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিচারিক হয়রানির ‘ভয়ঙ্কর এবং হাই প্রোফাইল উদাহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে।

মিয়ানমারে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে কীভাবে গ্রেপ্তার-হয়রানি চালানো হচ্ছে, তার বিস্তারিত বিবরণ ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে মুক্তি দিতে আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করে মিয়ানমার বলে আসছে, আদালত আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ওই রায় দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মিন্ট কিয়াও।

তবে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির অধীনে মিয়ানমারে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শ্যামদাসানি মঙ্গলবার জেনিভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মিয়ানমারে আইন ও আদালতকে ব্যবহার করে সরকার ও সেনাবাহিনী সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যে রাজনৈতিক আক্রমণ চালাচ্ছে, এই প্রতিবেদন সেটাই বলছে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইনের পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ এবং আমদানি-রপ্তানি বিষয়ক আইনও সাংবাদিকদের হয়রানির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের পরিসংখ্যান থেকে উদ্ধৃত করে রাভিনা শ্যামদাসানি বলেন, কেবল ২০১৭ সালেই মিয়ানমারে অন্তত ২০ জন সাংবাদিককে এসব আইনে সাজা বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।

২০১৫ সালে সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশের কতটা পরিবর্তন এসেছে, তাও বিশ্লেষণ করা হয়েছে ‘অদৃশ্য সীমানা-মিয়ানমারে সাংবাদিকতার ফৌজদারি বিচার’ শির্ষক এই প্রতিবেদনে।

সেখানে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে এখন আতঙ্কের বাইরে থেকে বা সরকারের আনুকূল্য ছাড়া সাংবাদিকতা করা ‘অসম্ভব’ হয়ে পড়েছে’।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০৪৫ঘ.)