‘পোস্টার দেখলেই তো বোঝা যায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা কোথায়?’

‘পোস্টার দেখলেই তো বোঝা যায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা কোথায়?’

ঢাকা, ১২ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, এমন নির্বাচন হোক যেখানে হয়রানি-ভয়ভীতি থাকবে না। ২০০৮-এর মতো মানুষ ভোট দিতে পারবে। কারণ এর পরে আর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এত বছরের একটি রাজনৈতিক সংকট দুটি সেটিং বা সংলাপে সমাধান হবে- এটা আশা করা যায় না। এটা আশা করা অনেক বেশি হয়ে যাবে। তবুও বলা যায় যে, দেরিতে হলেও সরকারের তরফ থেকে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং পাশাপাশি যারা অংশ নিয়েছে উভয়কেই স্বাগত জানানো উচিত। কিন্তু তারপরও বেসিক কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। নির্বাচনটা কতটুকু ফেয়ার হবে এবং ভোটাররা কতটুকু স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারবে। প্রশ্নগুলো রয়ে গেছে এই কারণে যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে যেখানে সংসদ রেখে এবং ৩৫০ জন এমপি স্বপদে থেকে নির্বাচন করবেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমপিরা তৃণমূলে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেন। গত দশ বছরে পালাক্রমে একধরনের প্রভাব বলয় তারা সৃষ্টি করেছে। সেখানে এমপিরা অকার্যকর থাকবেন এটা ঠিক কথা নয়। সর্বোপরি আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূল থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন পর্যায় পর্যন্ত তাদের প্রভাবটা থেকে যাবে।

তিনি বলেন, যদি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভালো হয় এবং একইসঙ্গে ভোটারদের কাছে এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কাছে যদি গ্রহণযোগ্য হয় ও জেনারেল পারসেপশন যদি ভালো হয় তাহলেই এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। কারণ ২০১৪ সালের নির্বাচন ভালো হয়নি বলে পরবর্তী কোনো নির্বাচনই ভালো হয়নি। সব নির্বাচনে একই ধারাবাহিকতা দেখা গেছে। কেন্দ্র দখল, জালভোট সব ঘটনাই ঘটেছে। যেখানে নির্বাচন কমিশনকে অতটা কার্যকর দেখা যায় নি। কাজেই আসন্ন নির্বাচনটা ভালো হলে বাকি নির্বাচনও ভালো হবে।

তিনি বলেন, প্রথমত যেকোনো নির্বাচনে নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ সিকিউরিটি অব ম্যান অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস। যেহেতু ১ দিনে ৩শ’ আসনে নির্বাচনটা করা হয় এবং প্রতিবছর ভোটার এবং ভোটিং সেন্টার সব মিলিয়ে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে পাহারা দেয়ার জন্য যে পরিমাণ ফোর্স দরকার সেই ফোর্স কিন্তু কখনোই পাওয়া যায় না। তখন ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার হিসেবে সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়। সরকারের আওতায় যেহেতু আর কোনো রিজার্ভ ফোর্স নেই তাই এই সীমিত পরিসরে সেনাবাহিনীকে দিয়ে একদিনের নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। দ্বিতীয় কারণ পুলিশ বাহিনীসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা থাকার কথা থাকলেও প্রতিনিয়ত তারা বিশ্বাস যোগ্যতা হারাচ্ছে। কাজেই সেখানে সামরিক বাহিনীর ওপর মানুষের আস্থা রয়েছে। তাদের কেউ খুব একটা প্রভাবিত করতে পারে না। একইভাবে ম্যাজিস্ট্রেসি অর্ডারের বাইরে তাদের কোনো কার্যকারিতাও থাকে না।

সিভিল সোসাইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, সিভিল সোসাইটি বলতে আমরা স্বল্প পরিসরে বুঝি ১০ জন লোক টকশোতে কথা বললো তারাই সিভিল সোসাইটি। এমনটা নয়। এটা আইনজীবী থেকে শুরু করে প্রত্যেকেই যাদের কথাবার্তা ও চিন্তাধারা সমাজকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাবে। সমাজের মানুষের ভালোর জন্য, গণতন্ত্রের ভালোর জন্য সরকার বা তার প্রতিষ্ঠানকে চাপ প্রয়োগ করবে- সেটাই সিভিল সোসাইটি। বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি গড়ে ওঠেনি কখনো। এটা শুনতে যদিও খারাপ শোনা যাবে। বাংলাদেশে যেটা গড়ে উঠেছে সেটা হচ্ছে মোরাললেস চাটুকার সোসাইটি। এবং তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। আজকে কিছু সংখ্যক লোক আছে যারা নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। কাজেই হয়রানির মধ্যে থেকে সিভিল সোসাইটির মুভমেন্ট হয় না। বাকিরা তো চাটুকার টাইপের। তাদের ভাব অনেকটা এমন যে, আপনি সরদার আর আমি ঝাড়ুদার। ঝাড়ু দিয়ে সব পরিষ্কার করে দেবো। তারা খুব অল্পতেই তুষ্ট হয়ে যায়। এজন্য দোষারোপ করা যেতে পারে ১৯৭২ থেকে ‘৯১-এর পরিস্থিতিকে। বঙ্গবন্ধুর সময়েও সিভিল সোসাইটির বিষয় ততোটা গুরুত্ব পায় নি। সিভিল সোসাইটি বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। কারণ হালুয়া-রুটি তাদের সামনে চলে এসেছে। সহজভাবে যদি বলি বাংলাদেশে কোনো সিভিল সোসাইটি দেখি না। অথচ পৃথিবীর বহু দেশে ঐতিহাসিকভাবে সিভিল সোসাইটির কারণে অনেক বিপ্লব এসেছে।

অবাধ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমত হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। তারপর হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো সেই লক্ষ্যে কাজ করা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। পাশাপাশি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব কিন্তু সরকার এবং সরকারের ইনস্টিটিউশন ও সিভিল সোসাইটির। সেটা যদি না হয় তাহলে গত ৫ বছরের মারামারি-হানাহানি, গুম-খুন ৪০ দিনে ঠিক করা যাবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলা হচ্ছে অথচ সেটা আগেই তো ছিল না। এই ৪০ দিনে কি করে হবে? পোস্টার দেখলেই তো বোঝা যায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা কোথায়? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এখন যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, টাকার মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। যার টাকা আছে সেই নির্বাচন করে। অথচ দেখা যাবে রাজনীতি বিষয়টা কি সেটাই অনেকে জানে না।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০২৬ঘ.)