রাজধানীতে মধ্যরাতে তরুণীকে হেনস্তা, ২ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

রাজধানীতে মধ্যরাতে তরুণীকে হেনস্তা, ২ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

ঢাকা, ২৪ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : রাজধানীর রাস্তায় তল্লাশির নামে এক তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় জড়িত দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই দুই পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়।

সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী এক তরুণীকে হেনস্তা করেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তরুণীর সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিএমও) দুই পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

এ বিষয়ে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভিডিওকারী পুলিশ সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের দুজনকে এরই মধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে। সম্মানিত কমিশনার মহোদয়ের অনুমতিক্রমে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আশা করি, সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে।’

জানা যায়, সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রামপুরা এলাকায় অটোরিকশা থামিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন পুলিশের একাধিক সদস্য। ওই তরুণী এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়েও খারাপ মন্তব্য করেন পুলিশ সদস্যরা। ওই তরুণীর ব্যাগ তল্লাশির কথা বলে তার অটোরিকশা থামিয়েছিল পুলিশ। তবে তরুণী একাধিকবার তার ব্যাগ তল্লাশি করতে বললেও তা না করেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে তরুণী ও পুলিশ সদস্যদের কথোপকথনের কিছু অংশ এখানে তুলে দেওয়া হলো…

তরুণী : আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন?

পুলিশ : কীভাবে বলা হয়েছে?

তরুণী : এত ভাব মারেন কেন? মাইয়াগো দেখলে ব্যাগ চেক করেন।

পুশিল : এই, আপনি কিন্তু এত বিশ্বসুন্দরী না।

তরুণী : সমস্যা কী আপনার?

পুলিশ : না, আপনে তো মনে করছেন, আপনে কী যেন হয়ে গেছেন। আপনাকে দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি।

পুলিশ : আপনার সমস্যা কি?

তরুণী : সমস্যা লাইট সরান। আপনাদের সমস্যা কী?

পুলিশ : এটা আমাদের চেক পোস্ট, আমরা চেক করব।

তরুণী : তো চেক করেন না কেন, এত কথা বলেন কেন?

পুলিশ : আপনে এত কথা বলেন কেন? বেয়াদব মেয়ে। বাসা থেকে ভালো করে এয়া শেখায়নি? আপনাকে ভালো করে বাসা থেকে শিক্ষা দেয়নি?

তরুণী : আপনে বেয়াদব? আপনে আমাকে খারাপ মেয়ে কেন বললেন? এইটা পুলিশের বিহ্যাব (আচরণ) হইলো? ফিল্ডিং মারবেন কেন?

পুলিশ : আপনার সাথে কি ফিল্ডিং মারছি? এই আপনার সাথে কে ফিল্ডিং মারছে?

তরুণী : লাইট সরান, চোখে ধরছেন কেন? ব্যাগে মারেন লাইট, চেক করেন।

পুলিশ : এখন রাত কয়টা বাজে? আড়াইটা বাজে। একটা ভদ্র ফ্যামেলির মেয়েরা…

তরুণী : আমি সারারাত চলবো, আপনার সমস্যা?

পুলিশ : তো আপনে এভাবে অভদ্রর মতো কথা বলছেন কেন? বাসা থেকে আপনাকে ভদ্রতা শিখায়নি?

তরুণী : অভদ্রতো আপনে

পুলিশ : বাসা কোথায়? কার মেয়ে আপনে? আপনে কার মেয়ে সেটা বলেন।

তরুণী : আমার ঠেকা পরে নাই।

পুলিশ : না, আপনে কোন মিনিস্টারের মেয়ে সেটা বলেন না। আপনে ব্যাগ খোলেন।

তরুণী : না, আপনারা খোলেন।

পুলিশ : না, না আমরা খুলব না তো। আপনার ব্যাগ আপনে দেখাবেন।

তরুণী : এতক্ষণ আমার টাইম নষ্ট করলেন…

পুলিশ : কেন, কেউ কি ওয়েট করতেছে?

তরুণী : কী হইছে? তোর বাপে ওয়েট করতেছে।

পুলিশ : বাসা হচ্ছে ডেমরা, আপনে ওই দিকে কোথায় যান?

তরুণী : হায় প্রশাসন, ভদ্রতা!

পুলিশ : সেটা আপনে কালকে দেখতে পারবেন। পুলিশ ভদ্র না অভদ্র, সেটা কালকে দেখতে পারবেন।

তরুণী : কী, বাল দেখব আমি।

পুলিশ : বাসা থেকে এইটা সেখাইয়া দিছে?

তরুণী : হ্যাঁ (রেগে)

পুলিশ : মানুষের সঙ্গে বাল-ছাল বলা শিখাই দিছে?

মেয়ে : অসভ্য, লাইটা নামান।

পুলিশ : ও তো পুরাভাবে অ্যাডিক্টেট, ওতো অ্যাডিক্টেট।

তরুণী : আপনে ওনাকে লাইটটা অফ করতে বলেন।

পুলিশ : আপনে আমার সাথে কথা বলেন। আপনে এত বাড়াবাড়ি করতেছেন কেন?

তরুণী : আমি কেন বাড়াবাড়ি করব? আপনে আমার ব্যাগ চেক করছেন?

পুলিশ : আমরা ব্যাগ চেক করব, নাকি কী চেক করব সেটা আমি দেখতেছি।

তরুণী : কী দেখতেছেন আপনারা?

পুলিশ : আমরা নোংরামো দেখতেছি। আপনে কী মনে করতেছেন, মহিলা মানুষ দেখে… ল্যাং মেরে নিয়ে যাব এখন…।

সূত্র: আমাদের সময়

(জাস্ট নিউজ/একে/২৩০৬ঘ.)