পরিবহন ধর্মঘট নামে এ কেমন বর্বরতা?

পরিবহন ধর্মঘট নামে এ কেমন বর্বরতা?

ঢাকা, ২৯ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটে প্রায় অচল পুরো দেশ। এতে পরিবহন চলাচল বন্ধ। সিএনজি অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলেও শ্রমিকদের বাধা। জরুরি প্রয়োজনে গাড়ি নিয়ে যারাই রাস্তায় নেমেছে মারমুখী শ্রমিকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। হয় গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে না হয় চালকের মুখে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে পোড়া মবিল। পরিবহন শ্রমিকদের নগ্ন হেনস্তা থেকে বাদ যায়নি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। এমনকি রোগীবহনকারী অ্যাম্বুলেন্সও। তাই চিকিৎসার অভাবে জীবন দিতে হলো মাত্র ৭ দিন আগে জন্ম নেয়া শিশুটিকেও।

সংঘবদ্ধ শ্রমিকরা বেসরকারিভাবে চলাচলকারী গাড়ি আটকে দিচ্ছেন। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়ে চরম ভোগান্তিতে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে অফিসগামী ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো। এমনকি শ্রমিকদের এমন নৈরাজ্যের হাত থেকে রেহাই পায়নি সাংবাদিকরাও।

কর্মস্থলগামী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ জরুরি কাজে বের হওয়া মানুষ পরিবহন না পেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটেই চলতে গন্তব্যস্থলে রওনা দেন। কেউ কেউ ভ্যান রিকশা করে কর্মস্থলে ছুটছেন।

পথে পথে অ্যাম্বুলেন্সে বাধা, মারা গেল ৭ দিনের শিশু
পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ৪৮ ঘন্টার কর্মবিরতি চলাকালে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় অ্যাম্বুলেন্স আটকা পড়ে এক শিশু মারা গেছে। রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার চান্দগ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুটি বড়লেখা সদর ইউনিয়নের অজমির গ্রামের কুটন মিয়ার মেয়ে। মাত্র ৭ দিন আগে শিশুটির জন্ম হয়েছিল। এখনও তার নাম রাখা হয়নি।

শিশুটির চাচা আকবর আলী বিকালে বলেন, গত রাত থেকে বাচ্চাটা কোন কিছইু খাচ্ছিল না, শুধু কাঁদছিল। সকালে আমরা শিশুটিকে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত সিলেট নেওয়ার জন্য বলেন। চিকিৎসকের কথা মত আমরা বাচ্চাটিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেই।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সিলেট যাওয়ার পথে বড়লেখা উপজেলার দরগাবাজারে অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দেয়। একইভাবে দাসেরবাজার এলকায় আটকানোর পর তাদের ছাড়া হয়। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে চান্দগ্রাম বাজারে আবারো শ্রমিকরা গাড়িটি আটকায়। এসময় অ্যাম্বুলেন্স চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করা হয়।

শিশুটি এখানেই একেবারেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে। আমরা দ্রুত শিশুটিকে বিয়ানীবাজার হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাত্র ৭দিন আগে বাচ্চাটার জন্ম হয়েছিল। এ ঘটনায় আমরা থানায় অভিযোগ করেছি।

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক বলেন, ঘটনাটা শুনেছি। তবে কেউ এ ব্যাপারে এখনও কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কলেজছাত্রীদের মুখে ও শরীরে পোড়া মবিল
নারায়ণগঞ্জে সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রীদের বহন করা বাসেও হামলা চালিয়েছে আন্দোলনরত পরিবহন শ্রমিকরা। এসময় তারা বাসচালক ও ছাত্রীদের গায়ে পোড়া মবিল লেপন করেছে। পাশাপাশি ভেঙেছে বাসের গ্লাস।

রবিবার দুপুরে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকায় একটি পাম্পের কাছে এ ঘটনা ঘটায় শ্রমিকরা। পরে বাসটি সেখানে থামিয়ে দিয়ে আর যেতে দেয়নি।

শিক্ষার্থীরা জানায়, দুপুর ১২টার দিকে সাইনবোর্ড এলাকা পার হওয়ার সময় হঠাৎ শ্রমিকরা বাসটি থামিয়ে চালককে মারধর করে ও তার মুখে শরীরে পোড়া মবিল লেপে দেন। পরে এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে কয়েকজন ছাত্রীকেও পোড়া মবিল লেপে দেন শ্রমিকরা। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও শুরু করেন। পরে বাসের কয়েকটি গ্লাস ভাঙচুর করে বাস থেকে সবাইকে নামিয়ে দেয়া হয়।

বাসটির চালক মজিবর বলেন, বাসটিতে ৩৮ জন ছাত্রী ছিল। তারা সবাই সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যয়নরত। ছাত্রী বহনকারী বাসটি সাইনবোর্ড এলাকায় এলেই হামলা করে বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে শ্রমিকরা। পরে ছাত্রীদের গায়েও পোড়া মবিল মাখিয়ে দেয়।

নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বেদৌরা বিনতে হাবিবা বলেন, আমাকে চালক জানিয়েছে ঘটনা। সেখানে শ্রমিকরা কয়েকটি গ্লাস ভাঙচুর করেছে এবং ছাত্রীদের সঙ্গে একটু সমস্যা হয়েছে। তাদের গায়ে পোড়া মবিলও দিয়েছে জানালো। বাসটি আপাতত একপাশে রাখা হয়েছে, কলেজে বাসটি ফিরলে বিস্তারিত জানতে পারবো।

গাড়ি বের করায় চালকদের মুখে-শরীরে পোড়া মবিল
পরিবহন ধর্মঘটে রাজধানীর কোনো কোনো জায়গায় বিশৃঙ্খল আচরণ করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় তারা দলবেঁধে ব্যক্তিগত গাড়ি চালকদের ওপর চড়াও হচ্ছেন। গাড়ি বের করার অপরাধে তাদের শরীরে ও মুখে পোড়া মবিল ঢেলে দিচ্ছেন।

সিদ্ধিরগঞ্জে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শ্রমিকদের
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ শিমরাইল মোড়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পরিবহন শ্রমিকরা। এসময় তারা ৮ দফা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করে। তবে কর্মসূচি চলাকালে উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। গাড়ি থামিয়ে গালমন্দ করে চালকের মুখে পোড়া মবিল মেখে দিয়েছে তারা। অনেকে আবার পরিবহন শ্রমিকদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে শিমরাইল মোড় পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় বিপাকে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী। শ্রমিকরা রাস্তায় সব ধরনের পরিবহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে।

এদিকে গতকাল সকাল থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। টার্মিনাল ও তার আশেপাশের সকল সড়কে সারিবদ্ধভাবে বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছিলো। শ্রমিকরা তখন বিভিন্ন সড়কে দলবেঁধে ধর্মঘট পালন করছিলেন। আর বাস টার্মিনালের বাসের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় শত শত যাত্রীকে। একই চিত্র দেখা গেছে, রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে। দিনভর সেখান থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

(জাস্ট নিউজ/একে/০০৩৬ঘ.)