আরেকটি পাতানো নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে সরকার-ইসি: বিএনপি

আরেকটি পাতানো নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে সরকার-ইসি: বিএনপি

ঢাকা, ২১ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ): সরকার এবং নির্বাচন কমিশন আরেকটি পাতানো নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

রিজভী আহমেদ বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পুরো দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর ওপর অর্পণ করেছে হুদা কমিশন। প্রায় সাড়ে ৬ লাখ নির্বাচনী কর্মকর্তার অধিকাংশই আওয়ামী লীগের দলীয় লোকদের বাছাই করে তালিকা প্রস্তুত করছে পুলিশ। ইতিমধ্যে সারাদেশে ৪১ হাজার প্রিজাইডিং অফিসারের তালিকা পুলিশ প্রস্তুত করে ফেলেছে। এখন দুই লাখ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও চার লাখ পোলিং অফিসারের তালিকাও প্রস্তুত করার দায়িত্ব পুলিশই পালন করছে। পুলিশের প্রস্তুত করা তালিকা শুধুমাত্র চূড়ান্ত করার পথে তাবেদার বর্তমান নির্বাচন কমিশন। পুলিশ যে তালিকা প্রস্তুত করছে বা করেছে তার যথেষ্ট প্রমাণাদি রয়েছে আমাদের কাছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও অনলাইনে পুলিশ কর্তৃক নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুত করার খবর বড় করে প্রকাশিত হলে নখ-দন্তহীন কমিশন রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে। ক্ষেত্র বিশেষে অস্বীকারও করছে। দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, জনগণের ভোটারাধিকার আবার হরণ করার জন্য নতুন চক্রান্তে মেতেছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন।

রিজভী আহমেদ আরো বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুলনায় সম্ভাব্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তালিকা করেছে খুলনার হরিণটানা থানা পুলিশ। তালিকা প্রস্তুত করার আগে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সরকারবিরোধী কেউ থাকলে পুলিশের তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়া হয়েছে। সেই তালিকায় দেখা গেছে, চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭৪ জন শিক্ষকের নাম। এদের ভেতরে ৬৩ জন বা ৮৫ শতাংশই আওয়ামী লীগ সমর্থক। একইভাবে সারাদেশে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। পুলিশের প্রস্তুত করা তালিকা পরবর্তীতে গণমাধ্যমকে সরবরাহ করা হবে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে পুলিশ বেপরোয়া কর্মকান্ড করেছে। বিশেষ করে খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে পুলিশ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের পর রাজশাহী ও বরিশালে জঘন্য নির্বাচন করেছে এই কমিশন। পুলিশ নিজেরাই ব্যালটে সিল মেরেছে। পোলিং এজেন্ট ও সাংবাদিকদেরকে কেন্দ্রেই মারধর করা হয়েছে।

বরিশালেই বর্তমান কমিশনের তদন্তে ৫৭টি ভোট কেন্দ্রেই অনিয়ম হয়েছে বলে গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু বিগত বিতর্কিত ও অনিয়মে ভরপুর সিটি নির্বাচনগুলো তারা বাতিল করেনি। বরং ক্ষমতাসীনদের একের পর এক অনিয়ম করতে উৎসাহিত করেছে নির্বাচন কমিশন। সাংবিধান প্রদত্ত সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব পালনে তারা পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এখন বিরলতম প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে, যারা নিজেরা নিজেদের স্বাধীনতাকে অন্যের হাতে বিসর্জন দেয়।

তিনি আরো বলেন, ১৪ নভেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, ভাংচুর ও হেলমেটধারি এজেন্টদের দিয়ে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ও মিছিলের উপর পুলিশের গাড়ি তুলে দেয়ার পর ইলিয়ড বা অডিসি’র মতো কাল্পনিক মহাকাব্য রচনা করেছে পুলিশ। হেলমেট পরা হামলাকারিদের এখন বিএনপি’র নেতাকর্মী বলে চালানো হচ্ছে। হেলমেটধারিদের আমরা দেখেছি নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলন কর্মসূচিতে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ চালাতে। কিন্তু এখনও সেই হেলমেটধারিদের কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

রিজভী আহমেদ বলেন, রাজধানীর সূত্রাপুর থেকে যে ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলা হয়েছে আসলে তাদের ধরা হয়েছে আরো ৪ দিন আগে। একজনকে কুমিল্লা থেকে, একজনকে গাজীপুর থেকে, একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে মিরপুর থেকে, আর বাকীদের গ্রেফতার করা হয়েছে শাহজাহানপুর থেকে। আটককৃত ছয়জনকে ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হলেও পুলিশ বলছে এদেরকে সূত্রাপুর থেকে ধরা হয়েছে। গ্রেফতারের ৪দিন পরে তাদেরকে আদালতে তুলে পুলিশ কল্প কাহিনী তৈরি করে মিথ্যাচার করছে। টর্চার করে শেখানো বুলি বলতে বাধ্য করা পুলিশের স্বভাবধর্ম। পুলিশের কথা জনগণ বিশ্বাস করে না।

গ্রেফতারকৃত ছাত্রদল নেতারা ঢাকা মহানগর ১১ নং ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি এইচ এম হোসেন আলী, শাহজাহানপুর থানা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সোহাগ ভূঁইয়া, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য আব্বাস আলী, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রবিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন এবং তিতুমির কলেজ শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম। তাদেরকে এখন নাশকতা সৃষ্টিকারি বলে প্রচার দিচ্ছে সরকার। তাদেরকে তুলে নিয়ে গুম করে রেখে কয়েকদিন চালানো হয়েছে পাশবিক নির্যাতন। অত্যাচার চালিয়ে তাদের মুখ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য শারীরিক উৎপীড়ন করা হয় নির্দয়ভাবে। কয়েকদিনের অমানবিক নির্যাতনের পর তাদেরকে হাজির করা হয় আদালতে। ১৪ নভেম্বর নাশকতার ঘটনা ছিল পুলিশের পরিকল্পিত ছক। আগের দিন নির্বাচন কমিশন আইজি-কে নির্দেশ দিয়েছিল বিএনপি’র শোডাউন বন্ধ করার জন্য। সেই নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশ নাশকতার রোডম্যাপ তৈরি করে। তিন দিন ধরে চলা শান্তিপূর্ণ লোক জমায়েতে কোন হেলমেটধারিকে দেখেছে বলে কেউ বলেনি। হঠাৎ করে হেলমেটধারিরা আসলো কোথা থেকে? পুলিশ পেট্রল কারগুলো ফেলে সরে গেল কেন? পুলিশের অন্যান্য সাঁজোয়া যানের কোন ক্ষতি হলো না, অথচ পেট্রল কারে আগুন দিলো কে? এগুলোর সবকিছু পুলিশ জানে, উদ্ভুত ঘটনা পুলিশই সৃষ্টি করেছে। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে লাখ লাখ নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের গণভবনে ডেকে নিয়ে বিএনপি’র সমবেত জনতার ওপর হামলা ও নাশকতার ডিজাইন করা হয়।

তফশীল ঘোষণা পর্যন্ত বিরোধী দল দমনে সরকারের নিষ্ঠুরতা, তফশীল ঘোষণার পর সেটি আরো কঠোর আরো নির্মম রুপ লাভ করেছে। বিএনপি ও শরীক জোটকে দমন-পীড়নে ব্যতিব্যস্ত রেখে সরকার নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার আয়োজনাদি চালিয়ে যাচ্ছে।

রিজভী আহমেদ আরো বলেন, নির্বাচনী তফশীল ঘোষণার পূর্বে যেভাবে প্রশাসন সাজানো হয়েছিল তা সেইভাবেই অক্ষুণ্য আছে। আওয়ামী লীগের দলবাজ কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। এখন পর্যন্ত কোন এসপি, ডিসি, ইউএনও বা ওসিকে বদলি করেনি নির্বাচন কমিশন। বরং তফশীল ঘোষণার পর বদলি বা পদায়নে কমিশনের মতামত লাগবে, অথচ এখনও সরকারের চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসন পরিচালিত হচ্ছে। নির্বাচন উপলক্ষে সরকারের সাজানো পুলিশ বাহিনীতে যাতে কোন ধরণের পরিবর্তন বা বদলি করা না হয়, সেজন্য গত সোমবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে সরকারের অনুগত একদল পুলিশ কর্মকর্তা বৈঠক করে এসেছেন। অথচ সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনকে অগাধ ক্ষমতা দেয়া হলেও 'ঠুঁটো জগন্নাথ' কমিশন সেই ক্ষমতার প্রয়োগ না করে সংবিধান লংঘন করছে। সরকারকে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় আনার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে নির্বাচন কমিশন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৩৪২ঘ.)