সরকারের নির্দেশে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল

সরকারের নির্দেশে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল

ঢাকা, ২ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ফেনী-১ বগুড়া-৬ (সদর) ও ৭ আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ফেনিতে মনোনয়নপত্র বাতিল করেন জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদ-উজ জামান। দুপুরের পর বগুড়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইকালে বগুড়া-৬ (সদর) ও ৭ আসনেও তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়।

বগুড়ার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জমা দেয়া মনোনয়ন পত্র বাছাইয়ের প্রথম দিন রবিবার সকালে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মো. ওয়াহিদুজ্জামান সরকারের ইশারায় বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারান্তরীণ বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করেন।

রিটার্নিং অফিসার মো. ওয়াহিদুজ্জামান নিজেই বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে ফেনীতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে দুপুরে নয়াপল্টনে জরুরী সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। সংবাদ সম্মেলন তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াসহ দলটির অন্যান্য নেতাদের মনোনয়নপত্র বাতিল সরকারের দানবীয় আচরণ এবং এটি তাদের নিখুত মাস্টারপ্লানের অংশ।

রিজভী আহমেদ বলেন, নির্বাচন বানচালের জন্য সরকার দেশব্যাপী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতার মৌতাতে বুঁদ হয়ে থাকার জন্যই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মাস্টারপ্ল্যানে ব্যস্ত আছে। তফসিল ঘোষণার শুরু থেকেই নির্বাচনের পরিবেশ যেন আরো অবনতিশীল হয়েছে। নৌকার পক্ষে হালে পানি না পাওয়ায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের শুধুমাত্র মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করেই সরকারের সাধ মিটছে না এখন তাদের ভিটে-মাটিতে ঘু ঘু চরিয়ে দিতে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। সারাদেশে প্রার্থীসহ বেছে বেছে বিএনপির সক্রিয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে। প্রার্থীসহ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। আর এসব কিছু নেপথ্য থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে দুটি শক্তিশালী কেন্দ্র-একটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অন্যটি গণভবন।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন হুকুম-বরদার মাত্র। কমিশন শুধু ঐ দুই কেন্দ্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। দেশে বিরোধী দল শূন্য নির্বাচনী মাঠ তৈরি করতেই এসব ঘৃন্য অপকর্ম সাধন করা হচ্ছে। যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে, গুম করছে, গ্রেফতারের পর অস্বীকার করছে, রিমান্ডে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে এবং জামিনে মুক্তিলাভের পরও জেলগেট থেকে শ্যোন অ্যারেস্ট করা হচ্ছে তাতে সারাদেশে এক রক্ত-শীতল করা আতঙ্কজনক পরিবেশ বিরাজমান হয়েছে। জনগণকে ভোট থেকে দূরে রাখার জন্য তারা পরিকল্পিতভাবে ভোটের পরিবেশ বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সরকারি দলের অনাচারের সাথে তাল মিলিয়ে চলার ঘটনা থেকেই মনে হয়-তারা ভোটারদের ভীতিগ্রস্ত করতে চায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনের সময় এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কখনো দেখা যায়নি। সুপরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবেই এসব করা হচ্ছে নৌকাকে জালিয়াতির মাধ্যমে বিজয়ী করার জন্য।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তার মনোনায়ন বাতিলের প্রতিবাদ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি, বিচার বিভাগের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ এবং ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনসহ বিরোধী দলের সকল নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে কলো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন আইনজীবীরা।

রবিবার সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে জাতীয় যুব আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে শতাধিক আইনজীবী কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ ও মানবন্ধন করেন।

যুব আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য আইনজীবী আবদুস সাত্তারের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন আইনজীবী আবেদ রাজা, মনির হোসেন, এবিএম রফিকুল হক তালুকদার রাজা, ওয়াসিলুর রহমান বাবু, আরিফা জেসমিন নাহিন, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, আনিছুর রহমান খান, আল মাহমুদ, কামাল হোসেন প্রমুখ।

উল্লেখ্য, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারান্তরীণ। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালতের রায় স্থগিত, সাজা ভোগ বাতিল ও জামিন চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৫২৯ঘ.)