পরিবহন আইন নিয়ে এতোদিন কোথায় ছিলেন নেতারা?

পরিবহন আইন নিয়ে এতোদিন কোথায় ছিলেন নেতারা?

ঢাকা, ২৯ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : কিছুদিন আগে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের কিছু ধারার প্রতিবাদে শ্রমিকরা দু'দিন ধরে ধর্মঘট পালন করছে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আলাপ আলোচনা ও নানা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে এই আইনটি অনুমোদন করা হয়েছে, যার সাথে যুক্ত ছিলেন পরিবহন শ্রমিক, মালিক ও সরকারি দলের নেতারাও। তাহলে তারা কেন এখন আপত্তি তুলছেন?

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী এই প্রশ্নের জবাবে বিবিসিকে বলেছেন, “নয় দিনে মোট ১৮টি বৈঠক হয়েছে, সেখানে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি জামিন অযোগ্য মামলা হবে না।”

“তারা বলেছিল, দুর্ঘটনার সর্বোচ্চ সাজা হবে তিন বছর। কিন্তু পরে তারা সেটাকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করেছে। আমরা সেটাও মেনে নিয়েছি। বলেছি, দুর্ঘটনা প্রমাণিত হলে পাঁচ বছরের সাজায় আপত্তি নেই। কিন্তু পরে তো তারা এটাকে জামিন-অযোগ্য করে দিল। এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়,” বলেন মি. আলী।

কিন্তু এই আইন পাস হওয়ার আগে এনিয়ে অনেক বৈঠক হয়েছে এবং এসব বৈঠকের বিবরণীতে এই শ্রমিক নেতারা স্বাক্ষরও করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ওসমান আলী বলেন, “স্বাক্ষর তো মিটিংয়ের আগে নিয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদও করেছি। মাননীয় মন্ত্রী (সড়ক ও সেতু বিষয়ক মন্ত্রী) তখন বলেছেন, আপনাদের কাছে এটা পাঠানো হয়েছে শুধু ফর্মালিটির জন্য। আপনারা ফর্মালিটি রক্ষা করে এটা পাঠিয়ে দেন। আমরা তাই করেছি।”

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান যেখানে সরকারের একজন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতা, এসব বৈঠকে তিনিও উপস্থিত ছিলেন, তাহলে তখন কেন এসব অভিযোগ তুললেন না?

বিবিসির এই প্রশ্নের জবাবে মি. আলী পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, “তিনি তো নৌ-পরিবহন মন্ত্রী, এটা কি তার দায়িত্ব?”

“২০১৪ সালে বিরোধীদের অবরোধের সময় শাজাহান খানকে লাগে সরকারের, আর এখন আপনি বলেন আপনার মন্ত্রীও তো ছিলেন,” বলেন মি. আলী।

সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনের দাবি তুলেছেন এই শ্রমিকরা।

এসব বাতিলের দাবিতে এত পরে তাদের আন্দোলন কেন- এ প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, “যখন মাথায় বাড়ি লাগে, তখনই তো আমি ডাক্তারের কাছে যাবো, তার আগে তো নয়।”

পরিবহন শ্রমিক নেতা মি. আলীর এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, আইন পাসের প্রক্রিয়ায় সবগুলো পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নেয়া হয়েছে।

তারা বলছেন, এই আইন প্রণয়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল আরো প্রায় এক বছর আগে থেকে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে গত সেপ্টেম্বর মাসে বিলটি সংসদে অনুমোদিত হয়।

শ্রমিক নেতারা এখন এসব অভিযোগ তুললেও, আইনটি নিয়ে আলোচনার সময় তাদের সম্মতি ছিল বলে বলছেন, জাতীয় পার্টির নেতা এবং সরকারের প্রতিমন্ত্রী ও পরিবহন মালিক নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গা, যিনি নিজেও সেসব আলোচনা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

মসিউর রহমান রাঙ্গা বলছেন, “যখন আইনটা তৈরি করা হয়, তখন সবাই ছিল। শাজাহান খান ছিলেন, যারা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন, তারাও ছিলেন। তারা তো তখন এসব বলেন নি।”

“এটা তাদের অন্যায় আবদার, এবং অন্যায় ভাবে তারা হরতাল করছে। আইন যখন তৈরি হয়, তখন দশ মাস ধরে তারা সরকারের সঙ্গে ছিলেন। পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি হিসাবে আমিও ছিলাম সেখানে। তখন তারা এই আইনের একটা বিষয় নিয়েও কথা বলেনি। এখন কেন বলছেন?” মসিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্ন।

শ্রমিকদের এসব দাবি দাওয়ার বিষয়ে সরকার আপাতত কিছু ভাবছে না বলে তিনি জানিয়েছেন।

এবিষয়ে শ্রমিক ফেডারেশন নেতা ও মন্ত্রী শাজাহান খানের সাথে যোগাযোগ করেও তার মন্তব্য পাওয়া যায় নি। ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর থেকে তাকে এনিয়ে কোন কথা বলতেও শোনা যায়নি।

সরকার-পন্থী পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলীও বলছেন, “ক্ষমতা ও পরিবহন খাতে নিয়ন্ত্রণ দেখাতেই এই ধর্মঘটের আয়োজন। এজন্য তারা অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন ফেডারেশনের শীর্ষ নেতাদের দিকে।”

তিনি বলছেন, “এই ধর্মঘটের সাথে আসলে সাধারণ শ্রমিকদের কোন সম্পর্ক নেই। তারা শুধুমাত্র ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এই ধর্মঘটের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এটা কোন দাবি আদায়ের ধর্মঘট নয়।”

সোমবার রাতে ধর্মঘট শেষ হওয়ার পরেও নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি ধর্মঘটী শ্রমিকরা। সূত্র: বিবিসি

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২০০১ঘ.)