বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে : দি ঢাকা ফোরাম

বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে : দি ঢাকা ফোরাম

ঢাকা, ২৭ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘দি ঢাকা ফোরাম’ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তরা এসব কথা বলেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, ঢাবির আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল, পানি বিশেষজ্ঞ ম ইনামুল হক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুজাহেরুল হক,হ জাপার এমপি ফখরুল ইমাম৷ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক কূটনীতিক এম সিরাজুল ইসলাম৷ বৈঠকে সাবেক কূটনীতিকদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, এফ এ শামীম আহমেদ, মাহমদুর রেজা চৌধুরী, ইফতেখারুল করিম, মাসুদ আজিজ, শাহেদ আখতার প্রমুখ৷

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আজ সমগ্র জাতি ২০১৪ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তির আশংকায় উৎকণ্ঠিত। গণমানুষের এ আশঙ্কা বাস্তবে রূপ নিলে তা হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। বর্তমান সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বহাল রেখেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার বিষয়ে অনড়। অর্থাৎ দলীয় নেত্রীকে নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান হিসেবে বহাল রাখতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সরকারি দল ইতিমধ্যে এই লক্ষ্যে পুলিশ ও জনপ্রশাসন বিভাগের রাজনীতিকরণ সম্পন্ন করেছে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে। যদি এটি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে এমন আশঙ্কা অমূলক নয় যে গায়েবী, মিথ্যা মামলা, গুম আর অপহরণের মতো বিষয়গুলো আরও প্রকটতর হবে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এ গোলটেবিল বৈঠকে বলা হয়, দুটি বিষয়ে ভোটাধিকার পুনরূদ্ধারের ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণকে আশান্বিত করেছে।

প্রথমটি হলো, অভ্যন্তরিন রাজনীতিতে কিছু পরিবর্তন আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিম-লে ভারতসহ অন্যান্য দেশ ও সংস্থাসমূহের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন। দেশজ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে অনু:সৃত বিরোধী বৃত্তের বাইরে তৃতীয় একটি শক্তির উত্থান হয়েছে। এই শক্তিটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য কাজ করছে। এই মোর্চাটি আওয়ামী লীগের ২০০৯ ও ২০১৪ নির্বাচনে প্রত্যক্ষ করেছে কিভাবে সরকারি প্রশাসনকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে যা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। এটি বেগম জিয়ার জামিন সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার নির্বাচনী ফলাফল নিজেদের অনুকূলে আনার অপচেষ্টা মাত্র।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, সে সময়ে, আওয়ামী লীগের দেয়া মুক্তি বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দেয়া মানে ‘তথ্য কথিত’ ইসলামী সন্ত্রাসকে উষ্কে দেয়া যা আন্তর্জাতিক বিশ্ব অনেকটা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে আজ নেই। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাম্প্রতিক সফরে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। বাংলাদেশে প্রাক্তন ভারতীয় হাই কমিশনার ও অন্যান্য কিছু সাংবাদিক ও কূটনীতিক একই মত ব্যক্ত করে গেছেন। বর্তমান হাই কমিশনারও একাধিকবার একই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।

গোলটেবিল বৈঠকে জানানো হয়, জাতি আজ দ্বিধাবিভক্ত, গণতান্ত্রিক বিশ্বে বিশেষত পশ্চিমা দেশসমূহে পূর্বতন সংসদ বজায় রেখে ওই সকল সংসদ সদস্য দিয়েই নির্বাচন করার কোন নজির নেই। এটি এক ধরনের স্বেচ্ছাচারের বহি-প্রকাশ মাত্র। এখন প্রয়োজন হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে সংবিধান কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতার ব্যবহার করতে দেয়া। তাই সকলের প্রত্যাশা প্রধান রাজনৈতিক দলের উচিত আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়া। তা না হলে জাতি গভীর অন্ধকারে নিপাতিত হতে পারে যা মুক্তি যুদ্ধের মহান শহীদদের রক্তের প্রতি অবমাননা করা হবে।

(জাস্ট নিউজ/এমজে/১৩৪০ঘ.)