সাজা ও দণ্ড স্থগিত হলে প্রার্থী নির্বাচন করতে পারবে : হাইকোর্ট

সাজা ও দণ্ড স্থগিত হলে প্রার্থী নির্বাচন করতে পারবে : হাইকোর্ট

ঢাকা, ২৯ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা কিংবা দণ্ড হাইকোর্টে স্থগিত হলে ওই ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এই আদেশের ফলে, এখন থেকে হাইকোর্টে কারো দণ্ড স্থগিত করার পর প্রার্থীর নির্বাচন করতে আর কোনো বাধা নেই।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের একক বেঞ্চ যশোর-২ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানার ছয় বছরের সাজা ও দণ্ড স্থগিত করে এ আদেশ দেন।

এই আদেশের ফলে সাবিরা সুলতানার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে কোনো আইনগত বাধা থাকলো না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম আমিনুল ইসলাম।

তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

গত ১২ জুলাই সম্পদের তথ্য গোপন মামলায় সাবিরা সুলতানাকে ৬ বছরের দণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করলে তা শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাইকোর্ট।

গত ৬ আগস্ট তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। এরপর সাবিরা সুলতানা তার সাজা ও দণ্ড স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের একক বেঞ্চ ওই আবেদনের শুনানি গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন নিয়মানুযায়ী আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। প্রধান বিচারপতি আবেদনটি শুনানির জন্য বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের বেঞ্চে পাঠান। পরে দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আজ এ আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ এক আদেশে বলেছেন, দুর্নীতির অভিযোগে কোনো ব্যক্তি দণ্ডিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি খালাস না হওয়া পর্যন্ত সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন করতে পারবেন না।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দিয়েছিলেন।

আর এ আদশের পর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘খালাস পেলেও খালাসের দিন থেকে পরবর্তী ৫ বছর নির্বাচন করতে পারবেন না।’

প্রসঙ্গত, দণ্ডিত ব্যক্তির নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে দুই দিনের ব্যবধানে হাইকোর্টের দুই বেঞ্চ থেকে দুই ধরণের রায় এলো।

এ ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছুদিন আগে হাইকোর্টে আদেশ হয়েছে, নির্বাচনের উদ্দেশ্যে কেউ দণ্ড বা সাজা স্থগিতের আবেদন করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তার কারণ হাইকোর্টের আজকের আদেশটি সংবিধানের পরিপন্থী। আজকে হাইকোর্টের একটি একক বেঞ্চ বলেছেন- সাজা বা দণ্ড স্থগিত হলে তারা নির্বাচন করতে পারবেন, তাহলে তো এটা আগের আরেকটি হাইকোর্ট বেঞ্চের বিপরীতধর্মী আদেশ হলো। তো এই আদেশের বিরুদ্ধে নিশ্চই আমরা আপিলে যাবো।’

এক কোর্ট বলছে সুযোগ নেই, আবার আরেকটি কোর্ট বলছে সুযোগ আছে সেক্ষেত্রে আদেশ দুটি সাংঘর্ষিক কি না জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘অবশ্যই। সেজন্যই আমরা আপিল বিভাগে যাবো।’

এ বিষয়টি আপিলে পূর্ণ নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেকোনো বিচারক তার মতামত প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু সবার উপরে আমাদের সংবিধান। আমাদের বিচারকরা বিচার করেন সাংবিধানিক বিধি মেনে নিয়ে। আমাদের সংবিধানের স্পষ্ট আছে দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত হলে এবং নৈতিক স্খলনজনিত কারণে এই সাজা হলে ওই ব্যক্তি নির্বাচন করতে পারবে না। আর ইতোমধ্যে তিনি যদি মুক্তি লাভও করে তবুও তাকে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। কাজেই এই আইনের পরিপন্থী যদি কোনো আদেশ হয়, তবে অবশ্যই আমরা বিষয়টি আপিল বিভাগের দৃষ্টিতে আনবো। আমার মতে বিষয়টি সংবিধানে স্পষ্ট করাই আছে।’

(জাস্ট নিউজ/একে/১৮০৪ঘ.)