‘গ্রেফতার না করার’ প্রতিশ্রুতি কি রাখছে সরকার?

‘গ্রেফতার না করার’ প্রতিশ্রুতি কি রাখছে সরকার?

ঢাকা, ৯ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : 'এখন থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না' - বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় জোট ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সাথে সংলাপের সময় সরকারের দিক থেকে এই প্রতিশ্রুতি এসেছিল। কিন্তু রাজশাহীর অভিজ্ঞতার পর এখন সেই জোটই অভিযোগ করছে যে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তাদের ৩০০ কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন - প্রতিশ্রুতি মানা হচ্ছে না।

রাজশাহীকে বিভাগীয় সমাবেশস্থলের অনুমতি দিতে বিলম্ব, উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাস যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া, এবং নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে বাধা সৃষ্টি করারও অভিযোগ করেছে ঐক্যফ্রন্ট।

রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে ওই সমাবেশে বিএনপি মহাসচিবসহ জোটের নেতৃবৃন্দ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবারও ঘোষণা দিয়েছেন।

সেই সঙ্গে তড়িঘড়ি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেও অভিযোগ করেছেন নেতৃবৃন্দ। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট অংশ নেবে কিনা সে ব্যপারে কিছু জানাননি নেতৃবৃন্দ।

রাজশাহীর ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ক এবং বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু বিবিসিকে বলেছেন, রাজশাহীর এই সমাবেশে নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের কোন লোক সমাবেশে অংশ নিতে পারছে না।

কারণ এখানে আসার জন্য প্রায় সাত আটশো বাস 'ব্যাক' করিয়ে দেয়া হয়েছে। আর বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত আমাদের তিন শো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।"

এর আগে পয়লা নভেম্বর ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বহুল আলোচিত সংলাপের পর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, এখন থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না, এবং বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দায়েরকৃত মামলার ব্যপারে ব্যবস্থা নেবে সরকার।

এরপর সাতই নভেম্বরের সংলাপে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির সরকারের কাছে গ্রেপ্তার নেতাকর্মীর একটি তালিকা হস্তান্তরও করেন।

সেই সংলাপ থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা, গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের সংবাদ সম্মেলনেও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুনরায় আশ্বাস দেয়া হয় বলে জানানো হয়।

কিন্তু দ্বিতীয় দফা সংলাপের দুইদিনের মধ্যে রাজশাহীতে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সে প্রতিশ্রুতি না রাখার অভিযোগ করছে এই জোট।

বিরোধীদের কর্মসূচীতে এ ধরণের বাধার ঘটনা দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক আস্থা সৃষ্টির ক্ষেত্রে অন্তরায় তৈরি করে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন “সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে একটা আশ্বাস দেয়া হলো এবং সংলাপের মাধ্যমে সবার মধ্যে একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল যে সমান সুযোগ দেয়া হবে সব দলকে। কিন্তু আশ্বাস দেবার পরও যদি ধরপাকড় চলতে থাকে, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা তৈরি হবার সুযোগ থাকে না।”

“এর ফলে ঘুরেফিরে সেই অভিযোগ আবারো সামনে চলে আসতে পারে যে সরকারী দল প্রকৃত অর্থে সবাইকে সমান সুযোগ দিচ্ছে না। বরং তারা একটা অধিকতর সুবিধাজনক জায়গা থেকে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে যাচ্ছে।”

এদিকে, রাজশাহী মহানগর পুলিশ দাবী করেছে, সমাবেশের জন্য কোন গ্রেপ্তার হয়নি, বরং যাদের বিরুদ্ধে আগে থেকে মামলা ছিল, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে সরকারও ঐক্যফ্রন্টের অভিযোগকে অসত্য বলে দাবী করছে। এ ধরণের অভিযোগের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে, বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

“সরকার বাধা দিলে তারা সিলেট, চট্টগ্রাম বা ঢাকায় সমাবেশ কিভাবে করলো? এইটা একটা গৎবাঁধা অভিযোগ করছে তারা। তারা তো চাচ্ছে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে।”

“তা না হলে ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যখন হয়, ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত তারা বলেছে, কারচুপির মাধ্যমে আমাদের হারিয়ে দিচ্ছে। অথচ দেখা গেল তারা জিতেছে। সুতরাং তারা এখন যেসব অভিযোগ করছে, সেগুলো সত্য নয়।”

এদিকে, ইতোমধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দুই দফা সংলাপ করেও নির্বাচন বিষয়ে কোন রাজনৈতিক মতৈক্যে পৌছুতে পারেনি সরকার।

যদিও সরকার ও নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নেবার আহ্বান জানিয়ে আসছে। সূত্র: বিবিসি

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২২৪৫ঘ.)