গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে কাদের সিদ্দিকীর ক্ষোভ

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে কাদের সিদ্দিকীর ক্ষোভ

ঢাকা, ২৭ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলাকারীদের গণস্বাস্থ্যের জায়গা দখল, দুর্বৃত্তদের হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলার খবর শুনে আজ শনিবার প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে গিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি দেখার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেন কাদের সিদ্দিকী।

স্বাধীনতা যুদ্ধে মু্ক্তিযোদ্ধাদের সেবা প্রদান করা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে এক মহান প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারণে এই প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। যা উচিত হচ্ছে না।’

কেন্দ্রের নারী হোস্টেলে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘নারী হোস্টেলে হামলার শিকার মেয়েদের যে আকুতি আমি শুনেছি, স্বাধীন দেশে তা ভাবাই যায় না। আমি অত্যন্ত মর্মাহত’।

হামলাকারীরা কেন্দ্রের অসংখ্য গাছ কেটে ফেলেছে। এ ঘটনা নিজ সন্তানের গলা কেটে হত্যার মতো দুঃখজনক উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘গাছ বোনা সহজ, কিন্তু কাটা কঠিন। অন্য ঘটনা বাদ দিলাম, যারা গাছ কেটেছে তাদের ১২ বছরের জেল দেওয়া উচিত।’

শুক্রবার নিজের জায়গা দাবি করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন (পিএইচএ) ভবনে প্রবেশের রাস্তা দখল করে নেন সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন। আমিনুল ইসলাম নামে অপর এক ব্যক্তিও একই দাবি তুলে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দখল করে নেন কেন্দ্রের আরো কিছু জায়গা।

পরে কিছু দুর্বৃত্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও মালামাল লুটতরাজ করে। পিএইচএ ভবনে হামলা চালিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। লুট করা হয় মাল্টিমিডিয়া, সাউন্ড সিস্টেম, সিসি ক্যামেরা, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন সামগ্রী।

সে সময় প্রতিবাদ জানিয়ে মোবাইলে ছবি তুলতে গেলে আহত হয় র‍্যাবের হাতে পা হারানো সেই লিমন। হামলাকারীরা পিটিয়ে লিমনের ডান হাত ভেঙে দেয়। লিমন প্রতিষ্ঠানের আইন বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে গণস্বাস্থ্যের কর্মী ও শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার মুখে হামলাকারীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

জমি দখল ও হামলা প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চট্টগাম থেকে মোবাইল ফোনে জানান, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চেয়েও পাওয়া যায়নি। উল্টো আমার বিরুদ্ধে মাছ চুরি, ফল চুরি, চাঁদাবাজিসহ পাঁচটি মিথ্যা মামলা করিয়ে বাদীদের দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের পায়ঁতারা করা হচ্ছে’।

পুলিশ সহয়তা করেনি এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ রিজাউল হক দীপু বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে সবকিছু পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে দখলকারীদের পক্ষে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘অবৈধভাবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের জায়গা দখলে রেখেছিল। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. চৌধুরীর প্রভাবে তাঁরা এত দিন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছিলেন না। ফলে মামলা করার পর নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে নিজেদের জায়গা উদ্ধার করছেন।’

এর আগে গত মঙ্গলবার তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কারখানায় একযোগে অভিযান চালান র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সে সময় নানা অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠান দুটিকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি সিলগালা করে দেওয়া হয় গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস এন্টিবায়োটিক ইউনিট।

এর আগে আশুলিয়ায় জমি দখলের চেষ্টা, ভাঙচুর ও চুরির অভিযোগে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। উচ্চ আদালত থেকে এই তিন মামলায় আগাম জামিন নেন ডা. জাফরুল্লাহ।

এর আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে সেনাপ্রধান সম্পর্কে অসত্য বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৪৪২ঘ.)